অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ডনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় বার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে যাত্রা শুরু করতে প্রস্তুত


প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডলান্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটনে এক বিজয় র‍্যালিতে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছেন। ফটোঃ ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫।
প্রেসিডেন্ট-নির্বাচিত ডলান্ড ট্রাম্প ওয়াশিংটনে এক বিজয় র‍্যালিতে সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিচ্ছেন। ফটোঃ ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫।

আমেরিকান গণতন্ত্রের প্রায় ২৫০ বছরের ইতিহাসের নির্দেশক ছাপ হচ্ছে প্রতি চার বছর শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর, এবং সোমবার (২০ জানুয়ারী) তার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। ডনাল্ড ট্রাম্প, ২০২০ সালের নির্বাচনে পরাজিত হবার আগে পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট, গত নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হবার পর এখন দেশের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিবেন।

লক্ষ লক্ষ আমেরিকান টেলিভিশনে ৭৮-বছর বয়সী ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউসে নতুন চার বছর মেয়াদের জন্য শপথ নিতে দেখবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট ৮২-বছর বয়সী জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে এক মেয়াদ পরেই বিদায় নিচ্ছেন।

কিন্তু, ট্রাম্পের অনুরোধে অভিষেক অনুষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্র ক্যাপিটল ভবনের ভেতরে নেয়ার ফলে মাত্র ৬০০ মত মানুষ সরাসরি ট্রাম্পকে শপথ নিতে দেখবেন। রবিবার রাতে আর্ক্টিক অঞ্চল থেকে হিমশীতল হাওয়া ওয়াশিংটনের উপর দিয়ে বয়ে যাবে, যার ফলে তাপমাত্রা সোমবার দুপুরের মধ্যে সেন্টিগ্রেড মাইনাস ৬-এ নেমে যাবে।

ঐতিহ্য অনুযায়ী ঐ সময়ই ন্যাশনাল মল প্রাঙ্গণের সামনে ক্যাপিটল ভবনের সিঁড়িতে খোলা আকাশের নিচে শপথ-পাঠ অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।

ধারণা করা হচ্ছে, ১৯৮৫ সালে রনাল্ড রেগানের দ্বিতীয় অভিষেক ভবনের ভেতরে স্থানান্তর করার পর এবারের অভিষেক দিবস হবে ওয়াশিংটনে সব চেয়ে ঠাণ্ডা।

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অভিষেক অনুষ্ঠান ক্যাপিটল ভবনের ভেতরে নেয়া হয়েছে। ফটোঃ ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে অভিষেক অনুষ্ঠান ক্যাপিটল ভবনের ভেতরে নেয়া হয়েছে। ফটোঃ ১৯ জানুয়ারি, ২০২৫।

ঐতিহ্যবাহী প্যারেড বাতিল

ক্যাপিটল ভবনের সিঁড়িতে অনুষ্ঠানের জন্য প্রায় ২৫০,০০০ টিকেট ট্রাম্পের সমর্থক এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বিতরণ করা হয়েছিল। কিন্তু অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজকরা এখন বলছেন তারা সেগুলো স্মারক হিসেবে রেখে দিতে পারেন।

আবহাওয়ার কারণে পেনসিলভানিয়া অ্যাভিনিউ দিয়ে ক্যাপিটল থেকে হোয়াইট হাউস পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী প্যারেড বা পদযাত্রাও বাতিল করা হয়েছে। এখন বিভিন্ন ব্যান্ড পার্টি, মার্চিং দল ইত্যাদি ২০,০০০ আসন বিশিষ্ট ক্যাপিটল অ্যারেনায় ট্রাম্প, তাঁর স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্প এবং তাঁর নতুন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সামনে দিয়ে প্যারেড করে যাবে। এর ফলে হাজার হাজার সমর্থক বাইরে পড়ে যাবে।

ট্রাম্পের ক্ষমতায় দ্বিতীয়বার আরোহণের সাথে ঐতিহাসিক ফুটনোট থাকবেঃ তিনি প্রথম ব্যক্তি যিনি ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হবার পর প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। তিনি পর্ন তারকা স্টরমি ড্যানিয়েলসের সাথে তাঁর সম্পর্ক গোপন রাখার জন্য ড্যানিয়েলসকে ১৩০,০০০ ডলার দেয়ার জন্য তাঁর ব্যবসায়িক দলিলপত্র জাল করেছিলেন বলে ৩৪টি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। তবে বিচারক তাঁকে কোন দণ্ডে দণ্ডিত করেননি।

রিপাবলিকান দলের প্রার্থী ট্রাম্প ২০২০ সালের নির্বাচনে বাইডেনের বিপক্ষে তাঁর পরাজয় বেআইনিভাবে বানচাল করার চেষ্টা করেছিলেন বলেন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসকে পরাজিত করার পর চার্জ প্রত্যাহার করা হয়, কারণ জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট-এর দীর্ঘদিনের নীতি অনুযায়ী তারা ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করে না।

ট্রাম্প ১৮৯০-এর দশকে গ্রোভার ক্লিভক্যান্ড-এর পর দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট যিনি প্রথম মেয়াদ শেষ হবার চার বছর পর দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হলেন।

মেক্সিকোর সাথে সীমান্তে টেক্সাসের ঈগল পাস-এ কন্টেইনার দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। ফাইল ফটো।
মেক্সিকোর সাথে সীমান্তে টেক্সাসের ঈগল পাস-এ কন্টেইনার দিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। ফাইল ফটো।

