অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর কেমন আছে বাংলাদেশ, এ নিয়ে কী ভাবছেন দেশের নাগরিকরা, এ বিষয়ে অক্টোবরের ১৩ থেকে ২৭ তারিখ, ভয়েস অফ আমেরিকা দেশব্যাপী একটি জরিপ করে।
এ জরিপটির ফলাফল সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে।
জরিপের ফলাফল নিয়ে অংশীজনদের মন্তব্য ও বিশ্লেষণ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলা।
গোলাম মওলা রনি
রাজনীতিবিদ
এখানে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ভয়েস অফ আমেরিকা যেটা করেছে, সেটা হলো আওয়ামী লীগের এই কর্মকান্ডের সঙ্গে আমাদের ধারণা ছিল ৩০-৩১ বা ৩৫ শতাংশ মানুষ সমর্থন দেবে। কিন্তু এখানে ৬১ শতাংশ লোক পক্ষে আসছে, মানে সরকারের কর্মকান্ডে অসন্তুষ্ট, দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা ভালো না এটা বলছে। এটা সরকারের জন্য সতর্কবার্তা।
ভয়েস অফ আমেরিকা: অন্তর্বতী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে প্রশাসন ও জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি হতে আমরা দেখেছি। কিন্তু, জরিপের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আওয়ামী লীগ সরকারের চেয়ে অন্তর্বতী সরকার ভালো করছে। এ বিষয়টি সম্পর্কে আপনার বিশ্লেষণ জানতে চাচ্ছি?
গোলাম মাওলা রনি: জরিপের ফলাফলটা মোটামুটি ঠিকই আছে। আওয়ামী লীগের যারা কর্মী-সমর্থক, সুবিধাভোগী, তার সঙ্গে যারা ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত তারা তো অবশ্যই অসুখি। এ কারণে এ সরকার যত ভালোই করুক না কেন তাদের ভালো লাগবে না। আওয়ামী লীগের বিপক্ষে যে শক্তি, তারা আবার যেকোনো মূল্যে সরকারের প্রতি সমর্থন রাখতে চায়। এখানে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ভয়েস অফ আমেরিকা যেটা করেছে, সেটা হলো আওয়ামী লীগের এই কর্মকান্ডের সঙ্গে আমাদের ধারণা ছিল ৩০-৩১ বা ৩৫ শতাংশ মানুষ সমর্থন দেবে। কিন্তু এখানে ৬১ শতাংশ লোক পক্ষে আসছে, মানে সরকারের কর্মকান্ডে অসন্তুষ্ট, দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছে, আইনশৃঙ্খলা ভালো না এটা বলছে। এটা সরকারের জন্য সতর্কবার্তা।
এখানে এতো বড় একটা বিপ্লবের পরে একশ দিনের মাথায় সরকারের পক্ষে অন্ততপক্ষে ৮০ শতাংশ জনসমর্থন থাকা দরকার ছিল। ফলে আমার কাছে মনে হয়েছে, এতো দ্রুত যেহেতু জনমত পরিবর্তন হয়েছে, ফলে সরকারকে আরও সতর্ক হতে হবে। জনগণের যে আশা আকাঙ্খা সেটা যদি সরকার ধারণ করতে না পারে তাহলে যারা পরাজিত হয়েছে, অদূর ভবিষ্যতে আবার বিজয়ের বেশে ফিরে আসতে তাদের খুব বেশি বেগ পেতে হবে না।
ভয়েস অফ আমেরিকা: অধিকাংশ উত্তরদাতা অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগ আমলের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো সামাল দিচ্ছে বলে মনে করলেও বর্তমান সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগ আমলের চেয়ে কম নিরাপদ বা একই রকম নিরাপদ বোধ করেন ৪৯ দশমিক ৯ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ আমলেই বেশি নিরাপদ বোধ করতেন বলেছেন ২৩ শতাংশ ও অন্তর্বর্তী সরকার ও আওয়ামী আমলে একই রকম নিরাপদ বোধ করছেন বলে জানিয়েছেন ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ উত্তরদাতা। জরিপের এই ফলগুলোকে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
গোলাম মাওলা রনি: আমি আসলে এই ফলাফলের সঙ্গে ইন পার্সেন্টেজ একমত না। একমত না মানে ডিফার করি। ডিফার করি এই কারণে যে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ প্রকৃত সমস্যাকে আসলে অন্তরদৃষ্টি দিয়ে দেখে না। সে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে, তারপর স্বার্থ থেকে সে যা দেখে সেই জায়গা থেকে সে মূল্যায়ণ করে। বাস্তবতা হলো শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে যেভাবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ছিল, একই সঙ্গে যেভাবে আইনশৃঙ্খলা বহাল ছিল, এটা বর্তমান জামানায় এসে একেবারে রিভার্স হয়ে গেছে।
নতুন একটা জিনিস চালু হয়েছে। হয়তো আগের মতো চুরি-ডাকাতি-গুন্ডামি এগুলো হচ্ছে না, কিন্তু যেভাবে ছিনতাই হচ্ছে, মব জাস্টিস হচ্ছে, যেভাবে পুলিশ বিপদে পড়ছে, যেভাবে যা কিছু হচ্ছে, সেটা আওয়ামী লীগ জমানার চেয়ে খারাপ। শুধু খারাপ না আমি মনে করি এটা আধুনিক সভ্যতার জন্যও খারাপ। এর পরিণতি ভালো হবে না। এখানে টোটাল সিস্টেমটা ব্রেক করেছে।
এ কারণে আমরা অনেকে ভালো আছি, এর কারণ হলো আমাদের কেউ আক্রমণ করেনি। কিন্তু এই মুহুর্তে যদি কেউ আমাকে আক্রমণ করে তাহলে আমি আওয়ামী লীগ জমানায় যত খারাপ ছিল তারচেয়েও খারাপ থাকবো। এই যে সমাজে মব জাস্টিস বাড়ছে, থানা-পুলিশের অ্যাকটিভনেস সেটা, অংশগ্রহন ও সঙ্গে সঙ্গে রেসপন্স করা এবং প্রতিরোধ করা এটা ক্রমবর্ধমান হারে কমছে।
আমার মনে হচ্ছে অগাস্টে ৬ তারিখে পুলিশের যে অ্যাক্টিভিটি ছিল সেটা না বেড়ে বরং কমেছে। তারা আরও বেশি উদাসীন হয়ে গেছে। আরও বেশি কৌশলী হয়ে গেছে, আরও বেশি পলিটিক্স করছে। আমলাতন্ত্রের মধ্যে আওয়ামী লীগ যে চেষ্টাগুলো করেছিল, পুলিশকে রাজনীতিকরণ করা, এখন আবার দেখা যাচ্ছে, পুলিশের মধ্যে বিএনপি জমানায় যারা বঞ্চিত ছিল তারা হঠাৎ করে এতোটা শক্তিশালী হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ জমানায় পুলিশ যে পুলিশ নির্ভর একটা সরকার ছিল, এখন যারা আছে, এবং আগামীতে যারা আসবে তারা এরকম পুলিশ নির্ভর সরকার হতে যাচ্ছে, সেটা সেনবাহিনী থেকে শুরু করে অন্য বাহিনীগুলোর মধ্যে পারস্পারিক একটা মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা তৈরি করছে, যা কিনা সুশাসনের জন্য ভালো জিনিস হবে না।