ডনাল্ড ট্রাম্প আগে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসের সঙ্গে বিতর্কে অংশ গ্রহণ করবেন তা থেকে সরে আসবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
একটি সাক্ষাৎকারে তাকে বিতর্ক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জবাবে বলেছেন যে তিনি “সম্ভবত” বিতর্কে অংশ নিবেন তবে তিনি “তা না করার জন্য একটি কারণও দেখাতে পারেন” – এর ফলে কমালার প্রচারণা শিবির তাকে “ভীত” বলে অভিহিত করেছে।
সোমবার রাতে ফক্স নিউজ চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প হ্যারিসের সঙ্গে ডিবেট করবেন কিনা সে বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য বেশ কয়েকবার জানতে চাইলে তার জবাব আগের চেয়ে তিনি বেশ হালকা ভাবেই দেন।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যখন ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী ছিলেন তখন রিপাবলিকান সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাইডেনের সঙ্গে বিতর্ক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ইচ্ছুক ছিলেন, যদিও তিনি কয়েক মাস ধরে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে বাইডেনের প্রেসিডেন্ট হওয়ার মত যে চিন্তাশক্তি বা মনোযোগ প্রয়োজন সেটা নেই।
ট্রাম্প বাইডেনের সঙ্গে ডিবেটে অংশ নিতে রাজী ছিলন কিন্তু বাইডেন নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর পর এবং হ্যারিস ডেমোক্র্যাটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার প্রতিযোগিতায় নামার পর ট্রাম্প বিতর্কের শর্তাবলী নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
এবিসি নিউজ ১০ সেপ্টেম্বর যে বিতর্ক পরিচালনা করবে, তাকে তিনি ভিন্ন নেটওয়ার্কে সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এবং এবিসিকে “ ভুয়া সংবাদ” বলে অভিহিত করেছেন।
গত সপ্তাহে সাংবাদিকদের সঙ্গে ফোনে আলোচনাকালে ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয় যে তিনি অন্তত একবার কমালা হ্যারিসের সঙ্গে বিতর্ক করবেন কিনা। এর জবাবে তিনি বলেছিলেন, “হ্যাঁ, অবশ্যই। আমি চাই” এবং তিনি বলেছিলেন যে বিতর্কে অংশ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
সোমবার, সাক্ষাৎকারের উপস্থাপক লরা ইনগ্রাহাম ট্রাম্পকে বিতর্কে অংশ নেবেন কিনা যে বিষয়ে বারবার চাপ দেন।
ট্রাম্প বলেন, “আমি বিতর্ক করতে চাই। তবে আমি এটাও বলতে পারি যে সবাই জানে আমি কে। এবং মানুষ এখন জানে তিনি কে।”
সবশেষে ট্রাম্প বলেন, “জবাব হচ্ছে হ্যাঁ, আমি সম্ভবত বিতর্কে অংশ নিব।”
তিনি এক মিনিট ধরে বলতে থাকেন যে, রাজ্যগুলিতে আগাম ভোট শুরু হওয়ার আগে যে কোনও বিতর্ক হওয়া প্রয়োজন। এর পরপরই তিনি যোগ করেছিলেন, আমার “জবাব হচ্ছে হ্যাঁ, তবে আমি এটা না করার জন্যও একটি যুক্তি তুলে ধরতে পারি।”
ট্রাম্প আগেও ডিবেট এড়িয়ে গেছেন, যেমন ২০২৪ সালের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাইমারির সবগুলো বিতর্কে। প্রথম দিকে তিনি বিতর্কে অংশ না নিয়ে বলেছেন যে এটা অনুষ্ঠিত হচ্ছে খুব শীঘ্রই এবং তারপরে তা কোথায় অনুষ্ঠিত হবে সে নিয়ে প্রশ্ন করার পরে অবশেষে তিনি পরিষ্কার ভাবে বলেছিলেন যে এই বিতর্কগুলির কোনো একটিতেও তিনি অংশ নেবেন না।
কমালা হ্যারিসের প্রচারণা শিবিরের মুখপাত্র আমার মুসা অভিযোগ করেছেন যে ট্রাম্প তার সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীর সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই এড়িয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
