ভারত তালিবান শাসিত আফগানিস্তানের উন্নয়ন কার্যক্রম প্রকল্পের ব্যাপারে ওই দারিদ্র পীড়িত দেশকে সহযোগিতা করতে বুধবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আফগানিস্তান বহু বছর ধরে ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে বুধবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রী ও তালিবান পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির মধ্যে বৈঠকে এই প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলো। দু’টি দেশই তাদের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বানিজ্য ও রাজনৈতিক সম্পর্ক মজবুত করতে চলেছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের মধ্যে বৈঠকের পর জানায় মিশ্রী বলেন নতুন দিল্লি “আফগান জনগণের জরুরি উন্নয়নমূলক প্রয়োজনে সাড়া দিতে প্রস্তুত”।
বৈঠকের পর এক ঘোষণায় তালিবান বলে যে দুই পক্ষ ওই অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেন। আফগানিস্তানে অবিরত ভাবে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য মুত্তাকি নতুন দিল্লির প্রশংসা করেন এবং ধন্যবাদ জানান।
ভারতীয় বিবৃতিতে বলা হয়,“উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের জন্য বর্তমান প্রয়োজনীয়তার প্রেক্ষাপটে, এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে চলমান মানবিক সহযোগিতা কর্মসূচি ছাড়াও, নিকট ভবিষ্যতে ভারত উন্নয়ন প্রকল্পে নিজেকে সম্পৃক্ত করার বিষয়টি বিবেচনা করবে”।
বিবৃতিতে আরও বলা হয় যে তালিবানের অনুরোধে সাড়া দিয়ে নতুন দিল্লি আফগানিস্তানে শরণার্থীদের পুনর্বাসন এবং স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে আরও বস্তুগত সহায়তা প্রদানে সম্মত হয়েছে।
আফগান প্রতিনিধিদল “ভারতের নিরাপত্তা বিষয়ক উদ্বেগে তাদের সংবেদনশীলতাকে তুলে ধরেন”। ভারতের মন্ত্রণালয় বলেছে উভয় দেশই বিভিন্ন স্তরে তাদের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে সম্মত হয়।
তালিবান জানিয়েছে যে মুত্তাকি ভারতীয় প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেছেন যে তার সরকার “ভারসাম্যমূলক অর্থনীতি কেন্দ্রিক পররাষ্ট্র নীতি” অনুসরণ করছে। তিনি এই অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের তাত্পর্যকে স্বীকার করে দেশটির সঙ্গে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের উপর তাঁর ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।
তলিবানের বিবৃতিতে বলা হয়, “[আমাদের] পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতীয় পক্ষকে এই নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে আফগানিস্তানের কাছ থেকে কারও জন্য কোন বিপদ নেই এবং কুটনৈতিক সম্পর্ক জোরালো করার আর ব্যবসায়ী, রোগী ও শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসার সুবিধা প্রদানের আশা প্রকাশ করেন”।
বিবৃতিতে আরও বলা হয় যে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব “সে দেশে মাদক দ্রব্য ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে এই ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের লড়াইয়ের” প্রশংসা করেন। মিশ্রী বলেন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভারত আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক সম্প্রসারিত করতে চায় এবং প্রতিবেশী ইরানের চাবাহার বন্দর দিয়ে বানিজ্য বাড়াতে চায়।
কোন দেশই আফগানিস্তানের বৈধ শাসক হিসেবে তালিবানকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়নি তবে চীন, রাশিয়া, পাকিস্তান, ইরান ও কাতারসহ প্রতিবেশি ও আঞ্চলিক দেশগুলি আফগানিস্তানে তাদের দূতাবাস বহাল রেখেছে। ভারত সম্প্রতি কাবুলে তাদের কূটনৈতিক মিশন আবার খুলেছে যেখানে অধঃস্তন কূটনীতিকরা দায়িত্ব পালন করছেন।
আফগানিস্তানের বর্তমান নেতাদের সঙ্গে নতুন দিল্লির সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে প্রতিবেশি ও পরমশত্রু পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
কাবুলের সঙ্গে সম্প্রতি ইসলামাবাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। পাকিস্তান এই অভিযোগ করছে যে বে আইনি ঘোষিত তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান বা টিটিপির পলাতক জঙ্গিদের পাকিস্তানে “সন্ত্রাসী” হামলা চালাতে তালিবান মদদ দিচ্ছে।
গত মাসে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আফগানিস্তানের সীমান্ত শহরে সন্দেহভাজন টিটিপি’র গোপন আস্তানায় বিমান আক্রমণ চালায় যাতে তালিবান কড়া নিন্দা জানিয়েছে।
ভারতও আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সামরিক আগ্রাসনে আপত্তি জানায়।
২৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানের বিমান আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, “আমরা দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে নির্দোষ অসামরিক লোকজনের উপর যে কোন আক্রমণের নিন্দে করি। নিজেদের ব্যর্থতার জন্য প্রতিবেশিদের দোষারোপ করা পাকিস্তানের পুরোনো অভ্যেস”।