বাংলাদেশের কয়েকটি রাজনৈতিক দল প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রীয় সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে "যৌক্তিক সময়সীমার" মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে ।
শনিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলাদা মত বিনিময় সভায় এসব দাবি জানায় দলগুলো।
গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন নিশ্চিত করা, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং স্বৈরাচার ও দুঃশাসন প্রতিরোধে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, প্রশাসন ও বিচার বিভাগসহ সব রাষ্ট্রীয় অঙ্গকে ঢেলে সাজাতে সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন নেতারা।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎকালে সব রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও বিভিন্ন দাবির বিষয়ে পৃথকভাবে লিখিত প্রস্তাব পেশ করে। দলগুলোর শীর্ষ নেতারাও তাদের আলোচনার ফলাফল সম্পর্কে গণমাধ্যমকে জানান।
এরমধ্যে সাতটি ইসলামি দল জানায়, তারা প্রধান উপদেষ্টাকে সতর্ক থাকার এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের আসন্ন দুর্গাপূজায় যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ছয়টি ইসলামী দলের সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা দফায় দফায় মত বিনিময় সভা শুরু করেন।
সভায় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, ধর্ম উপদেষ্টা এ এফ এম খালিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম উপস্থিত ছিলেন।
'সুস্পষ্ট রোডম্যাপের' আহ্বান
খেলাফত মজলিস, নিজামে ইসলাম, হেফাজতে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতারা বেলা ৩টায় যমুনা পৌঁছান এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের সঙ্গে এক ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন।
এরপর বিকেল ৪টায় ইসলামী আন্দোলনের নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), জাতীয়তাবাদী সমন্বয় জোট, ১২ দলীয় জোট, বাংলাদেশ জাসদ, গণফোরাম, জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতারাও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করেন। রাত ৮টা পর্যন্ত এই আলোচনা চলে।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদ বলেন, তারা প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, রাজনৈতিক দলগুলোকে সম্পৃক্ত রাখার একমাত্র উপায় হচ্ছে নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ বা পূর্বাভাস দেওয়া।
তিনি বলেন, ‘এই রোডম্যাপ ছয় মাস বা নয় মাস পর্যন্ত হতে পারে। প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন হওয়ার পরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত বলে আমরা জোর দিয়েছি। নির্বাচন অবশ্যই হতে হবে এবং যত তাড়াতাড়ি নির্বাচন হবে ততই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, রাজনৈতিক দল এবং দেশের জন্য মঙ্গল।’
আহমেদ জোর দিয়ে বলেন, শান্তি, সুশাসন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করার আগে নির্বাচন পরিচালনা করা উচিত নয়। তিনি বলেন, ‘আগে সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। দেশের মানুষের মধ্যে মানবিকতা ফিরিয়ে আনতে হবে।’
রাজনৈতিক দলগুলোকে ব্যস্ত রাখতে সরকার জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচন করতে পারে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ওলি বলেন, তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সতর্ক করে বলেছিলেন যে আগামী দিনে আরও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে জানিয়েছি, তারা এখনও শঙ্কামুক্ত নয়। ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয়... যারা হাসিনার অনুগত ছিল তাদের বরখাস্ত করা হয়নি, তাদের বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু হয়নি। কেবল তাদের এক অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানে স্থানান্তর করা সমস্যার সমাধান করবে না ... তারা দেশের শত্রু, তাদের জেলে ঢোকানো উচিত।’
হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা
ছয় দলের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মামুনুল হক বলেন, 'আমাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আমরা তাকে (ইউনূস) বলেছি যৌক্তিক সময়সীমার মধ্যে প্রয়োজনীয় সংস্কার বাস্তবায়ন করতে এবং নির্বাচন আয়োজনে অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব এড়াতে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা একটি যুক্তিসঙ্গত সময়সীমা গঠনের জন্য একটি সুনির্দিষ্ট সময়সীমার কথা বলিনি। আমরা নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নিয়ে আলোচনা করিনি।’
মামুনুল হক বলেন, বৈঠকে ইসলামি দলগুলো দুর্গাপূজায় মন্দির ও পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা প্রায় তিনশ মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। আমরা অনুরোধ করেছি, নির্বাহী আদেশ ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব এসব মামলা প্রত্যাহার করা হোক।
ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের কারণে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করে।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
তার আগে গত ১২ আগস্ট শাহ আলমের নেতৃত্বে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, সিপিবি, গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, গণতান্ত্রিক বাম জোট ও এনডিএমের সিনিয়র নেতারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।