পাকিস্তানের বিদ্যুৎমন্ত্রী আওয়াইস লেঘারি বলেছেন, পাকিস্তানে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ ও পরিচালনাকারী চীনা বিদ্যুৎ উৎপন্নকারীদের সঙ্গে চুক্তি সংশোধন করা প্রয়োজন।
ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে লেঘারি বলেন, “আমি মনে করি চাইনিজদের সাথে তাদের আইপিপি-এর (বেসরকারি বা ইন্ডেপেন্ডেন্ট বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের) যে শর্তাবলী রয়েছে তা আরেকবার দেখা প্রয়োজন।
এই বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি, যেগুলো মূলত গত এক দশকে স্থাপন করা হয়েছে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্ল্যাকআউট বন্ধ করতে সহায়তা করে। তবে ঐ চুক্তি অনুসারে, যতটুক বিদ্যুৎ ব্যবহার করাই হোক না কেন, পাকিস্তানকে প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরো উৎপাদন ক্ষমতার জন্য টাকা দিতে হয়।
অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারে সহায়তা করতে পারে এমন শিল্প প্রবৃদ্ধিকে উত্সাহিত করতে ব্যর্থতা এবং ট্রান্সমিশনের ক্ষতি কমাতে না পারার কারণে পাকিস্তানকে প্রকল্পের ঋণ পরিশোধের পাশাপাশি অব্যবহৃত এবং অপচয় করা বিদ্যুৎ-এর জন্য বিশাল অংকের বিল দিতে হচ্ছে।
পাকিস্তানে দেশী কোম্পানিগুলো স্বতন্ত্রভাবে যেসব বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে তাদের চুক্তির শর্তাবলীও চীনা পরিচালিত বিদ্যুৎপ্লান্টের অনুরূপ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশি-বিদেশি মালিকানাধীন স্বাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে সার্বিকভাবে অডিট চালাতে পাকিস্তানের প্রচেষ্টা এটাই প্রমাণ করে যে, বেইজিং চায় না শুধুমাত্র তার কোম্পানিগুলোকে সমস্যাযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হোক অথবা তারা চায়না যে শুধু তারাই ইসলামাবাদকে ছাড় দেবে।
চীন সফরের পর সংস্কার
লেঘারি তার সাম্প্রতিক চীন সফরের পরে একটি বিদ্যুৎ খাত সংস্কারের টাস্কফোর্সের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই সংস্কার পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ খাতের লোকসান কমানোর লক্ষ্যে সব স্বতন্ত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অডিট করা।
লেঘারি বলেন, বিদ্যুৎ খাতের ঋণ কমানোর উদ্দেশ্য চীন সরকার ও কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যে তাকে রিপ্রফাইলিং বা পুনরায় ঢেলে করা এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রকে স্থানীয় জ্বালানিতে রূপান্তরের বিষয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা করছে।
"চীনা আইপিপিরা আমাদের সাথে কীভাবে কাজ করছে ঐসব শর্তাবলীর পরিবর্তন করা।বিদ্যুত শুল্ক হ্রাসের ক্ষেত্রে এগুলি আমাদের জন্য উল্লেখযোগ্য সুবিধা দেবে," বিদ্যুৎমন্ত্রী ভোক্তাদের জন্য বিদ্যুতের আকাশছোঁয়া দাম কমানোর জন্য পাকিস্তানের প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করে বলেন।
চীনা বিদ্যুৎকেন্দ্র অপারেটরদের কাছে ইসলামাবাদের ঋণ দেড় হাজার কোটি ডলারের বেশি। পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে অতি প্রয়োজনীয় অর্থায়ন পাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে যাতে তারা ঋণের অর্থ প্রদানের জন্য পুনরায় সময় নির্ধারণ করতে পারে।
