অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

হ্যারিস আর ট্রাম্প প্রথম তিক্ত বিতর্কে বিপরীতমুখী চিন্তা-ভাবনা তুলে ধরেন


যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাস শহরে মানুষ বড় স্ক্রিনে কমালা হ্যারিস আর ডলান্ড ট্রাম্প এর বিতর্ক দেখছেন। ফটোঃ ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।
যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাস শহরে মানুষ বড় স্ক্রিনে কমালা হ্যারিস আর ডলান্ড ট্রাম্প এর বিতর্ক দেখছেন। ফটোঃ ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।

রাজনীতি আর ব্যক্তিত্ব নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে কমালা হ্যারিস আর ডলান্ড ট্রাম্প মঙ্গলবার রাতে তাদের প্রথম টেলিভিশন ডিবেটে দেশের জন্য তাদের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে এটাই সম্ভবত শেষ বিতর্ক, যেটা দুই প্রার্থীর জন্যই এই প্রচারণায় বড় সুযোগ।

এই বিতর্ক আমেরিকানদেরকে দুই পক্ষের প্রচারণার দিকে গভীর নজর দেয়ার সুযোগ দিয়েছে। গত জুনের টেলিভিশন বিতর্কের পর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রতিযোগিতা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হবার পর নির্বাচনী প্রচারণা নাটকীয় ভাবে বদলে গেছে।

এই বিতর্ক ছিল প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ট্রাম্পের সপ্তম টেলিভিশন ডিবেট, এবং তৃতীয়বার তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াচ্ছেন। হ্যারিসের জন্য এটা ছিল প্রথম ডিবেট, এবং ভোটারদের কাছে নিজের চিন্তা-ভাবনা তুলে ধরার সম্ভবত সবচেয়ে ভাল সুযোগ।

বিতর্ক শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরে নির্বাচনের প্রথম ব্যালট পেপার বুধবার ডাক যোগে আলাবামা রাজ্যে পাঠানো হবে। নির্বাচন হবে ৫ নভেম্বর।

ডেমোক্র্যাটিক ভাইস প্রেসিডেন্ট শুরুতেই প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর বক্তৃতাবাজীর বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন, বিশেষ করে গর্ভপাতের অধিকার সীমিত করতে রিপাবলিকান দলের প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে।

বিতর্কের শুরুতে ডনাল্ড ট্রাম্প এবং কমালা হ্যারিস করমর্দন করেন। ফটোঃ ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।
বিতর্কের শুরুতে ডনাল্ড ট্রাম্প এবং কমালা হ্যারিস করমর্দন করেন। ফটোঃ ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।

অভিবাসী বহিষ্কার

ট্রাম্প চেষ্টা করেন হ্যারিসকে বাইডেনের সাথে এক করে দেখাতে, এবং প্রশ্ন করেন তিনি কেন ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার নিজস্ব প্রস্তাব বাস্তবায়ন করার জন্য পদক্ষেপ নেননি। ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসনের জন্য হ্যারিসকে দায়ী করেন।

প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বলেন, অভিবাসীরা “আফ্রিকান বংশোদ্ভূত আমেরিকানদের চাকরি দখল করছে।” ট্রাম্প যখন প্রমাণ না দেখিয়ে দাবী করেন অভিবাসীরা ওহাইও রাজ্যে বিড়াল এবং কুকুর খেয়েছে, হ্যারিস উত্তর দেন, “উগ্রতা কাকে বলে!”

রিপাবলিকান প্রার্থী পুনরায় লক্ষ লক্ষ অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করার অঙ্গীকার করেন এবং হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন যে, হ্যারিসের নীতি যুক্তরাষ্ট্রকে ভেনেজুয়েলায় পরিণত করবে।

দেশ কোথায় আছে এবং নির্বাচিত হলে তারা জাতিকে কোথায় নিয়ে যাবে, সেবিষয়ে দুই প্রার্থী তাদের বিপরীত ভাবনা তুলে ধরেন। হ্যারিস মধ্যবিত্তর জন্য অ্যায়কর কমানোর প্রতিশ্রুতি দেন এবং বলেন তিনি কেন্দ্রীয়ভাবে গর্ভপাতের অধিকার ফিরিয়ে আনবেন, যেটা সুপ্রিম কোর্ট দু’বছর আগে বাতিল করেছিল।

ট্রাম্প বলেন, তাঁর প্রস্তাবিত আমদানি শুল্ক মিত্রদের হাতে যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যে ঠকবে না। তিনি বলেন, তিনি দ্রুত রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান ঘটাবেন, এমনকি ইউক্রেন রনবাঙ্গনে জয়লাভ না করা সত্ত্বেও।

বিতর্কের এক মুহূর্তে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ফটোঃ ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।
বিতর্কের এক মুহূর্তে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। ফটোঃ ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের যুদ্ধে ইউক্রেনের জয় যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে কি না, এই প্রশ্ন ট্রাম্প বার বার এড়িয়ে যান। হ্যারিস বলেন যে, এই কারণেই নেটো জোটে আমেরিকার মিত্ররা ট্রাম্প ক্ষমতায় না থাকায় স্বস্তিতে আছে। বাইডেন প্রশাসন রাশিয়ার‍ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সাহায্য করার জন্য শত শত কোটি ডলার পাঠিয়েছে।

প্রার্থীরা একটি ছোট, নীল আলোয় আলোকিত অ্যামফিথিয়েটারে আসেন, যেটাকে একটি টেলিভিশন স্টুডিওতে রূপান্তরিত করা হয়। সেখানে কোন দর্শক ছিল না, অর্থাৎ কোন হাততালি বা দুয়োধ্বনি ছিল না। এই অন্তরঙ্গ পরিবেশ বিতর্কের তিক্ততার সাথে মিলছিল না।

