অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ইসরায়েল সরকারের সাহায্যে প্রাক্তন ইসরায়েলি সৈন্যের তদন্তের মুখে ব্রাজিল ত্যাগ


গাজা সিটিতে একজন ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত বাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখছেন। ফটোঃ ৫ জানুয়ারি, ২০২৫।
গাজা সিটিতে একজন ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত বাড়ির ধ্বংসাবশেষ দেখছেন। ফটোঃ ৫ জানুয়ারি, ২০২৫।

গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে একজন সাবেক সেনার বিরুদ্ধে একটি গোষ্ঠী আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার পর ইসরায়েল তাকে ব্রাজিল ত্যাগ করতে সহায়তা করেছে। সামাজিক মাধ্যমে সৈন্যদের নিজস্ব পোস্টের উপর আংশিকভাবে ভিত্তি করে এই অভিযোগ আনা হয়।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রবিবার ঘটনাটি নিশ্চিত করেছে। তারা বলে, “ইসরায়েলবিরোধী গোষ্ঠীগুলো” গত সপ্তাহে তদন্ত শুরু করার চেষ্টা করলে তারা সাবেক সেনাকে নিরাপদে ব্রাজিল থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করেছে। তারা ইসরায়েলিদের তাদের সামরিক কার্যক্রম নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করার বিরুদ্ধে সতর্ক করে।

গাজায় নিহত ৫ বছর বয়সী একজন ফিলিস্তিনি মেয়ের নামে প্রতিষ্ঠিত হিন্দ রজব ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ভিডিও ফুটেজ, ভূ-অবস্থান তথ্য এবং বেসামরিক বাড়িঘর ধ্বংসে অংশ নেওয়ার ছবির উপর ভিত্তি করে অভিযোগ দায়ের করার পর ব্রাজিলের কর্তৃপক্ষ ওই সৈন্যের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে।

তারা এই পদক্ষেপকে “গাজায় সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ” হিসাবে বর্ণনা করে।

ব্রাজিলীয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনোও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। শনিবার ব্রাজিলের গণমাধ্যম জানায়, তদন্তটি ব্রাজিলের ফেডারেল জেলার একজন অন-কল দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেডারেল বিচারকের নির্দেশে শুরু হয়। সিদ্ধান্তটি ৩০ ডিসেম্বর জারি করা হয়, তবে সপ্তাহের শেষে স্থানীয় গণমাধ্যম তা প্রথম প্রকাশ করে।

আন্তর্জাতিক অভিযোগ

গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য ইসরায়েল ব্যাপক আন্তর্জাতিক সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালত পৃথকভাবে গণহত্যার অভিযোগ তদন্ত করছে।

ব্রাজিলের এই মামলা ইঙ্গিত দেয় যে, বিদেশ ভ্রমণের সময় সাধারণ ইসরায়েলি সেনারাও সম্ভাব্য বিচারের মুখোমুখি হতে পারে।

ইসরায়েল দৃঢ়ভাবে আন্তর্জাতিক অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে যে, গাজায় তাদের বাহিনী আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কাজ করছে এবং যে কোনো লঙ্ঘনের শাস্তি তাদের নিজস্ব বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে করা হয়। তারা বলছে, হামাস আবাসিক ভবনগুলিতে সুড়ঙ্গ এবং অন্যান্য সশস্ত্র অবকাঠামো লুকিয়ে রাখে, যার কারণে সেগুলো ধ্বংস করা প্রয়োজন।

প্রায় ১৫ মাস ধরা চলা যুদ্ধে, ইসরায়েলি সৈন্যরা গাজা থেকে বেশ কয়েকটি ভিডিও প্রকাশ করেছে, যেখানে তাদেরকে ব্যক্তিগত বাড়ি তল্লাশি করতে এবং আবাসিক ভবনগুলি উড়িয়ে বা পুড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে। কিছু ভিডিওতে তারা বর্ণবাদী স্লোগান দেয় বা ফিলিস্তিনি অঞ্চল ধ্বংস করা নিয়ে বড়াই করতে দেখা যায়।

সামরিক বাহিনী, তাদের ভাষায়, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।

যুদ্ধ শুরু হয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাসের নেতৃত্বে সশস্ত্র জঙ্গিরা দক্ষিণ ইসরায়েল আক্রমণ করে ১,২০০জনকে হত্যা করে, যাদের বেশির ভাগ বেসামরিক। প্রায় ২৫০জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়। শ’খানেক জিম্মি এখনো গাজায় রয়েছে, তবে তাদের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ মারা গেছে বলে ধারণা করা হয়।

স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গাজায় অন্তত ৪৫,৮০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। তারা বলছেন, নিহতদের অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা তাদের হিসেবে যোদ্ধা এবং বেসামরিক মানুষ আলাদা করে তালিকা করেন না।

ইসরায়েল কোন প্রমাণ ছাড়াই বলে তারা ১৭,০০০ এর বেশি জঙ্গি হত্যা করেছে।

যুদ্ধের ফলে গাজায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে, এবং ভূখণ্ডের ২৩ লক্ষ বাসিন্দার ৯০ শতাংশ বাস্তচ্যুত হয়েছেন। অনেকেই একাধিকবার পালাতে বাধ্য হয়েছেন।

XS
SM
MD
LG