লেঘারি এবং অর্থমন্ত্রী মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব বিদ্যুৎ খাতের ঋণ পরিশোধ সহজতর করার বিষয়ে আলোচনা করতে গত মাসের শেষের দিকে বেইজিং গিয়েছিলেন।
স্থানীয় কয়লা ব্যবহার
আইএমএফের সাথে ইসলামাবাদ তিন বছর মেয়াদে ৭০০ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার বিষয়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর কয়েকদিন পর তারা এই সফর করেন। চুক্তিটি এখন ব্যাংকের বোর্ডকে অনুমোদন করতে হবে।
লেঘারি বলেন, আইএমএফের মতো চীনও পাকিস্তানের কাছ থেকে ব্যাপক সংস্কার দেখতে চায়।
চীন এবং আইএমএফ “পুরো অর্থনৈতিক বা বিদ্যুৎ খাতের সংস্কারের দিকে নজর দিতে চাইছে যা আমরা ইতিমধ্যে চিন্তাভাবনা করেছি এবং এর কাজ শুরু করেছি,” লেগারি বলেন। "আমি মনে করি, আমাদের অর্থনৈতিক সংস্কার কর্মকান্ডের উপরে তাদের যত বেশি আস্থা থাকবে আমরা ততই ভালো সাড়া পাব।"
বেইজিং পাকিস্তানের জ্বালানি খাতের ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য ইসলামাবাদের অনুরোধে প্রকাশ্যে কোন সাড়া দেয়নি। তবে পাকিস্তানের দৈনিকপত্রিকা এক্সপ্রেস ট্রিবিউন জানিয়েছে, পাকিস্তানে চীনা মালিকানাধীন তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রকে তারা আমদানি করা কয়লা ব্যবহার করা থেকে স্থানীয় কয়লা ব্যবহারের পর্যায়ে রূপান্তর করতে সম্মত হয়েছে।
পাকিস্তান বিদ্যুৎ উৎপাদনে স্থানীয় কয়লার ব্যবহার শুরু করে বছরে শত শত মিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করার আশা করছে।
'উইন-উইন'
এই পরিবর্তন ব্যাপক ব্যয় সাপেক্ষ হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনা বিনিয়োগকারীরা যদি খনির কার্যক্রম সম্প্রসারণ করতে চায় তবে তারা বীমা প্রিমিয়াম বাড়াবে এবং লভ্যাংশ দাবি করতে পারে যার ফলে পাকিস্তানের সঞ্চয় হ্রাস পাবে।
“সবার জন্য এটা একটি উইন-উইন পরিস্থিতি হতে চলেছে," লেঘারি উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান করে মন্তব্য করেন।” “এটা না হলে মানুষ বিনিয়োগ করবে না, ঋণদাতারা অর্থ দেবে না।”
পাকিস্তানে দূরদূরান্ত থকে স্থানীয় কয়লা বহুদূর পরিবহনের জন্য রাস্তাঘাটের অবকাঠামোর প্রয়োজন হবে এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলিকে পাকিস্তানি কয়লা ব্যবহারে উপযুক্ত করার জন্য প্রযুক্তিগত পরিবর্তন করতে হতে পারে। পাকিস্থানের স্থানীয় কয়লা আমদানি করা কয়লার চেয়ে পরিবেশের জন্য বেশি খারাপ এবং কম কর্মক্ষম।
স্থানীয় কয়লায় রূপান্তরনের বিষয়ে পরিবেশগত উদ্বেগ প্রত্যাখ্যান করে লেঘারি প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক দিক থেকে স্থানীয় কয়লার ব্যবহারে রূপান্তরণ এবং পুনঃপ্রোফাইলিংয়ের সমস্ত দিকগুলিগুলো দেখার পর বিপুল যে সাড়া পাওয়া গিয়েছে তার উপরে জোর দিয়েছেন।
পাকিস্তান অতীতের চুক্তিগুলি পর্যালোচনা করার সময় চীনা বিনিয়োগকারীদের ভয় দেখানোর সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে লেঘারি বলেন যে ইসলামাবাদ বিনিয়োগকারীদের সাথে সুসম্পর্ক রাখে।
তিনি বলেন, “যা কিছু হবে, যার সঙ্গেই হবে, তা হবে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে।"