ট্রাম্প যখন কথা বলছিলেন, হ্যারিস ব্যাঙ্গত্মকভাবে মাথা নাড়াচ্ছিলেন বা তাঁর গালে হাত রেখে তাকিয়ে ছিলেন। ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট প্রার্থীর দিকে তাকাচ্ছিলেন না। তিনি তাঁর সুপরিচিত আক্রমণাত্মক বক্তব্যগুলোর দিকেই মনোযোগ দিচ্ছিলেন।

ট্রাম্প ২০২১ সালে হোয়াইট হাউস ছেড়ে দেবার পর দেশের অর্থনীতির অবস্থা নিয়ে হ্যারিস তাঁর তীব্র সমালোচনা করেন। কোভিড-১৯ দেশের অর্থনীতি বিধ্বস্ত করেছিল। হ্যারিস দেশের গণতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য ট্রাম্পের সমালোচনা করেন, বিশেষ করে ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দেয়ার চেষ্টার জন্য।

ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস বক্তব্য রাখছেন। ফটোঃ ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।
ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস বক্তব্য রাখছেন। ফটোঃ ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।

গর্ভপাত বিতর্ক

এই নির্বাচনে ট্রাম্পের সবচেয়ে বড় ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় হচ্ছে গর্ভপাত, এবং হ্যারিস জাতীয় পর্যায়ে গর্ভপাতের অধিকার বাতিলের জন্য ট্রাম্পেকে দায়ী করেন। ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকার সময় যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টে তিনজন রক্ষণশীল বিচারপতি নিয়োগ করেন যাদের ভোটে গর্ভপাতের আইন বাতিল করা হয়।

হ্যারিস অভিযোগ করেন, ট্রাম্প নির্বাচিত হলে তিনি জাতীয় পর্যায়ে গর্ভপাত নিষিদ্ধ করবেন। ট্রাম্প সেই অভিযোগকে “মিথ্যা” বলে অভিহিত করে বলেন, “আমি কোন নিষেধাজ্ঞায় সই করবো না, এবং নিষেধাজ্ঞায় সই করার কোন কারণ নাই।” তিনি বলেন গর্ভপাতের বিষয় প্রতিটি রাজ্যের হাতে রেখে দেয়া উচিত।

বিতর্ক অনুষ্ঠান শুরু হবার আগে হ্যারিস ট্রাম্পের দিকে যান এবং নিজের পরিচয় দেন। “কমালা হ্যারিস”, তিনি বলেন এবং তাঁর হাত ট্রাম্পের দিকে এগিয়ে দেন। ট্রাম্প তাঁর গ্রহণ করেন এবং ২০১৬ সালের পর প্রথমবার টেলিভিশন বিতর্কে করমর্দন করা হয়।

বিতর্কের এক মুহূর্তে দুই প্রার্থী। ফটোঃ ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।
বিতর্কের এক মুহূর্তে দুই প্রার্থী। ফটোঃ ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪।

হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা

সম্ভবত লাখ লাখ আমেরিকান এই দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মধ্যকার লড়াই দেখবেন। হতে পারে এটি প্রচারণার একমাত্র বিতর্ক। আনুষ্ঠানিক নির্বাচনের আট সপ্তাহ আগে এই অনুষ্ঠানটি হচ্ছে। তবে দেশের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে আগাম ভোট শুরু হওয়ার মাত্র কয়েকদিন আগে এটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

জাতীয় জরিপে দেখা যাচ্ছে, হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলছে; যা অল্প সংখ্যক ভোটার যারা ইতোমধ্যে তাদের সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, তাদের জন্য সেরাটা দেয়া আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। এখন দেখার বিষয় হলো, ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে পুনর্নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ট্রাম্প এবার হোয়াইট হাউসে ফেরেন নাকি বাইডেনের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হ্যারিস প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হন।

রবিবার প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমস-সিয়েনা কলেজের এক জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্প জাতীয়ভাবে ৪৮-৪৭ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছেন। তবে এতে দেখা গেছে, তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্য উইসকনসিন, মিশিগান এবং পেনসিলভানিয়ায় হ্যারিস এগিয়ে আছেন, অন্যদিকে অন্য চারটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য অ্যারিজোনা, জর্জিয়া, নেভাডা এবং নর্থ ক্যারোলাইনায় দুই পক্ষের ড্র হয়েছে।

মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক কোচ অ্যারন ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “মঙ্গলবার রাতের বিতর্ক সর্বকালের সবচেয়ে প্রত্যাশিত এবং প্রভাব বিস্তারকারী প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্কগুলোর মধ্যে একটি। ট্রাম্প একজন অভিজ্ঞ প্রেসিডেনশিয়াল বিতার্কিক কিন্তু মঞ্চে বিরোধীদের বিরুদ্ধে তার বিতর্কিত মন্তব্য করার ইতিহাস রয়েছে, এর ফলে মূল নীতিগত বিষয়গুলোতে আরও গুরুত্বপূর্ণ জায়গার ওপর আলোকপাত করা কঠিন হতে পারে।”

“হ্যারিস সবেমাত্র জুলাইয়ে দৌড়ে প্রবেশ করেছেন এবং এখনো ভোটার ও ট্রাম্পের প্রচারণা দিয়ে তাকে সংজ্ঞায়িত করা হচ্ছে। তাকে অবশ্যই দেখাতে হবে, তিনি ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় থাকাকালীন এবং সাম্প্রতিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে মামলা চালাতে পারেন।”

গর্ভপাতের অধিকার, মেক্সিকোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে অভিবাসন, যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধের হার এবং ব্যক্তিগত চরিত্রের মতো বিষয়গুলো এবিসি উপস্থাপকরা উত্থাপন করতে পারেন।

XS
SM
MD
LG