অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

৭০ বছর পর মাকে ফিরে পেলেন কুদ্দুস 


মায়ের সঙ্গে আবদুল কুদ্দুস
মায়ের সঙ্গে আবদুল কুদ্দুস

দীর্ঘ ৭০ বছর পর মাকে ফিরে পেলেন আবদুল কুদ্দুস। কুদ্দুসের বয়স এখন ৮০, তার মায়ের বয়স ১১০। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বাড্ডা গ্রামে। ১০ বছর বয়সে কুদ্দুস পড়ালেখা করতে গিয়েছিলেন নওগাঁতে ফুপুর বাসায়। ফুপা ছিলেন আত্রাই থানার দারোগা।

একদিন ফুপু বকা দিলে বাসা ছেড়ে চলে যান কুদ্দুস। পরে পথ হারিয়ে তিনি ঘুরতে থাকেন। তার ঠাঁই হয় রাজশাহীতে। কুদ্দুস চিরতরে হারিয়ে যান পরিবার থেকে। তার নতুন ঠিকানা হয় আত্রাই উপজেলার সিংশাইর গ্রামে। এই গ্রামের সাদেক মিয়ার বাড়িতে ঠাঁই পান কুদ্দুস। সাদেক মিয়ার স্ত্রী তাকে সন্তানের স্নেহে লালন-পালন শুরু করেন।

কুদ্দুস চিরতরে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তার মা মঙ্গলের নেসার কাছ থেকে। আত্রাইয়ে শুরু হয় কুদ্দুসের নতুন পরিচয়। ৩০ বছর বয়সে বিয়ে করেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায়। তারপর থাকতে শুরু করেন শ্বশুরবাড়িতে। এখানে তার তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। সবার বিয়ে হয়েছে। এক ছেলে থাকে ইরাকে, আরেক ছেলে সৌদি আরবে। চাষাবাদের আয় দিয়ে ভালোই চলছিল জীবন।

কিন্তু মাঝে মাঝে মনে পড়ত মা মঙ্গলের নেসার কথা। কিন্তু ভাবতে পারতেন না, মা জীবিত আছেন নাকি মৃত! মনের ভিতরে ক্ষীণ আশা ছিল হয়তো মা বেঁচে আছেন। মায়েরও বিশ্বাস ছিল পুত্র একদিন ফিরে আসবে। কিছুদিন আগে তার কথাগুলো শেয়ার করেন আত্রাইয়ের বাসিন্দা এম কে আইয়ুবের সঙ্গে। আইয়ুব ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করে জানান তার মায়ের কাছে যেতে সহায়তা করুন।

ফেসবুকে এই লেখনী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলার নবীনগর থানার বাড্ডা গ্রামে শফিকুল ইসলামের নজরে আসে। শফিকুল আরও কয়েকজনকে নিয়ে চলে যান রাজশাহীর বাগমারায়। ভিডিওকলে কথা বলিয়ে দেন কুদ্দুসের মা মঙ্গলের নেসার সঙ্গে। হারিয়ে যাওয়ার সময় তার ছেলের হাতে কাটা দাগ ছিল। সেই কাটা দাগ মিলিয়ে দেখেন শফিকুল। অন্যদিকে মা মঙ্গলের নেসা শনাক্ত করেন পুত্রকে। অবশেষে কুদ্দুস মুন্সী তার পুত্র, পুত্রবধূ আর তার নাতবৌ ও শ্যালককে নিয়ে আসেন মায়ের সঙ্গে দেখা করতে।

কুদ্দুসের মা এখন থাকেন বাঞ্ছারামপুর উপজেলার আশ্রাফাবাদ গ্রামে মেয়ে ঝর্ণার বাড়িতে। সেখানেই দেখা হয় মা পুত্রের। ছেলেকে পেয়ে মা বললেন, আমি জানতাম তুই আসবি একদিন। হয়তো এতদিন বেঁচে আছি তোকে দেখার জন্য। কুদ্দুস মুন্সী বলেন, আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। মায়ের বুকে আবার ফিরে এসেছি। দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ আমি এখন। বাকি জীবন মায়ের সঙ্গে কাটাতে চাই।

XS
SM
MD
LG