বিতর্কিত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সাইবার নিরাপত্তা (বাতিল) অধ্যাদেশ ২০২৪-এর খসড়ায় নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) অন্তর্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক সভায় এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।
তবে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ কর্তৃক যাচাই-বাছাই শেষে আইসিটি বিভাগ খসড়া অধ্যাদেশটি পরিষদের চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য আবার উপস্থাপন করবে।
এ ছাড়া, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি বিভাগের সাচিবিক ও কারিগরি সহায়তায় সাইবার স্পেসে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য উপদেষ্টা পরিষদে একটি স্বতন্ত্র আইনি কাঠামো উপস্থাপন করবে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রেস উপসচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর ও আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
২০২৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর চারটি ধারা জামিন অযোগ্য রেখে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে পাস হয় সাইবার নিরাপত্তা বিল-২০২৩। বহুল সমালোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এতে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। যেখানে ১৪টি ধারা জামিন অযোগ্য ছিল।
২০০৬ সালের আইসিটি আইন, ২০০৯ সালে নাম ঠিক রেখে সংশোধিত হয়। এরপর ২০১৮ সালে নাম বদলে হয় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। এই ধারাবাহিকতাতেই সাইবার নিরাপত্তা আইন ওই আইনের সর্বশেষ রূপ।
এ আইন নিয়ে তখন বিভিন্ন পর্যায় থেকে আপত্তি ওঠে। ব্যাপক বিতর্ক ও সমালোচনা হয়।
সাইবার নিরাপত্তা বিল জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার পর হতাশা প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্র। তারা বলে, দুর্ভাগ্যবশত, সাইবার নিরাপত্তা আইন অনেক দিক দিয়েই এর আগের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো।
২০২৩-এর ১৪ সেপ্টেম্বর বিলটি নিয়ে ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এই প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।
প্রতিক্রিয়ায় বলা হয়, “নতুন আইনটির আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকার অংশীজনদের এটি পর্যালোচনা এবং তাদের মতামত অন্তর্ভুক্ত করার পর্যাপ্ত সুযোগ দেয়নি। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো এই আইনেও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে, জামিন অযোগ্য ধারা বহাল রাখা হয়েছে এবং সমালোচকদের গ্রেফতার, আটক ও কণ্ঠরোধ করতে খুব সহজেই এর অপব্যবহার হতে পারে।”
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ বছরের ৮ অগাস্ট বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন সম্পূর্ণরূপে মেনে চলার জন্য সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল বা উল্লেখযোগ্যভাবে সংশোধন করার আহ্বান জানিয়েছিল।
এখন আইনটি বাতিলের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিল অন্তর্বর্তী সরকার।