বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কারণে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ২১ ডিসেম্বরের (শনিবার) পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ স্থগিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, ১৭ ডিসেম্বর রাত থেকে খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকায় চিকিৎসকদের পরামর্শে অনুষ্ঠান স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
২১ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল।
এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, খালেদা জিয়া তাঁর গুলশানের বাসায় চিকিৎসকদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, অসুস্থতার কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা এখন পিছিয়ে গেছে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য চলতি মাসের শেষের দিকে লন্ডন ও পরে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা ছিল খালেদা জিয়ার।
একইসঙ্গে সৌদি আরবে তাঁর পবিত্র ওমরাহ পালনেরও কথা ছিল।
এর আগে ১৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশের ঘোষণা দেন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি সৈয়দ ইশতিয়াক আজিজ উলফাত।
প্রায় ৭ বছরের মধ্যে প্রথম রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে খালেদা জিয়ার সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল।
খালেদা জিয়া সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১২ নভেম্বর ঢাকায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দলের এক সমাবেশে ভাষণ দিয়েছিলেন। তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি।
দুর্নীতির দুই মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে। দুই বছরের বেশি সময় তিনি কারাবন্দী ছিলেন। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে তাঁর সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দেয়। সেই থেকে ৬ মাস পরপর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছিল সরকার।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরদিন ৬ অগাস্ট খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে মুক্তি দেওয়া হয়। সেদিন তাঁর মুক্তির ব্যাপারে বঙ্গভবন থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের বৈঠকের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
এরপর খালেদা জিয়া ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে সেনাকুঞ্জে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।
খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হার্ট, ফুসফুস, কিডনি ও চোখের সমস্যাসহ বেশ কয়েকটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বাধীন মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধানে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পাওয়ার পর থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে একাধিকবার চিকিৎসা নিয়েছেন তিনি।