অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের অভিযানের ফলে রাশিয়া আর তুরস্ক মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা


সিরিয়ার সারাকিব শহরে সিরিয়ান সেনাবাহিনীর ফেলে যাওয়া এক কামানের উপড়ে দাঁড়িয়ে একজন বিদ্রোহী যোদ্ধা। ফটোঃ ১ ডিসেম্বর, ২০২৪।
সিরিয়ার সারাকিব শহরে সিরিয়ান সেনাবাহিনীর ফেলে যাওয়া এক কামানের উপড়ে দাঁড়িয়ে একজন বিদ্রোহী যোদ্ধা। ফটোঃ ১ ডিসেম্বর, ২০২৪।

সিরিয়ার সামরিক বাহিনী রবিবার (১ ডিসেম্বর) দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিদ্রোহীদের থামানোর জন্য বাড়তি সৈন্য মোতায়েন এবং বিমান হামলা পরিচালনা করে। একই সময়, বিদ্রোহীদের অপ্রত্যাশিত অভিযান প্রতিহত করতে ইরান সিরিয়ার সরকারকে সমর্থন করার অঙ্গীকার করেছে।

সিরিয়ার দীর্ঘ-স্থায়ী গৃহযুদ্ধে ইরান সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক এবং সামরিক সমর্থন দিয়ে আসছে। কিন্তু গত বুধবার শুরু হওয়া এই সর্বশেষ লড়াই-এ তেহরান দামেস্ককে কী ধরনের সমর্থন দিতে পারবে, তা পরিষ্কার নয়।

জিহাদি সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শাম-এর নেতৃত্বে বিদ্রোহীরা আলেপ্পো এবং সংলগ্ন ইদলিব প্রদেশের মফস্বল অঞ্চলে হামলা চালায়। এর পর তারা হামা প্রদেশের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

সংঘর্ষ বেড়ে যাওয়ার ফলে মধ্যেপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতার আরেকটি জানালা খুলে যাবার সম্ভাবনার সৃষ্টি হল, যখন ইসরায়েল গাজায় হামাস এবং লেবাননেন হিজবুল্লাহ’র সাথে লড়াই করছে। এর ফলে রাশিয়া এবং তুরস্ক একে ওপরের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, কারণ সিরিয়াতে তাদের দুজনের নিজস্ব স্বার্থ রয়েছে।

বিদ্রোহীরা বুধবার তাদের অভিযান ঘোষণা করে, ঠিক যখন ইসরায়েল এবং হিজবুল্লাহ’র মধ্যে যুদ্ধবিরতি শুরু হয় এবং আঞ্চলিক শান্তির জন্য আশা সৃষ্টি হয়।

এই অভিযান প্রেসিডেন্ট আসাদের জন্য ভীষণ বিব্রতকর, এবং এটা এসেছে এমন সময় যখন তাঁর মিত্র দেশগুলো – ইরান এবং তার সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো আর রাশিয়া – তাদের নিজস্ব সংঘাত নিয়ে ব্যস্ত।

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি (বাঁয়ে) প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সাথে দেখা করেন। ফটোঃ ১ ডিসেম্বর, ২০২৪।
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি (বাঁয়ে) প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সাথে দেখা করেন। ফটোঃ ১ ডিসেম্বর, ২০২৪।

ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দামেস্ক সফর

আসাদের দফতর থেকে আসা বিবৃতি অনুযায়ী, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগাহচি দামেস্ক সফরে এসে সিরিয়ার নেতাকে আশ্বস্ত করেন এই বলে যে, তেহরান সিরিয়া সরকারের পাল্টা-অভিযানে সমর্থন দিতে প্রস্তুত।

জর্ডানের রাজা দ্বিতীয় আব্দুল্লাহ এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মেদ বিন যায়েদ আল নাহিয়ান সহ আরব নেতারা আসাদকে ফোন করে সংহতি প্রকাশ করেছেন।

