অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের হাতে আসাদের পতনের পর রাজধানীতে উল্লাস


দামেস্কে এক বিরোধী যোদ্ধা আকাশে গুলি ছুঁড়ে বিজয় উদযাপন করছে। ফটোঃ ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪।
দামেস্কে এক বিরোধী যোদ্ধা আকাশে গুলি ছুঁড়ে বিজয় উদযাপন করছে। ফটোঃ ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪।

বিদ্রোহীরা ঝটিকা অভিযান চালিয়ে সিরিয়ার রাজধানীয় দামেস্কের দখল নেওয়ার পর রবিবার সকালে দেশটির সরকারের পতন হয়। এতে আসাদ পরিবারের ৫০ বছরের ইস্পাত কঠিন শাসনামলের অবসান ঘটে। এই মুহূর্তটি উদযাপন করতে উল্লসিত জনতা সড়কে নেমে আসে।

সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে একদল মানুষের কাছ থেকে একটি ভিডিও বিবৃতি প্রচার করা হয়। তারা বলেন, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করা হয়েছে এবং সব বন্দীরা মুক্তি পেয়েছেন।

বিদ্রোহীরা দ্রুত গতিতে সারা দেশজুড়ে অগ্রসর হওয়ার পর এক পর্যায়ে রাজধানী দামেস্কে ঢুকে পড়ে। এ সময় সিরিয়ার সরকার-বিরোধী যুদ্ধ নিরীক্ষক জানান, আসাদ অজ্ঞাত স্থানের উদ্দেশে দেশ ছেড়ে গেছেন। এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর উল্লেখিত ভিডিও বিবৃতি প্রচার করা হয়।

অবিশ্বাস্য দ্রুতগতিতে আসাদ সিরিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণ হারান। রাজধানীরঅনেক বাসিন্দা বিষয়টি বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। এর আগে, প্রায় ১৪ বছর ধরে চলমান গৃহযুদ্ধে দেশটিতে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিহত হন।

পাশাপাশি সিরিয়ার ২ কোটি ৩০ লাখ বাসিন্দার অর্ধেকই বাস্তুচ্যুত হন। বেশ কয়েকটি বিদেশি শক্তিও এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।

দামেস্কের প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদের ভেতরে একদল সিরিয় সেলফি তুলছেন। ফটোঃ ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪।
দামেস্কের প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদের ভেতরে একদল সিরিয় সেলফি তুলছেন। ফটোঃ ৮ ডিসেম্বর, ২০২৪।

রাজধানীজুড়ে উদযাপনে ফেটে পড়েছে সিরীয়রা

দামেস্কে দিনের আলো ছড়িয়ে পড়ার পর শহরের মসজিদগুলোতে প্রার্থনার জন্য এবং চত্বরগুলোতে উদযাপনের জন্য সিরীয়রা জমায়েত হয়ে "আল্লাহু আকবর" ধ্বনি দেন। মানুষ আসাদ-বিরোধী স্লোগানও দেয় এবং গাড়ির হর্ন বাজাতে থাকে। তরুণ বালকেরা অস্ত্র হাতে নিয়ে বাতাসে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে উদযাপন করে। ধারণা করা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এসব অস্ত্র ফেলে গেছেন।

উদযাপনকারীরা শহরের কেন্দ্রের উমাইয়্যাদ চত্বরে জমায়েত হয়। সেখানেই প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় অবস্থিত।

এ সময় পুরুষরা আকাশে গুলি ছুড়ে উদযাপন করে এবং কেউ কেউ সিরিয়ার তিন-তারকা বিশিষ্ট পুরনো পতাকা ওড়ান। এই পতাকাটি আসাদ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে জাতীয় পতাকা ছিল। বিদ্রোহীরা এই পতাকার পক্ষেই লড়েছেন।

কয়েক কিলোমিটার দূরে, সিরীয়রা প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে ঢুকে পড়ে এবং সেখানে সদ্য-উৎখাত আসাদের ছবি ছিঁড়ে ফেলে।

সেনাসদস্য ও পুলিশরা তাদের কর্মস্থল ছেড়ে পালিয়ে যান। এ সময় জনমানুষ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে ঢুকে লুটপাট চালায়।

দামেস্ক থেকে পাওয়া ভিডিওতে দেখা গেছে অনেকেই সপরিবারে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে ঢুকে পড়ছেন। বের হয়ে আসার সময় তাদের অনেকের হাতেই ছিল সারি সারি প্লেট ও অন্যান্য গৃহস্থালি উপকরণ।

বাশার আল-আসাদ কোথায়?

দুজন উচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স রবিবার সকালে জানায়, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ বিমান যোগে অজ্ঞাত গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন।

সিরিয়ায় বিদ্রোহীরা রবিবার বলে, তারা দেশের রাজধানী দামেস্কে প্রবেশ করেছে। বিদ্রোহীরা জানাচ্ছে তারা শহরে সামরিক বাহিনীর কোন প্রতিরোধ ব্যবস্থার মুখোমুখি হচ্ছে না।

সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মাদ গাজি জালালি বলেন, সরকার বিরোধীদের দিকে “সহযোগিতার হাত” বাড়িয়ে দিতে এবং প্রশাসনের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত।

“আমি আমার বাসায় আছি, আমি কোথাও চলে যায়নি, কারণ আমি এই দেশেরই মানুষ,” জালালি এক ভিডিও বিবৃতিতে বলেন। জালালি বলেন তিনি সকালে কাজ করতে তাঁর দফতরে যাবেন এবং তিনি সিরিয়ানদের প্রতি রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট না করার আহ্বান জানান।

প্রেসিডেন্ট আসাদ কোথায় আছেন, সে ব্যাপারে তিনি কিছু বলেন নি।

সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ, যিনি ২০০০ সালের ১৭ জুলাই থেকে দেশ শাসন করেছেন। ফাইল ফটো।
সিরিয়ার বাশার আল-আসাদ, যিনি ২০০০ সালের ১৭ জুলাই থেকে দেশ শাসন করেছেন। ফাইল ফটো।

তবে ব্রিটেন-ভিত্তিক সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস-এর প্রধান রামি আব্দুররহমান অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানান যে, আসাদ রবিবার সকালে বিমান যোগে দামেস্ক ছেড়ে চলে গেছেন।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানায় যে আসাদ রাজধানী ছেড়ে চলে গেছেন। তারা কাতার-ভিত্তিক আল জাজিরা নেটওয়ার্ক-এর বরাত দিয়ে খবরটি দেয়, কিন্তু বিস্তারিত কিছু বলেনি। সিরিয়ার যুদ্ধে ইরান প্রেসিডেন্ট আসাদের প্রধান সমর্থক ছিল।

XS
SM
MD
LG