তালিবানের দুই দশকের দীর্ঘ বিদ্রোহের সময়, তারা গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, নির্বাচনকে অনৈসলামিক বলে বর্ণনা করেছিল। প্রায়ই আফগানিস্তানে নির্বাচনী কর্মী ও সমাবেশে তারা হামলা করেছিল।
কিন্তু তালিবানের একজন শীর্ষ মুখপাত্র এখন বলছেন, ইসলামিক আইন বা শরিয়াহ ভিত্তিক একটি স্থায়ী সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য দলটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা নাকচ করে দিচ্ছে না ।
ভিওএ’র উর্দু বিভাগকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কাতারের দোহায় তালিবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের শীর্ষ মুখপাত্র সুহাইল শাহীন বলেন, বিষয়টি ভবিষ্যতের সংবিধান অনুযায়ী নির্ধারিত হবে।
শাহীন বলেন, "নির্বাচন হবে কি হবে না সে সম্পর্কে জানতে অপেক্ষা করতে হবে।ভবিষ্যতে আমাদের একটি সংবিধান [পরিকল্পিত] আছে, তাই ভবিষ্যতে, আমরা যখন সংবিধানের খসড়া প্রণয়ন করবো তখন এ বিষয়ে বিবেচনা করে দেখবো এখন নয়।"
সম্প্রতি ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে নির্বাচনের যে আহ্বান জানিয়েছেন সে সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে শাহীন এই মন্তব্য করেন।
দেশটিতে অনেক জাতিগোষ্ঠীগত সংখ্যালঘু এবং তালিবানবিরোধী গোষ্ঠীর জন্য নির্বাচন পরিচালনা একটি বিশাল উদ্বেগের বিষয়।
মঙ্গলবার কাবুলে এক সংবাদ সম্মেলনে তালিবানের নতুন অন্তর্বর্তীকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুতাকি নির্বাচন সম্পর্কিত একটি প্রশ্ন এড়িয়ে যান, বলেন, বিদেশি দেশগুলোর আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।
১৫ই আগস্ট তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর তালিবান বাহিনী ক্ষমতা দখল করে। এর ফলে গনি সরকারের পতন ঘটে। এক লক্ষের ও বেশি আফগান নাগরিককে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়।
গত সপ্তাহে, নতুন করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত তালিবান একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ঘোষণা করে যা মূলত কট্টরপন্থীদের সমন্বয়ে গঠিত। মোহাম্মদ হাসান আখুন্দকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তারা মনোনীত করে। আখুন্দ এবং তালিবান সরকারের বেশ কয়েকজনই জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় রয়েছেন।
গত ২০ বছর ধরে দেশের নবজাত গণতন্ত্রের অধীনে সংসদে বা সরকারের বিভিন্ন শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠির লোকেরা এবং নারীরা। বর্তমান সরকারে তাদের অনুপস্থিতি বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
কিন্তু তালিবান জোর দিয়ে বলেছে যে এই নিয়োগগুলি স্থায়ী নয়। মন্ত্রীর পদে না হলেও নারীদের চাকরি করার অনুমতি দেওয়া হবে।
শাহীন বলেন, "দেশের অর্থনীতি সচল করার জন্য এবং জনগণকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের জন্য আমাদের নেতৃত্ব কিছু মন্ত্রী নিয়োগ করেছে।কিন্তু এই মন্ত্রিপরিষদকে একটি অস্থায়ী মন্ত্রিপরিষদ বলা হয়, পূর্ণ বা স্থায়ী মন্ত্রিপরিষদ নয়।"
যদিও ২০০৪ সালের আফগানিস্তানের সংবিধানে বলা হয়েছে কোন আইন শরিয়তের পরিপন্থী হবে না, তালিবান বলেছে যে ইসলামী আইনের সাথে মিল রেখে তারা সনদটিকে নতুন করে লিখতে বা সংশোধন করতে চায়।
তালিবান শেষবার আফগানিস্তান শাসন করার সময়ে ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত কোনো নির্বাচন করেনি।