প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন

যুক্তরাষ্ট্রের অভিষেক অনুষ্ঠানের জাঁকজমকপূর্ণ আনুষ্ঠানিকতার বাইরে, ট্রাম্পের রিপাবলিকান সমর্থক-সহকর্মী এবং বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা নিবিড়ভাবে দেখবেন তিনি কী ধরনের নীতি দ্রুত ঘোষণা করবেন। তিনি বাইডেনের আদেশ পাল্টানোর জন্য বা হ্যারিসের বিরুদ্ধে তাঁর বিজয় অভিযানে ঘোষিত লক্ষ্য এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কী ধরনের নির্বাহী আদেশ জারী করতে পারেন।

ট্রাম্পের প্রথম দিনের প্রতিশ্রুতি অনেক ব্যাপক। কিন্তু তিনি সকল বিষয় একসাথে করে আদেশ সাক্ষর করবেন, নাকি কিছু কিছু বিষয় আগামী কয়েক দিনের জন্য রেখে দেবেন, তা পরিষ্কার না।

নির্বাচনী প্রচারণার সময় যে বিষয়ের উপর তিনি বার বার জোড় দিয়েছেন তা হলো, যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বৈধ কাগজপত্রহীন এক কোটি ১০ লক্ষ অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা। যেসব অভিবাসী কোন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যাওয়ার আবেদনে ব্যর্থ হওয়ার পর যাদের নিজ দেশে ফেরত যেতে বলা হয়েছে, তাদেরকে প্রথমে বহিষ্কার করা হবে।

কিন্তু অভিবাসন দমন প্রক্রিয়া মঙ্গলবার শিকাগো শহরে শুরু হবে বলে একটি কথিত ট্রাম্প পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াতে ফাঁস হয়ে গেলে, ট্রাম্পের নিযুক্ত “সীমান্ত রাজা” টম হোম্যান বলেন যে ফেরত পাঠানোর সময়সূচী এখন পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

‘আমরা এই তথ্য ফাঁস হওয়ার বিষয়টি দেখছি এবং এর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে,” হোম্যান দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকাকে বলেন। “এটা খুবই দুঃখজনক, কারণ আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম কেউ ফাঁস করলে সেটা কর্মকর্তাদের ঝুঁকির মুখে ফেলে।”

অভিবাসন-বিরোধী পরিকল্পনা

তারপরও, হোম্যান বলছেন ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোরস্মেন্ট এজেন্সি “প্রথম দিন থেকেই জাতীয় নিরাপত্তা এবং জন নিরাপত্তার প্রতি যারা হুমকি তাদের গ্রেফতার শুরু করবে। আমরা সারা দেশজুড়ে লোকজন গ্রেফতার করবো, এবং বাইডেন প্রশাসনের কোন বিধিনিষেধ নিয়ে চিন্তা করবো মা। নির্দিষ্টভাবে শিকাগো কেন উল্লেখ করা হয়েছিল, তা আমি জানি না।”

“এটা দেশব্যাপী চলবে,” তিনি বলেন। “আমারা পাড়া-মহল্লায় হানা দেব না। আমাদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুসহ প্রয়োগ করার পরিকল্পনা আছে।”

ট্রাম্প দক্ষিণপশ্চিম যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মেক্সিকোর সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন এবং রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে থাকার আবেদন বিবেচনার সময় তাদের মেক্সিকোতে থাকতে বাধ্য করবেন।

তাঁর সকল কঠোর অভিবাসন-বিরোধী পরিকল্পনার বিরুদ্ধে অভিবাসীদের সমর্থকরা আইনগত চ্যালেঞ্জ করবে, তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। এর ফলে, ট্রাম্পের পদক্ষেপগুলো সম্ভবত লম্বা সময় ধরে ঝুলে থাকবে।

ট্রাম্প বলেছেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম-সূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার বাতিল করতে চান, যদিও সেটা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের অংশ। কাজেই তিনি একতরফা এই কাজ কীভাবে করবেন তা পরিষ্কার নয়।

ট্রাম্প কানাডা, চীন এবং মেক্সিকোর মত বাণিজ্য অংশীদারদের উপর দ্রুত বাড়তি শুল্ক আরোপ করার অঙ্গীকার করেছেন।

ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু

পরবর্তী প্রেসিডেন্ট বলেছেন তিনি ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবন হামলায় জড়িত ১,৫০০ সমর্থকের অনেককে ক্ষমা প্রদর্শন করবেন। বাইডেন ২০২০ সালের নির্বাচনের জয়ী হবার পর কংগ্রেস যাতে ফলাফল প্রত্যয়ন করতে না পারে, সে লক্ষ্যে ক্যাপিটলে হামলা করা হয়।

যাদেরকে গ্রেফতার করে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, ট্রাম্প তাদের “দেশপ্রেমিক” এবং “জিম্মি” বলে বর্ণনা করেন, যাদের অন্যায়ভাবে বিচার করা হয়েছে।

ট্রাম্প বেশ কয়েক মাস ধরে ক্ষমতা নেয়ার আগে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছেন। কিন্তু সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তাঁর সহযোগীরা বলেছেন, এখন পরিকল্পনা হচ্ছে তাঁর প্রশাসনের প্রথম ১০০ দিনে যুদ্ধবিরতি অর্জন করার চেষ্টা করা, যেটা হবে এপ্রিল মাসের শেষের দিকে।

দুটি ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুও ট্রাম্পের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

ট্রাম্প বার বার ট্রান্সজেন্ডার নারীদের পুরুষ হিসেবে সম্বোধন করেছেন। তিনি তাঁর সমর্থকদের বলেছেন, তিনি নিশ্চিত করবেন ট্রান্সজেন্ডার নারীরা যেন নারীদের খেলা-ধুলায় অংশ না নিতে পারে।

“আমি নারীদের খেলা-ধুলা থেকে পুরুষদের বাইরে রাখব, ১০০ ভাগ, তাৎক্ষণিকভাবে, প্রথম দিন থেকে,” ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণার সময় এক সমাবেশে বলেন।

XS
SM
MD
LG