অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি রবিবার শুরু হবে বলে যুক্তরাষ্ট্র আত্মবিশ্বাসী


ইসরায়েলের তেল আভিভে জিম্মিদের আত্মীয়-স্বজন এবং সমর্থকরা যুদ্ধবিরতির দাবীতে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে। ফটোঃ ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫।
ইসরায়েলের তেল আভিভে জিম্মিদের আত্মীয়-স্বজন এবং সমর্থকরা যুদ্ধবিরতির দাবীতে বিক্ষোভ অব্যাহত রাখে। ফটোঃ ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বৃহস্পতিবার বলেছেন তিনি বিশ্বাস করেন যে, ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি চুক্তির বাস্তবায়ন শেষ মুহূর্তে দু’পক্ষের মধ্যে কিছু বিতর্ক সত্ত্বেও রবিবার নির্ধারিত সময়ে শুরু হবে। এর ফলে ১৫ মাস ধরে চলা লড়াই-এর অবসান হবে।

“আমি আত্মবিশ্বাসী এবং পুরোপুরি প্রত্যাশা করি বাস্তবায়ন রবিবার শুরু হবে, যেটা আমরা বলেছি,” ব্লিংকেন ওয়াশিংটনে আমেরিকার শীর্ষ কূটনীতিক হিসেবে তাঁর বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বলেন।

বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসের বিরুদ্ধে চুক্তির বিষয়ে পিছু হটার অভিযোগ আনার পর, কিছু সময়ের জন্য যুদ্ধবিরতির শুরু ও প্রথম কয়েকজন জিম্মির মুক্তির বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল।

নেতানিয়াহুর দফতর থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, হামাস “শেষ মুহূর্তে নানা ছাড় আদায়ের” চেষ্টা করছে। জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে খুনের দায়ে বন্দী কোন ফিলিস্তিনির মুক্তির ব্যাপারে ইসরায়েলের ভিটো দেয়ার ক্ষমতা থাকবে বলে যে সমঝোতা হয়েছিল, নেতানিয়াহুর দফতর হামাসের বিরুদ্ধে সেখান থেকে সড়ে আসার অভিযোগ আনে।

কিছু সময় পর, সিনিয়র হামাস নেতা ইজ্জাত আল-রিশক বলেন যে, তারা “আলোচনাকারীদের ঘোষণা করা যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ।”

“এটা খুব অবাক করার মত ব্যাপার না যে, এরকম একটা কঠিন আলোচনার পর কিছু অসমাপ্ত বিষয় রয়ে যেতে পারে,” বাইডেন বলেন। “আমরা সেই অসমাপ্ত বিষয় ঠিক করছি।”

Demonstrators celebrate as they gather in front of the parliament building to express their support for the Palestinians, in Rabat on January 16, 2025, following the news of a ceasefire and hostage release deal between Hamas and Israel.
মরক্কোর রাজধানী রাবাতে যুদ্ধবিরতির সংবাদে ফিলিস্তিনের সমর্থকরা আনন্দ করে। ফটোঃ ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫।

নেতানিয়াহু বলেছেন হামাস, যাদের যুক্তরাষ্ট্র একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে, সব কিছু মেনে না নেয়া পর্যন্ত তাঁর মন্ত্রিসভা চুক্তিতে প্রয়োজনীয় অনুমোদন দেয়ার জন্য বৈঠকে বসবে না। একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেছেন সেই ভোট এখন শুক্রবারে হতে পারে।

যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা মাত্র কয়েকদিন দূরে থাকা সত্ত্বেও ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় কয়েক দফা হামলা চালায়। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মীরা জানায়, যুদ্ধবিরতি চুক্তি ঘোষণার পর হামলায় ভূমধ্যসাগরের তীরে এই সরু ভূখণ্ডে অন্তত ৭১জন নিহত হয়েছে।

জাতিসংঘের এজেন্সিগুলো বলছে, যদি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়, তাহলে তারা গাজায় ফিলিস্তিনিদের জন্য ব্যাপক মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দিতে প্রস্তুত। জাতিসংঘ বলছে, গাজার ২৩ লক্ষ বাসিন্দার অন্তত ১৯ লক্ষ বাস্তচ্যুত হয়েছে এবং ৯২ শতাংশ বসতবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে।

ইসরায়েলি সরকারের ভেতরে যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিরুদ্ধে সবচেয়ে জোরালো বক্তব্য এসেছে অর্থমন্ত্রী বেযালেল স্মটরিচের কাছ থেকে যিনি এটাকে “ইসরায়েল রাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি খারাপ এবং বিপজনক চুক্তি” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

তিন পর্বের চুক্তি

চুক্তির প্রথম পর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত আছে ৪২-দিনের যুদ্ধবিরতি, গাজা থেকে ৩৩জন জিম্মির মুক্তি, ইসরায়েল থেকে ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তি, গাজা থেকে পর্যায়ক্রমে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার এবং ফিলিস্তিনি বেসামরিক মানুষের জন্য মানবিক ত্রাণ সরবরাহ ত্বরান্বিত করা।

প্রথম পর্যায়ের সময় দ্বিতীয় অধ্যায়ের বিস্তারিত নিয়ে আলোচনা হবে যার লক্ষ্য হবে লড়াই-এর স্থায়ী অবসান ঘটানো, বাকি সকল জিম্মিদের মুক্তি এবং ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার।

চূড়ান্ত পর্যায়ের বিষয় হবে গাজার প্রশাসন এবং নিরাপত্তা কাঠামোসহ ধ্বংসপ্রাপ্ত ভূখণ্ডের পুনর্নির্মাণ।

গাজা যুদ্ধ শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাস যোদ্ধারা সীমান্ত পেরিয়ে ইসরায়েলে আক্রমণ চালিয়ে, ইসরায়েলের হিসেব মতে, প্রায় ১,২০০জন হত্যা এবং ২৫০জনকে জিম্মি করে। ধারণা করা হচ্ছে, ১০০’র কিছু কম জিম্মি এখনো হামাসের হাতে রয়েছে, কিন্তু তাদের এক-তৃতীয়াংশ মারা গেছে বলে বিশ্বাস করা হয়।

গাজার কর্তৃপক্ষ বলেছে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৪৭,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু। ইসরায়েল কোন প্রমাণ ছাড়াই বলছে, মৃতের সংখ্যায় ১৭,০০০ জঙ্গি রয়েছে।

এই রিপোর্টের কিছু তথ্য দ্য অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস, এএফপি এবং রয়টার্স থেকে নেয়া হয়েছে।

XS
SM
MD
LG