অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতের মোদী অর্থনৈতিক উদ্বেগের মাঝে নতুন পথ খুঁজছেন


নাভি মুম্বাই-এর এক পাইকারি বাজারে একজন ক্রেতা টমেটো বাছাই করছেন। ফাইল ফটোঃ ৪ অগাস্ট, ২০২৩।
নাভি মুম্বাই-এর এক পাইকারি বাজারে একজন ক্রেতা টমেটো বাছাই করছেন। ফাইল ফটোঃ ৪ অগাস্ট, ২০২৩।

গত বছর বিশ্ব-সেরা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পর, ভারতের নীতি-নির্ধারকরা মন্দার সম্ভাবনা মোকাবেলা করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। একই সময়ে, বৈশ্বিক পরিস্থিতি এবং অভ্যন্তরীণ আস্থার অবনতি শেয়ার বাজারের সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধি নাকচ করে দিয়েছে।

মঙ্গলবার এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি মার্চ মাসে শেষ হতে যাওয়া চলতি বছরের জন্য ৬.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে, যা চার বছরে সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি এবং সরকারের প্রাথমিক অনুমানের নিচে। দুর্বল বিনিয়োগ আর শিল্প উৎপাদনের কারণে অর্থনীতির গতি মন্থর হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে হতাশাজনক অর্থনৈতিক সূচক এবং কর্পোরেট আয়ের শ্লথগতির ফলে পূর্বাভাস কমিয়ে আনা হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের দেশের আগের পারফরম্যান্স পুনর্মূল্যায়ন করতে বাধ্য করছে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উচ্চাকাঙ্ক্ষী অর্থনৈতিক লক্ষ্যমাত্রার প্রতি সন্দেহ সৃষ্টি করছে।

নতুন উদ্বেগের ফলে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ শিথিল এবং আর্থিক কড়াকড়ি কমিয়ে এনে মনোবল চাঙ্গা করার ডাক বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে যখন ডনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন ক্ষমতা গ্রহণ বিশ্ব বাণিজ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।

“আপনাকে ব্যবসায়িক উদ্দীপনা পুনরুজ্জীবিত করতে হবে, এবং বেচা-কেনা বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে হবে। এটা এত সহজ কাজ নয়,” বলছেন এমকে গ্লোবাল ফাইন্যানশিয়াল সার্ভিসেস-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ মাধবী আরোরা। তিনি বলেন ভারত ব্যাঙ্ক সুদের হার কমাতে পারে।

ভারতের অর্থনীতি চাঙ্গা করার জন্য কঠোর মুদ্রানীতি শিথিল করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। ফাইল ফটোঃ ৩০ এপ্রিল, ২০১২।
ভারতের অর্থনীতি চাঙ্গা করার জন্য কঠোর মুদ্রানীতি শিথিল করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। ফাইল ফটোঃ ৩০ এপ্রিল, ২০১২।

অর্থনীতিতে চাহিদা কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন ভারতীয় ব্যবসায়ী এবং নীতি-নির্ধারকের একাধিক বৈঠকের মাঝে এই আহ্বান আসছে। অর্থমন্ত্রী নিরমালা সিথারামান ডিসেম্বরে অর্থনীতিবিদ এবং শিল্পপতিদের সাথে একরাশ বৈঠক করেন। এ’ধরনের বৈঠক ১ ফেব্রুয়ারি বার্ষিক বাজেট ঘোষণার আগে নিয়মমাফিক ঘটনা।

শিল্প এবং বাণিজ্য খাতের সংগঠনগুলোর তথ্য অনুযায়ী, বৈঠকে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রস্তাবিত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে ভোক্তাদের হাতে আরও অর্থ জোগান দেয়া এবং বিভিন্ন কর ও শুল্ক কমিয়ে আনা।

আস্থা হ্রাস পাওয়ার সাথে, অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার রাজনৈতিক চাপ দৃশ্যত বেড়ে চলছে।

গত মাসে প্রকাশিত ভারতের মাসিক অর্থনৈতিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কঠোর মুদ্রানীতি চাহিদা কমে যাওয়ার জন্য আংশিক দায়ী।