বিদ্রোহীরা শনিবার আলেপ্পোর বেশির ভাগ এলাকা দখল করে নেয় এবং আশেপাশের মফস্বল অঞ্চলে অগ্রসর হয়। তারা শহরের মুল পানিয় জল উত্তোলনের পাম্পিং স্টেশন দখল করে। তবে সিরিয়ার পানি সম্পদমন্ত্রী মোয়াতাজ কাতান সরকারপন্থি শাম এফএম রেডিও স্টেশনকে বলেন যে পাম্পিং স্টেশন এখন আর কাজ করছে না।

বিদ্রোহীরা দাবী করে যে তারা হামা শহরে প্রবেশ করেছে তবে এই দাবী স্বতন্ত্রভাবে নিশ্চিত করা যায়নি। ইদলিব প্রদেশের খান শেইখুন-এ, রাস্তার ধারে সামরিক যান পড়ে থাকতে দেখা যায় যেগুলো সিরিয়ান সৈন্যরা ফেলে চলে গেছে।

দামেস্ক স্বাভাবিক, আলেপ্পোতে আতঙ্ক

বিদ্রোহীরা ঘোষণা দেয় যে তারা তাদের অভিযান দামেস্ক পর্যন্ত চালিয়ে যাবে, কিন্তু সিরিয়ার রাজধানীতে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক ছিল এবং সেখানে আতঙ্ক বা অস্থিরতার কোন লক্ষণ ছিল না।

কিন্তু আলেপ্পোর দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে, মানুষ লড়াই থেকে পালানোর চেষ্টা করায় শহর থেকে বের হওয়ার প্রধান রাস্তায় ট্র্যাফিক জ্যামের সৃষ্টি হয়, এবং পেট্রোল স্টেশনগুলোও তেলের সঙ্কট দেখা দেয়।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সালিভান ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় কথা বলছেন। মঙ্গলবার, ২২শে মার্চ, ২০২২।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সালিভান ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের সময় কথা বলছেন। মঙ্গলবার, ২২শে মার্চ, ২০২২।

যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে সালিভান

সরকার সমর্থক আল মায়াদীন টেলিভিশন অনুযায়ী, বিদ্রোহীরা উত্তরের তেল রিফাত শহরেও প্রবেশ করে, যে শহরের নিয়ন্ত্রণ এখন পর্যন্ত সিরিয়া ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স বা এসডিএফ নামের যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত কুর্দি বাহিনীর হাতে ছিল। বিদ্রোহীরা এক বিবৃতিতে এসডিএফ-কে আলেপ্পোর কাছের এলাকা ছেড়ে যেতে নির্দেশ দেয়।

কুর্দিরা সিরিয়ান সরকারের বিরোধী হলেও তারা তুরস্ক-সমর্থিত বিদ্রোহীদের বিরোধিতা করে। তারা অভিযোগ করে যে তুরস্ক কুর্দিদের সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে হটিয়ে দিতে চায়।

তুরস্কের কর্মকর্তারা বলছে, বিদ্রোহীদের সীমিত পরিসরে অভিযানের লক্ষ্য ছিল বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে সরকারী বাহিনীর আক্রমণ থামানো। কিন্তু সরকারী বাহিনী দ্রুত পিছু হটার ফলে অভিযান সম্প্রসারিত হয়ে যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান সিএনএন-এর ‘স্টেট অফ দ্য ইউনিয়ন’ অনুষ্ঠানে বলেন যে যুক্তরাষ্ট্র পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। সিরিয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ৯০০ আমেরিকান সৈন্য আছে, যাদের মুল কাজ হচ্ছে উগ্রপন্থী ইসলামিক স্টেট গোষ্ঠীর পুনরুত্থান আটকানো। তবে তারা বর্তমান লড়াই থেকে অনেক দূরে অবস্থিত।

যে বিদ্রোহী গোষ্ঠী অভিযানের নেতৃত্ব দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করে। সালিভান বলেন ঐ “সংগঠনের লক্ষ্য এবং পরিকল্পনা নিয়ে ওয়াশিংটনের গভীর উদ্বেগ রয়েছে।”

“একই সময়ে, রাশিয়া, ইরান এবং হিজবুল্লাহ সমর্থিত আসাদ সরকার এক ধরনের চাপের মধ্যে পড়েছে বলে আমরা অবশ্য কান্না-কাটি করছিনা,” তিনি বলেন।

XS
SM
MD
LG