মুসা বলেন, “আজ রাতে প্রশ্নের উত্তর না দেয়া থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, তিনি ভয় পাচ্ছিলেন যে তাকে ভাইস প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে বিতর্কে তার রানিং মেট নারীদের সম্পর্কে যে অদ্ভুতভাবে আক্রমণ করছেন অথবা আমেরিকায় নির্বাচন বন্ধ করা তারই নিজের করা মন্তব্যর পক্ষে সাফাই গাইতে হবে।”
খ্রিস্টান ভোটার আর ট্রাম্প
গত সপ্তাহে রক্ষণশীলদের এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প খ্রিস্টান শ্রোতাদের বলেছিলেন যে, তিনি নির্বাচিত হওয়ার পরে তাদের “আর ভোট দিতে হবে না।” সোমবার রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পের সাক্ষাৎকারে সেই মন্তব্যটি ব্যাখ্যা করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
তিনি দাবি করেন যে বেশি সংখ্যক খ্রিস্টান ভোট দেন না, তাদের তিনি বলেন, “কেবলমাত্র এই সময়ে” ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে “আপনাদের আর ভোট দিতে হবে না।”
তিনি বলেন, “চার বছরের মধ্যে এটা ঠিক হয়ে যাবে, সব ঠিক হয়ে যাবে। তোমাদের আর ভোট দিতে হবে না, আমার সকল বিউটিফুল খ্রিস্টান।
এরই কয়েক মুহুর্ত পরেই তিনি আরও বলেন, “চার বছর পর আপনাদের আর ভোট দিতে হবে না। আমারা এত ভাল করে এটা ঠিক করব যে আপনাদেরকে আর ভোট দিতে হবে না।
ট্রাম্পের কর্তৃত্ববাদী ভাষা ব্যবহারের ধরণ ও আচরণ এবং তার আগের মন্তব্যগুলো নিয়ে ডেমোক্র্যাট এবং অন্যান্যরা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন। ট্রাম্প বলেছিলেন যে তিনি কেবল “প্রথম দিন” স্বৈরশাসক হবেন এবং ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরে তিনি ফলাফল মেনে নেন নি এবং ফলাফল পাল্টে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
ট্রাম্পের প্রচারণা এবং সমর্থকরা তার ঐসব মন্তব্যের জন্য নানা ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন এবং ইনগ্রাহাম ঐসব মন্তব্য ব্যাখ্যা করার জন্য তাকে খোঁচাচ্ছিলেন।
“তারা ভোট দেয় না, এবং আমি তাদের এটি ব্যাখ্যা করেছি। আপনারা কখনোই ভোট দেবেন না'। কেবল এবার ভোট দিন। আমি আপনাদের কাউন্টিকে শক্তিশালী করব। আপনাকে আর ভোট দিতে হবে না। আপনাদের ভোট আমার দরকার হবে না, ”বলেন ট্রাম্প।
ইনগ্রাহাম জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে তিনি কি বোঝাতে চেয়েছেন যে খ্রিস্টানদের তাকে ভোট দেওয়ার দরকার নেই কারণ তিনি কেবলমাত্র চার বছরের জন্য ক্ষমতায় থাকবেন।
ট্রাম্প খ্রিস্টান এবং বন্দুক মালিকদের ভোটের হার সম্পর্কে কথা বলে তার উত্তর পুনরায় দিতে শুরু করেছিলেন কিন্তু ইনগ্রাহাম বাধা দিয়ে আবার শুরু করেন।
“ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না। ভোট হবে, ৫ নভেম্বর ভোট দিতে হবে। এরপর আর ভোট নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমি পরোয়া করি না কারণ আমরা ঠিক করতে যাচ্ছি - দেশ ঠিক হয়ে যাবে এবং আমাদের আর আপনার ভোটের প্রয়োজন হবে না। কারণ সত্যি কথা বলতে কি আমাদের চরম ভালবাসা থাকবে। আপনিরা যদি আর কখনও ভোট দিতে না চান, তাহলে সেটাও ঠিক আছে,” বলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্প গত মাসে খ্রিস্টানদের আরেকটি অনুষ্ঠানে একই ধরণের মন্তব্য করেছিলেন, যেখানে তিনি খ্রিস্টানদের ভোটের হার নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন এবং তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।
ট্রাম্প বলেন, “চার বছর পর আপনাদের আর ভোট দিতে হবে না, ঠিক আছে? চার বছর পর ভোট দেবেন না। আমি পরোয়া করি না।”