মোদী সম্প্রতি উচ্চ পর্যায়ে কিছু পরিবর্তন এনেছেন যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখার চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ডিসেম্বরে এক অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপে, মোদী কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের গভর্নর হিসেবে শাক্তিকান্ত দাসের জায়গায় সঞ্জয় মালহোত্রাকে নিয়োগ করেন। দাস দায়িত্বে ছয় বছর সম্পন্ন করেছেন এবং একজন নির্ভরযোগ্য আমলা হিসেবে তিনি আরেকটি দুই বছরের মেয়াদ পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছিল।

ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের নতুন গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা। ফটোঃ ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪।
ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের নতুন গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা। ফটোঃ ১১ ডিসেম্বর, ২০২৪।

মালহোত্রা সম্প্রতি বলেছেন যে, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক উঁচু প্রবৃদ্ধির পথ সমর্থন করার চেষ্টা করবে। সেপ্টেম্বর কোয়ার্টারের পরিসংখ্যানে ৫.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি – যা ছিল ধারণার চেয়ে ধীরগতি – দেখানোর পরপরই মালহোত্রাকে নিয়োগ করা হয়।

কোভিড মহামারির সময়, মোদী অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ সীমিত করে সরকারের আর্থিক ব্যবস্থা ভাল অবস্থায় রাখেন।

এর ফলে দেশজ মোট উৎপাদন বা জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি বাড়তে থাকে, কিন্তু তিন বছর ধরে বার্ষিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য আয় বা ভোক্তা খরচ সমর্থন করেনি।

ভারতের অর্থনীতি এখনো বিশ্বের অন্যান্যদের চেয়ে ভাল পারফর্ম করতে পারে, কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তারা কি ৬.৫-৭.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে যাবে, নাকি ৫-৬ শতাংশে নেমে আসবে, বলছেন সেন্টার ফর সোশাল অ্যান্ড ইকনোমিক প্রোগ্রেস-এর সিনিয়র ফেলো সঞ্জয় কাথুরিয়া।

আরোরা বলছেন, দেশটি এখন কিছুটা “মাঝখানে ঝুলে আছে” যেখানে লোকজন খরচ করছে না। কর্মসংস্থান আর আয়ের যদি উন্নতি না হয়, তাহলে তিনি ধারণা করছেন এই অবস্থা চলতে থাকবে।

গত মাসে রয়টার্স খবর দিয়েছিল যে, সরকার কিছু ব্যক্তির কর কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে এবং ডনাল্ড ট্রাম্পের সাথে সমঝোতা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা কৃষি এবং অন্যান্য দ্রব্যের উপর শুল্ক কমিয়ে ফেলবে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন প্রবৃদ্ধি সমর্থন করার জন্য সরকারকে আর্থিক কড়াকড়ি কমিয়ে আনতে হবে। তবে এই পদক্ষেপের সাফল্য নির্ভর করবে কমানোর পরিমাণের উপর।

বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্ক যুদ্ধ মোকাবেলার জন্য ভারতের একটি বিশ্বাসযোগ্য পরিকল্পনা দরকার।

চীন যদি ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির মূল লক্ষ্য হয়ে থাকে, তাহলে সেটা ভারতের জন্য তার বাণিজ্য প্রোফাইল উন্নত করার একটি সুযোগ নিয়ে আসবে।

কাথুরিয়া, যিনি জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়েরও একজন অ্যাডজাঙ্কট প্রফেসর, বলছেন যে, ভারতকে “বৈশ্বিক বাণিজ্য ধারায় নিজেকে আরও গভীরভাবে স্থাপন করার জন্য গুরুত্বের সাথে শুল্ক সংস্কার বাস্তবায়ন করতে হবে।”

এর মধ্যে শুল্ক কমানোর পদক্ষেপ থাকতে পারে, যার লক্ষ্য হবে ট্রাম্পের শাস্তিমূলক বাড়তি শুল্কর হুমকি প্রতিহত করা।

XS
SM
MD
LG