পিটিএসডি অথবা পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার রোগটি মোকাবিলা করার জন্য সামরিক বাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণরা, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে একাধারে যেমন একটি উপায় খুঁজে পেয়েছেন, অন্যদিকে আবার সেটি গৃহহীনদেরও সহায়তা করছে। এ বিষয়ে ভিওএর সংবাদদাতা এঞ্জেলিনা বাগদাসারিয়ণ তার এক প্রতিবেদনে জানাচ্ছেন যে, সামরিক বাহিনীতে কর্মরত থাকাকালীন ইরাক ও আফগানিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্র গুলিতে অনেক বার সফর করে অবশেষে অবসর নিয়ে দেশে ফেরেন নেভিতে কর্মরত প্রবীণ ম্যাক্সওয়েল মুর।
ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেসে দেশে ফিরে আসার পরে, স্থানীয় ভেটেরান্সদের প্রশাসন তাকে তার পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার, বা পিটিএসডি মোকাবেলায় সহায়তা করার জন্য তিনি যে কাজ করতে ভালবাসেন অথবা তার কোন বিশেষ শখ আছে কিনা তা জানতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর এই চিকিৎসার থেরাপি অবশেষে একটি ব্যবসায় পরিণত হয়েছিল।মিঃ মুর জৈব খাদ্য-সামগ্রী যেমন নারকেল কুচো, প্রয়োজনীয় তেলগুলি দিয়ে মিশ্রণ করেন এবং কোন সুগন্ধি ব্যবহার না করে, গ্লিসারিন বেস ব্যবহার করে সাবানের মিশ্রণটি তৈরি করেন। তিনি এখন কেবলমাত্র প্রাকৃতিক, জৈব উপাদান থেকে সাবান তৈরি করে অনেক আনন্দ পাচ্ছেন। তবে ১৬ বছরের সামরিক চাকরির পরে মুরের পক্ষে লস অ্যাঞ্জেলেসে ফিরে বেসামরিক জীবন অর্থাৎ সাধারণ নাগরিকের মত জীবন যাপন করা অত সহজ ছিল না। তিনি সামরিক বাহিনীতে কর্মরত থাকাকালীন যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক ও আফগানিস্তানে ভ্রমণ সহ সামরিক পরিষেবাও করেছিলেন এবং এর পরে তাকে পিটিএসডি-রোগে ভুগতে হয়েছিল।
সামরিক বাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত এবং ম্যাক্সওয়েলের সাবান সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা ম্যাক্সওয়েল মুর বলেন যে, তিনি ফিরে এলে তাকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যে, তার হাতকে এমন কিছু কাজে নিযুক্ত করা উচিত যাতে তিনি ব্যস্ত থাকবেন এবং তার হাতেরও চিকিৎসা হবে। এরপর তিনি তাদের জানিয়েছিলেন যে, তিনি সাবান বানাতে ভালবাসেন এবং এই কাজ শুরু করেছিলেন। এরপর তিনি এই কাজে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েন এবং উনার এই শখ সাবান তৈরি এবং তার সাথে সাথে এর বিক্রিও অনেক বেড়ে যায়।
ম্যাক্সওয়েল মুর বলেন, “যখন আমি ভার্জিনিয়াতে এক্টি কাজের জন্য গিয়েছিলাম, তখন একজন গৃহহীন মানুষ আমার কাছে এসে বলে,‘ আপনি কি আমাকে কিছু অর্থসাহায্য করতে পারেন? এবং আমি বলেছিলাম আমার কাছে অর্থ নেই, তবে আমার একটা শখ আছে, আমি সাবান তৈরি করি - আপনি কি কিছু সাবান চান? 'এবং তখন লোকটি বলে যে-"হ্যাঁ, আমি কিছু সাবান চাই!"এরপর মুর গৃহহীনদের জন্য তার কিছু সাবান বিনামূল্যে দিতে শুরু করেন।তিনি বলেন, "আমাকে ভুল বুঝবেন না, আমি নিজেও অর্থ ভালবাসি। তবে আপনি যদি অর্থোপার্জন করেন এবং আপনার চারপাশে এমন সমস্ত মানুষের সাথে থাকেন যারা দরিদ্র, অসুস্থ, যারা নিজের যত্ন নিতে পারেন না - তবে আপনি নিজেও অসুস্থ হয়ে পড়বেন, এবং তখন পৃথিবীর সমস্ত অর্থই আপনার কাছে অর্থহীন মনে হবে”।
মিঃ মুর অন্যান্য সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মানুষদের তার এই সংস্থাতে কর্মে নিয়োগ করছেন, এবং যে সব মহিলারা একা একা নিজেদের সন্তানদের বড় করে তুলছেন, তার এই সাবান সংস্থাতে চাকরি দিয়ে তাদেরকেও অর্থনৈতিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে যথেষ্ট সহায়তা করছেন। তিনি আরও বলেন, “আমি যুদ্ধে আমার সহযোদ্ধাদের সেবা এবং ত্যাগ দ্বারা সত্যই অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। আমি অনুভব করেছি যে এই সব মানুষ সবাই মারা গেছেন এবং দুর্ভাগ্যবশতঃ তারা আর কোনদিনই ঘরে ফিরে সাধারণ মানুষের উপর তাদের কাজের কোন প্রভাব ফেলতে পারবেন না, কিন্তু আমার মনে হয় আমি যেন তাদের কাছে ঋণী, তাই তাদের জন্য কিছু করতে চাই”।
লস অ্যাঞ্জেলেস রাজ্যের গৃহহীন মানুষ স্ট্যানলি, যিনি মহামারীর সময়ে মুরের কাছ থেকে একটি সাবান পেয়েছিলেন, অত্যন্ত কৃতজ্ঞ বোধ করেন, তিনি বলেন, "আমার কাছে কোনও স্যানিটাইজার নেই, আমার হাত শুকিয়ে যায় এবং জ্বালা করতে থাকে, তবে আমি যতটা পারি সবসময় এই সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে আমার হাত পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করছি।"
মিঃ মুর খুব ভালভাবেই জানেন যে, লস অ্যাঞ্জেলেসে গৃহহীনদের সমস্যাটি সমাধান করা সহজ নয়, তবে তিনি ছোট কোন কাজ দিয়ে শুরু করতে ভালবাসেন, মানুষকে পরিষ্কার ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করেন এবং বিশ্বাস করেন যে এইভাবে এগিয়ে গেলে ভবিষ্যতে সাফল্য অবশ্যই আসবে।