অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতে চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ বাড়ছে


ভারতের কলকাতায় সরকারি হাসপাতালের ভেতরে এক চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ। ফটোঃ ১৪ আগস্ট, ২০২৪।
ভারতের কলকাতায় সরকারি হাসপাতালের ভেতরে এক চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ। ফটোঃ ১৪ আগস্ট, ২০২৪।

কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে এক চিকিৎসক ধর্ষণ ও হত্যার প্রতিবাদে শুক্রবার ভারতের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ-মিছিলে শামিল হন। তাদের দাবি, ন্যায়বিচার এবং মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে হবে।

নয়াদিল্লিতে সংসদ ভবনের কাছে বিক্ষুব্ধরা সমবেত হয়েছিলেন। তাদের হাতের ব্যানারে আহ্বান জানানো হয়েছে, ওই নারীর ধর্ষণ ও হত্যার জন্য জবাবদিহি করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা--যেখানে এই ঘটনাটি ঘটেছে--ভারতের অন্যান্য শহর যেমন মুম্বাই ও হায়দারাবাদে অনুরূপ বিক্ষোভ-মিছিল দেখা গেছে।

কলকাতার সরকারি আর জি কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সেমিনার হলে ৩১ বছর বয়সী একজন চিকিৎসক-পড়ুয়ার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ৯ আগস্ট বিক্ষোভ শুরু হয় যা সাধারণভাবে শান্তিপূর্ণই রয়েছে।

পরে ময়নাতদন্তে জানা যায় যে, এই নারীকে যৌন হেনস্তা করা হয়েছে। এই অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত সন্দেহে এক পুলিশ ভলিন্টিয়ারকে (সিভিক পুলিশ) আটক করা হয়। নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ, এটা গণধর্ষণের ঘটনা এবং এর সঙ্গে আরও অনেকে জড়িত।

রাজ্য সরকারি কর্মকর্তারা এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেছিলেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ পরে আদালতের নির্দেশের পর কেন্দ্র সরকারি তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে এই মামলার তদন্তভার তুলে দিয়েছে। ঘটনাটি ঘটার পর থেকে পুঞ্জীভূত ক্ষোভ সারা দেশে আলোড়ন তুলেছে এবং নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা রুখতে বিক্ষোভ-মিছিল ছড়িয়ে পড়েছে

এই বিক্ষোভের ফলে হাজার হাজার চিকিৎসক ও প্যারামেডিকসও ভারতের কিছু সরকারি হাসপাতালে ধর্মঘটের ডাক দেন এবং নিরাপদ কাজের পরিবেশের দাবি তোলেন। নারীদের বিরুদ্ধে যৌন সহিংসতা ভারতের এক বড় ও ব্যাপক সমস্যা। জাতীয় ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো’র (এনসিআরবি) বক্তব্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে পুলিশ ৩১৫১৬টি ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে যা ২০২১ সালের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি।

যৌন সহিংসতা ঘিরে সামাজিক কলঙ্কের কারণে ভারতের নারীদের বিরুদ্ধে বহু অপরাধই ধাপাচাপা পড়ে যায় এবং নথিভুক্ত হয় না। পাশাপাশি, পুলিশের প্রতি বিশ্বাসের অভাবও রয়েছে। নারীদের অধিকার বিষয়ক কর্মীরা বলছেন, গ্রামীণ অঞ্চলে এই সমস্যা বিশেষভাবে তীব্র। গ্রামীণ সম্প্রদায় কখনও কখনও যৌন হেনস্তার শিকারদের লজ্জিত করে এবং পরিবারগুলি তাদের সামাজিক অবস্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকে।

চিকিৎসক রিচা গর্গ নয়াদিল্লিতে শুক্রবার বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। তিনি বলেন, তিনি তার কর্মক্ষেত্রে আর নিরাপদ বোধ করেন না।

তাঁর কথায়, “একজন নারী হিসেবে এই ঘটনা আমার রক্তকে উত্তপ্ত করছে। এই অপরাধের মূলচক্রীদের অবিলম্বে খুঁজে বের করতে হবে…আমাদের কর্মক্ষেত্রকে আরও নিরাপদ বানাতে হবে।”

বুধবার রাতে যে হাসপাতালে চিকিৎসক-পড়ুয়াকে হত্যা করা করা হয়েছিল সেই হাসপাতালে হামলা করা হয়। এই হামলার পিছনে কারা রয়েছে পুলিশ এখনও তাদের চিহ্নিত করেনি, তবে তারা জানিয়েছে যে, এখনও পর্যন্ত ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ভারতে চিকিৎসকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন বৃহস্পতিবার বিকালে জরুরি পরিষেবা ছাড়া ২৪ ঘন্টার জন্য “দেশব্যাপী চিকিৎসা পরিষেবা প্রত্যাহারে”র আহ্বান জানিয়েছে। এই ধর্মঘট শুরু হবে শনিবার।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ এক বিবৃতি জারি করে আইএমএ বলেছে, “চিকিৎসক, বিশেষ করে নারীরা পেশার প্রকৃতির কারণে সহিংসতার শিকার হন। হাসপাতাল ও ক্যাম্পাসের মধ্যে ডাক্তারদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের।”

একাধিক রাজনৈতিক দল, বলিউড অভিনেতা, অন্যান্য তারকারা এই অপরাধের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন এবং যারা এমন অপরাধ সংঘটিতে করেছে তাদের কঠোরতম শাস্তির জন্য আহ্বান করেছেন।

ভারতের ৭৮তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, “নারীদের বিরুদ্ধে দানবীয় আচরণের কঠোর ও দ্রুত শাস্তি হওয়া উচিত।”

আর জি করের এই নৃশংস ঘটনা ২০১২ সালে নয়াদিল্লির একটি বাসে ২৩ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থীকে ভয়াবহভাবে গণধর্ষণ করে হত্যার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে অনেককে। নারীর উপর এই হামলার ফলে বিপুল বিক্ষোভ তৈরি হয়েছে (কিছু ক্ষেত্রে এই বিক্ষোভ সহিংস আকার নিয়েছে) এবং এমন অপরাধের জন্য কঠোর শাস্তি দেওয়ার দাবি তুলতে উৎসাহ দেখিয়েছেন বিধায়করা। পাশাপাশি, ধর্ষণ মামলার জন্য ফাস্ট-ট্র্যাক আদালত তৈরির কথাও বলেছেন তারা।

চাপের মুখে পড়ে সরকারও সেই সব ব্যক্তির জন্য মৃত্যদণ্ড চালু করেছে যারা একই অপরাধ বারবার করেছে।

২০১৩ সালে সংশোধিত ধর্ষণ আইন কারও পিছু নেওয়া ও লুকিয়ে দেখাকেও অপরাধমূলক কাজ বলে সাব্যস্ত করেছে এবং ধর্ষণের ক্ষেত্রে অপরাধীর বয়স ১৬ হলেই (আগে ছিল ১৮) তার বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে।

XS
SM
MD
LG