যুক্তরাষ্ট্রের নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের মনোনীত জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবিবার বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার প্রায় তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধে বিভিন্ন রকমের অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে ট্রাম্প “ভীষণ চিন্তিত।”
মাইকেল ওয়াল্টজ “ফক্স নিউজ সানডে” টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বলেন যে, রণাঙ্গনে রাশিয়ার অগ্রগতি আটকাতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনকে ল্যান্ড মাইন ব্যবহার করার যে অনুমতি দিয়েছেন, তার ফলে পূর্ব ইউক্রেনের লড়াই “প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ট্রেঞ্চ যুদ্ধের মত” হয়ে গেছে।
ওয়াল্টজ বলেন, সিদ্ধান্ত নিতে হবে “এই সংঘাত অবসানের লক্ষ্যে একটি সার্বিক কাঠামোর মধ্যে।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন গত সপ্তাহে বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জন্য অ্যানটি-পারসোনেল মাইন পাঠাচ্ছে, কারণ যুদ্ধের প্রধান রণাঙ্গন পূর্ব ইউক্রেনে লড়াই-এর ধরন পাল্টে গেছে।
তিনি বলেন সাঁজোয়া যানের ভেতরে সুরক্ষিত সৈন্য নয়, এখন রাশিয়ার পদাতিক বাহিনী মস্কোর অভিযানের অগ্রভাবে আছে। কাজেই ইউক্রেনের “এমন জিনিস প্রয়োজন যা দিয়ে তাদের গতি কমিয়ে দিতে পারবে।”
ওয়াল্টজ বলেন যে ট্রাম্প, যিনি ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন, এই ধ্বংসযজ্ঞ নিয়ে চিন্তিত, কিন্তু মোটা দাগে যে প্রশ্ন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল, “আমরা কীভাবে শান্তি নিয়ে আসবো এবং কীভাবে আগ্রাসন নিরুৎসাহিত করার জন্য ডেটারেন্স পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবো?”
“এই যুদ্ধের একটি দায়িত্বশীল সমাপ্তি টানা দরকার,” তিনি বলেন।
ট্রাম্প প্রায়ই দাবী করেন যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর অভিষেকের আগেই রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ থামিয়ে দেবেন। তিনি কখনো বলেননি সেটা কীভাবে করবেন। গত সেপ্টেম্বরে নির্বাচনী প্রচারণার সময় এক টেলিভিশন বিতর্কে তিনি বলতে অস্বীকার করেন যে তিনি ইউক্রেনকে যুদ্ধে জয়ী দেখতে চান।
বাইডেন ইউক্রেনকে ওয়াশিংটনের সরবরাহ করা ক্ষেপণাস্ত্র রাশিয়ার ভেতরে নিক্ষেপ করার অনুমতি দিয়েছেন। এই ক্ষেপণাস্ত্র ৩০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। উত্তর কোরিয়া মস্কোর বাহিনীর পাশাপাশি যুদ্ধ করার জন্য ১০,০০০ সৈন্য পাঠানোর জবাব হিসেবে এই অনুমতি দেয়া হয়েছে।
দু’দিন পরেই, কিয়েভ রাশিয়ার ব্রিয়ান্সক অঞ্চলে একটি অস্ত্রের গুদাম লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে।
জেক সালিভানের সাথে বৈঠক
এর পর, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি নতুন পরীক্ষামূলক রকেট পূর্ব ইউক্রেনের দেনিপ্র শহর লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করেন।
“এটা পরিষ্কারভাবেই উত্তেজনা বাড়িয়ে দিচ্ছে,” ওয়াল্টজ বলেন। “যুদ্ধের মাত্রা বাড়িয়ে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? আমরা কীভাবে দু’পক্ষকে শান্তি আলোচনার টেবিলে নিয়ে আসতে পারবো?”
ওয়াল্টজ, যার নিয়োগের জন্য সেনেটের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না, বলেন তিনি বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভানের সাথে বৈঠক করেছেন।
ওয়াল্টজ বলেন যুক্তরাষ্ট্রের কোন প্রতিপক্ষ যদি মনে করে তারা “এক পক্ষকে আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে খেলাতে পারবে” তাহলে তারা “ভুল করবে।” ওয়াশিংটনে ক্ষমতার পরিবর্তন হবে ডেমোক্র্যাট দলের বাইডেন থেকে তাঁর দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক শত্রু ট্রাম্প-এর কাছে, যিনি একজন রিপাবলিকান।
ওয়াল্টজ বেশ ‘আত্মবিশ্বাসী’ যে ট্রাম্প “খুব অল্প সময়েই” মধ্যপ্রাচ্যের একাধিক সংঘাতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করবেন, যেখানে ইসরায়েল ইরান-সমর্থিত জঙ্গিদের সাথে লড়াই করছে – গাজায় হামাস এবং লেবাননে হিজবুল্লাহ।
কিন্তু মাসের পর মাস গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা চলার পরও আলোচনা স্থবির হয়ে আছে, আর লেবাননে ইসরায়েল-হিজবুল্লাহ লড়াই থামানোর আলোচনায় এখনো ফল আসেনি।