চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে আফগানিস্তানের তালিবানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তীব্র হয়েছে যে, তারা নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে “লিঙ্গভিত্তিক” বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। এরই মধ্যে তালিবান নেতারা তাদের ইসলামি শাসনের পক্ষে আত্মপক্ষ সমর্থন করেছেন।
তালিবানের রাজনীতি বিষয়ক উপ-প্রধানমন্ত্রী মৌলবি আব্দুল কবীর আফগান টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জোর দিয়ে বলেছেন, “পরিস্থিতিকে বিদেশে যেভাবে তুলে ধরা হচ্ছে ও অপপ্রচার করা হচ্ছে বিষয়টি তেমন নয়।” সাক্ষাৎকারটি শুক্রবার সম্প্রচার করা হয়েছে।
২০২১ সালে তালিবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা পুনর্দখল করে। তারপর জনজীবন থেকে ধাপে ধাপে নারীদের বহিষ্কার করতে তারা প্রচারাভিযান চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ জন্য তালিবানকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে উদ্যোগ নিয়েছে জার্মানি, কানাডা, নেদারল্যান্ডস ও অস্ট্রেলিয়া। প্রায় দুই ডজন দেশ যৌথভাবে এই চারটি দেশকে সমর্থন করার পর কবীরের মন্তব্য সামনে আসে।
আফগানিস্তানের ডি ফ্যাক্টো শাসকরা ইসলামি আইন, যা শরিয়া নামে পরিচিত, তার এক কঠোর ব্যাখ্যাকে চাপিয়ে দিয়েছে দেশের জনগণের উপর। এই শরিয়া আইনের মধ্যে রয়েছে মেয়েদের মাধ্যমিক শিক্ষা নিষিদ্ধ করা, অধিকাংশ কর্মক্ষেত্র থেকে আফগান নারীদের বাদ দেওয়া, প্রকাশ্যে তাদের উচ্চস্বরে কথা না বলা এবং মুখ ও শরীর ঢেকে রাখা।
মেয়েদের জন্য মাধ্যমিক স্কুল পুনরায় খোলা হবে কিনা জিজ্ঞেস করা হলে কবীর বলেন, “ষষ্ঠ শ্রেণির পর ও বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের শিক্ষা বর্তমানে স্থগিত করা হয়েছে। ইসলামিক আমিরাত তাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি; মন্ত্রিসভাও এমন কোনও নীতিকে অনুমোদন দেয়নি।”
তিনি বলেন, তালিবান সরকার স্বাস্থ্য, অভিবাসন, শিক্ষা, পাসপোর্ট ও অন্যান্য দফতরে ৮৫ হাজার নারীকে নিয়োগ দিয়েছে। কবীর আরও বলেছেন, “কাবুলে নারী পরিচালকের অধীনে একাধিক হাসপাতাল পরিচালিত হচ্ছে।”
হেগ শহরে অবস্থিত আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) তালিবানের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করতে চাপ দিচ্ছে চারটি দেশ। এই দেশগুলিকে সমর্থন করছে স্পেন, সুইডেন, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, চিলি, ক্রোয়েশিয়া, ফিনল্যান্ড, হন্ডুরাস, আয়ারল্যান্ড, আইসল্যান্ড, লাটভিয়া, লুক্সেমবার্গ, মালাউই, মরক্কো, মলডোভা ও রোমানিয়ার মতো বহু দেশ।
যুক্তরাষ্ট্র আইসিজের সদস্য নয়।
বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে দেয়া এক যৌথ বিবৃতিতে এই দেশগুলি নারীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করার বিষয়ে আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলিকে মর্যাদা দিতে তালিবানকে আহ্বান জানিয়েছে।
চলতি সপ্তাহের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, নারীদের প্রতি তালিবান যে আচরণ করছে তার সঙ্গে “সাম্প্রতিক ইতিহাসে নিপীড়নের মারাত্মক কিছু ব্যবস্থার” তুলনা করা যেতে পারে।