যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্প বিজয় অর্জন করেছেন বলে সংবাদ সংস্থাগুলি ঘোষণা করার পর বিশ্বের নেতারা তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
ট্রাম্প তার ডেমোক্রেটিক প্রতিদ্বন্দ্বী কমালা হ্যারিসকে পরাস্ত করেছেন। চার বছর দফতরের বাইরে থাকার পর ঐতিহাসিক রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তন ঘটালেন সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট।
বুধবার সকালে বিশ্বের বহু নেতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক ট্যুইটার) ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। যদিও ট্রাম্পের আগের দফায় তার অনিশ্চিত পররাষ্ট্র নীতি--“আমেরিকা ফার্স্ট”--যুক্তরাষ্ট্রের বহু মিত্র ও শত্রুর সঙ্গে সম্পর্ক জটিল করে তুলেছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের মধ্যে প্রথম যারা ট্রাম্পকে সমর্থনের বার্তা পাঠিয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি ট্রাম্পের “ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনে”র প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন “ইসরায়েল ও আমেরিকার মহান জোটকে শক্তিশালী করবে” এই প্রত্যাবর্তন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেন্সকি, যিনি রাশিয়ার আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আরও বেশি যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সমর্থনের আহ্বান জানিয়েছেন, ইতিবাচক কথা বলেছেন। তার কথায়, বৈশ্বিক বিষয়ে “শক্তির মাধ্যমে শান্তি” প্রতিষ্ঠায় ট্রাম্পের দায়বদ্ধতা ও অঙ্গীকার রয়েছে।
জেলেন্সকি বলেছেন, “এটা সেই নীতি যা ইউক্রেনে কার্যত ন্যায্য শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে। আমি আশাবাদী, আমরা সম্মিলিতভাবে একে কার্যকর করব।”
নেটোর প্রধান ট্রাম্পকে পাঠানো শুভেচ্ছাবার্তায় একই রকম মন্তব্য করেছেন। উল্লেখ্য, ইউরোপের প্রতিরক্ষা বিষয়ে পর্যাপ্ত যত্ন না নেওয়ার জন্য ট্রাম্প এই পশ্চিমা সামরিক জোটকে দীর্ঘদিন ধরে সমালোচনা করেছেন।
নেটোর মহাসচিব মার্ক রুট্টে বলেছেন, “আমাদের জোটকে শক্তিশালী রাখতে তার নেতৃত্ব আবার চাবিকাঠি হয়ে উঠবে। শক্তির মাধ্যমে, #নেটোর মাধ্যমে শান্তি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে আমি তার সঙ্গে কাজ করার জন্য মুখিয়ে রয়েছি।”
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ দ্রুত শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেছেন, তিনি “একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত যেমনটা আমরা চার বছর করেছি…আপনার ও আমার প্রত্যয় নিয়ে।”
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কির স্টারমার বলেছেন, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও কর্মপ্রচেষ্টার যৌথ মূল্যবোধ রক্ষা করতে তার সরকার “কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে” পাশে রয়েছে।
স্টারমার বলেছেন, “প্রবৃদ্ধি ও নিরাপত্তা থেকে উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি, আমি জানি, আগামী বছরগুলিতে আটলান্টিকের উভয় দিকে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্ক সমৃদ্ধ হতে থাকবে।”
ইউরোপীয় ইউনিয়ন কমিশনের প্রেসিডেন্ট আরসালা ভন ডের লেন বলেছেন, তিনি ট্রাম্পকে “উষ্ণ শুভেচ্ছা” জানাচ্ছেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে “প্রকৃত অংশীদারিত্ব”কে প্রশংসা করেছেন।
হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান ট্রাম্পের একজন রক্ষণশীল মিত্র। তিনি ট্রাম্পের এই বিজয়কে “যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রত্যাবর্তন” বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, বিশ্বের জন্য এটা “অত্যন্ত জরুরি বিজয়।”
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তবে, সাবেক রুশ প্রেসিডেন্ট ডিমিট্রি মেদভেদেভ আপাতভাবে হ্যারিসের পরাজয়ে খুশি হয়েছেন। তিনি বলেছেন, “কমালা শেষ…তাকে সংক্রামক হাসি হাসতে দাও।”
এশিয়ার নেতারাও শুভেচ্ছাবার্তা পাঠাতে শুরু করেছেন।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ বলেছেন, “অস্ট্রেলিয়ান ও আমেরিকানরা দারুণ বন্ধু ও প্রকৃত মিত্র।”
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ট্রাম্পকে “আন্তরিক শুভেচ্ছা’ জানিয়েছেন এবং তিনি ট্রাম্পকে বন্ধু বলে সম্বোধন করেছেন।
মোদি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ককে “আরও মজবুত করতে আমাদের জোটকে পুনরায় পর্যালোচনা করার দিকে আমি তাকিয়ে রয়েছি যেমনটা আগের দফার সাফল্যে আপনি গড়ে তুলেছিলেন।”
ফিলিপাইনসের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়র এক বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করেছেন যে ওয়াশিংটন ও ম্যানিলার “অনড় জোট ভাল কিছুর চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে যা এই অঞ্চল ও প্যাসিফিকের উভয় দিকে সমৃদ্ধি ও মৈত্রীর পথকে উজ্জ্বল করবে।”