অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে থানার ভেতরে পুলিশের হাতে একজন হত্যা


ফাইল ফটোঃ পাকিস্তানের লাহোরে ধর্ম অবমাননার সন্দেহে আটক এক মহিলাকে তাদের হাতে তুলে দেবার দাবীতে এক ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সমর্থকরা থানার বাইরে বিক্ষোভ করছে, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩।
ফাইল ফটোঃ পাকিস্তানের লাহোরে ধর্ম অবমাননার সন্দেহে আটক এক মহিলাকে তাদের হাতে তুলে দেবার দাবীতে এক ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সমর্থকরা থানার বাইরে বিক্ষোভ করছে, ১৭ এপ্রিল, ২০২৩।

পাকিস্তানে স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কুয়েটার এক থানার ভেতরে একজন পুলিশ বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) ধর্ম অবমাননার অভিযোগে আটক এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করেছে।

নিহত পুরুষকে সায়েদ খান বলে শনাক্ত করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, খানকে আগের দিন বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে ছিনিয়ে নেয়ার পর আটক করা হয়। লোকজন দাবী করে, তিনি ইসলামের নবী মোহাম্মাদ (সা:) কে অপমান করেছেন।

পুলিশ কর্মকর্তা মোহাম্মাদ খুররাম জানান, হত্যায় জড়িত পুলিশ অফিসারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। খুররাম বিস্তারিত কিছু জানাননি।

পাকিস্তানে পুলিশ হেফাজতে আটক ব্যক্তি হত্যার ঘটনা বিরল। তবে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ – কোন কোন সময় শুধু গুজব – প্রায়ই ছড়ানো হয়, যা দাঙ্গা বাধিয়ে দেয় এবং গণপিটুনি আর হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত গড়ায়।

পাকিস্তানের বিতর্কিত ব্লাসফেমি আইন অনুযায়ী, ইসলাম বা ইসলামের পবিত্র ব্যক্তিদের অপমান করার জন্য দোষী সাব্যস্ত হলে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত দেয়া হতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ ব্লাসফেমির দায়ে কারো মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে নাই।

স্থানীয় লোকজন দাবী করে, খান – যাকে বৃহস্পতিবার হত্যা করা হয় – নবী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন এবং তারা তাঁকে ধাওয়া করে। খান গ্রেফতার হবার পর বিক্ষুব্ধ লোকজন থানা ঘেরাও করে। তারা পুলিশকে বলে খানকে তাদের হাতে তুলে দিতে যাতে তারা তাঁকে হত্যা করতে পারে।

মাদিয়ানে আক্রমণকারীরা থানায় আগুন দেয় এবং পুলিশের যানবাহন পুড়িয়ে দেয়। ফাইল ফটোঃ ২১ জুন, ২০২৪।
মাদিয়ানে আক্রমণকারীরা থানায় আগুন দেয় এবং পুলিশের যানবাহন পুড়িয়ে দেয়। ফাইল ফটোঃ ২১ জুন, ২০২৪।

এক পর্যায়ে বুধবার, পুলিশ স্টেশন লক্ষ্য করে একজন একটি গ্রেনেড ছুঁড়ে মারে। ইসলামপন্থী একদল বিক্ষোভকারী খানের শাস্তি দাবী করে শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরোধ করে। পুলিশ জনতাকে শান্ত করার পর তারা সেখান থেকে চলে যায়।

ক্রিশ্চিয়ানদের উপর হামলা

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে সন্দেহভাজনদের উপর হামলা বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে।

জুন মাসে, বিক্ষুব্ধ জনতা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর মাদিয়ানের পুলিশ স্টেশনে ঢুকে আটক এক ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ কোরানের অবমাননা করেছেন। আক্রমণকারীরা থানায় আগুন দেয় এবং পুলিশের যানবাহন পুড়িয়ে দেয়।

হত্যাকাণ্ডের শিকার লোকটি ছিলেন একজন পর্যটক, যিনি শহরের একটি হোটেলে থাকছিলেন। স্থানীয় লোকজন তাঁর উপর চরাও হয়ে ব্লাসফেমির অভিযোগ আনে।

গত বছর, পাঞ্জাব প্রদেশে একদল বিক্ষুব্ধ মানুষ কয়েকটি গির্জা এবং ক্রিশ্চিয়ানদের বারি-ঘরে হামলা চালায়। তারা দাবী করে, একজন স্থানীয় ক্রিশ্চিয়ান এবং তার বন্ধুকে তারা দেখেছে কোরানের পাতা নষ্ট করতে।

পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে একজন ক্রিশ্চিয়ানকে দোষী সাব্যস্ত করার প্রতিবাদে সংখ্যালঘুদের বিক্ষোভ। ফটোঃ ২ জুলাই, ২০২৪।
পাকিস্তানে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে একজন ক্রিশ্চিয়ানকে দোষী সাব্যস্ত করার প্রতিবাদে সংখ্যালঘুদের বিক্ষোভ। ফটোঃ ২ জুলাই, ২০২৪।

জারানওয়ালা জেলার এই ঘটনায় দেশব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠে, কিন্তু ক্রিশ্চিয়ানরা বলছেন, এই সহিংসতার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের এখনো বিচারে আনা হয় নাই।

একজন পুলিশ অফিসার ২০১১ সালে পাঞ্জাব প্রদেশের এক প্রাক্তন গভর্নরের বিরুদ্ধে ব্লাসফেমির অভিযোগ এনে তাঁকে হত্যা করে। সেই হত্যাকারী অফিসার, মুমতাজ কাদরিকে পরে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে ফাঁসি দেয়া হয়।

তবে, ফাঁসির পর কাদরির প্রতি সমর্থন বাড়তে থাকে এবং সামরিক শহর রাওয়ালপিন্ডিতে তার জানাজায় হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়। আজও পাঞ্জাবের অনেক মানুষ তাকে শহিদ হিসেবে গণ্য করে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় পাকিস্তানের রক্ষণশীল শহর কুয়েটা উত্তেজনাপূর্ণ বালুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী, যেখানে প্রায় প্রত্যেক দিন জঙ্গি আক্রমণ ঘটে। বালুচিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা কয়েক দশক ধরে ইসলামাবাদ সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে আসছে।

XS
SM
MD
LG