মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে নির্মীয়মান সীমান্ত দেয়ালের অগ্রগতি দেখতে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার এ্যারিজোনা সফর করেন। সেখানে দেয়া এক বক্তব্যে তিনি অভিবাসন সংক্রান্ত তাঁর নেয়া কর্মসূচী সম্পর্কে কথা বলেন।
সোমবার ট্রাম্প প্রশাসন বলেছেন কোভিড-১৯ এর এই সময়ে নানা সীমাবদ্ধতা ও লকডাউনের কারনে যুক্তরাস্ট্রের অর্থনীতিতে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং আমেরিকানরা যে মাত্রায় বেকার হয়ে পড়েছেন; তা সামাল দেয়ার জন্যে বিদেশীদের কর্ম ভিসা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সাময়িক ভিসা বন্ধের এই সিদ্ধান্তের মধ্যে আছে কিছু গেস্ট-ওয়ার্কার প্রোগ্রাম। রয়েছে এইচ-১বি কর্মসূচী, যার আওতায় কিছু বিশেষায়িত খাত, যেমন প্রযুক্তি খাতে দক্ষ কর্মী সাময়িক কাজের জন্য বিদেশ থেকে যুক্তরাস্ট্রে আনার অনুমতি দেয়া হতো।
মঙ্গলবার তিনি সফর করেন এ্যারিজোনার ইউমা কাউন্টির দেয়াল নির্মাণ সাইট। সেখানে ৩২২ কালোমিটার দেয়াল নির্মান কাজ দেখার পর বলেন, “এটি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে মজবুত দেয়াল। আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি হচ্ছে এটি। সেন্সর এবং ক্যামেরা যুক্ত করা হচ্ছে এই দেয়ালে”।
এ বছর শেষ নাগাদ ৭২৫ কিলোমিটার দেয়ালের কাজ শেষ হবে বলে বলা হচ্ছে। কাস্টম এ্যান্ড বর্ডার পেট্রোল কর্তৃপক্ষ বলছে কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
সোমবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে ঘোষণা দিয়েছেন তাতে এইচ-১বি ও এইচ-২বি কর্মসূচীতে অকৃষি খাতে যে মৌসুমী কর্মী আনা হতো তা বন্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া রয়েছে সংস্কৃতি বিনিময়ের ভিসা জে-১ এবং শর্ট-টার্ম ওয়ার্কার বা ক্ষুদ্র-সময়ের জন্যে কর্মী আনার ভিসা, এইচ-১বি এবং এইচ-২বি ভিসা ধারীদের স্ত্রীর জন্যে ভিসা এবং যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বিদেশী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্যে কর্মী আনার ভিসা।
সাময়িক ভিসা বন্ধের এই ঘোষণা নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা এ প্রশ্নে নিউইয়র্কে বাংলাদেশী অভিবাসন পরামর্শদাতা মাইনুদ্দিন নাসের বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এটি মূলত নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরনের একটি অংশ মাত্র।
এ্যামেরিকান এন্টারপ্রা্ইজ ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক জেমস পেথককিসের মতে, “এইচ-১বিতে যাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রে কাজের জন্যে আনা হতো, সে রকম দক্ষ কর্মী এখানে পাওয়া কঠিন হবে। বলা হচ্ছে প্রযুক্তি কর্মীরা সবাই সব কাজ করতে পারে, কিন্তু বিষয়টি তেমন নয়; এক একজনের দক্ষতা এক এক কাজে এক এক রকম। এই বিশেশায়িত খাতে, যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, তা বিশেষ শিক্ষা ও দক্ষতা না থাকলে সম্ভব নয়”।
প্রেসিডেন্টের ওই আদেশে হাজার হাজার বিদেশী কর্মীর ওপর প্রভাব ফেলবে। অভিবাসন আইনজীবি হাসান আহমদের মতে, “জে ভিসায় থাকা কর্মী, বিদেশী শিক্ষার্থী, স্কলার ও গবেষক এমনকি বিদেশী চিকিৎসকরাও এতে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। ব্যবসা সংক্রান্ত এল ভিসায় বিশেষ দক্ষ লোকজন আনা হতো, তাও ক্ষতিগ্রস্থ হবে”।
গত শনিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওকলাহোমার টালসায় নির্বাচনী সমাবেশ করেন। তাতে আশানুরূপ মানুষের উপস্থিতি ছিল না। আর এ্যারিজোনা সফরের মাধ্যমে তিনি হয়তো ভোটারদেরকে তাঁর অভিবাসন সংস্কার করার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দেয়ার একটি চেষ্টা হতে পারে বলে আনেকেই মন্তব্য করেন।
জেমস পেথকিকস বলেন, “এটি হতে পারে রাজনৈতিক একটি প্রচারণার অংশ, যার মাধ্যমে বোঝানো হচ্ছে যুক্তরাস্ট্রের অভিবাসন আইন ঠিক নয়। রিপাবলিকানদের মনোবল বৃদ্ধির একটি উপায়”।
এ্যারিজোনা সফরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বা্চনী প্রচারণার বক্তব্য দেয়ার মতো করেই কথা বলেন, “বামপন্থীরা আমাদের ইতিহাসকে পরিহাস কর। এ্যামেরিকান হিসাবে তারা আমাদের মূল্যবোধকে অবমূল্যায়ন করে। হতে পারে। কারন আমাদের দেশের উন্নয়নে তাদের কোনো অবদান নেই”।
ঐতিহ্যগতভাবে রিপাব্লিকান নিয়ন্ত্রিত এ্যারিজোনা, নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে বলে বিশেষকদের ধারনা।