যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন শনিবার একটি শীর্ষ সম্মেলনে দক্ষিণ চীন সাগরে বেইজিংয়ের "ক্রমবর্ধমান এবং বেআইনি পদক্ষেপের" সমালোচনা করেন। সেখানে তার রুশ প্রতিপক্ষ বলেন, ওয়াশিংটন কোরীয় উপদ্বীপের জন্য মিত্র সোওলের সাথে পারমাণবিক প্রতিরোধের পরিকল্পনার মাধ্যমে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
ব্লিংকেন দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা চুক্তির মিত্র ফিলিপাইনের বিরুদ্ধে চীনের উপকূলরক্ষীদের বৈরি পদক্ষেপের জন্য এককভাবে চীনকে চিহ্নিত করেন। তবে ম্যানিলা শনিবারের শুরুতে একটি বিরোধপূর্ণ চর এলাকায় সৈন্যদের জন্য চীন দ্বারা নির্বিঘ্নে পুনঃসরবরাহ মিশন শেষ করার পরে তিনি দুই দেশের কূটনীতির জন্যও প্রশংসা করেন।
ব্লিংকেন শনিবার নিরাপত্তা-কেন্দ্রিক আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামে বড় শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে রাশিয়া, ভারত, চীন, অস্ট্রেলিয়া, জাপান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতিকদের সাথে যোগ দেন। এই সম্মেলনে গাজা ও ইউক্রেনের সংঘাত, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনা নিয়ে আলোচনা চলে।
দ্বিতীয় টমাস চর এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর একটি নোঙ্গর করা প্রাক্তন জাহাজে ফিলিপাইনের ছোট সেনাবাহিনীর উপস্থিতি বছরের পর বছর ধরে চীনকে ক্ষুব্ধ করেছে। দেশটি ফিলিপাইনের সাথে তার পুনঃসরবরাহ মিশন নিয়ে বারবার সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে, যার ফলে আঞ্চলিক উদ্বেগ বেড়েছে যা যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
এই মিশনগুলি কীভাবে পরিচালনা করবে তা নিয়ে এই সপ্তাহে উভয় পক্ষ একটি ব্যবস্থায় পৌঁছেছে।
ব্লিংকেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সাথে সমাবেশের পাশাপাশি ২০২৩ সালের জুন থেকে তাদের ষষ্ঠ বৈঠকে আলোচনায় বসেন। সেই সময়ে ব্লিংকেনের বেইজিং সফর বিশ্বের দুটি বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে টান টান সম্পর্কের উন্নতিকে চিহ্নিত করে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ব্লিংকেন ওয়াংয়ের সাথে তাইওয়ান এবং তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে-এর উদ্বোধনীর সময় একটি কৃত্রিম অবরোধ সৃষ্টি সহ বেইজিংয়ের সাম্প্রতিক "উস্কানিমূলক পদক্ষেপ" সম্পর্কে উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা করেন।
কর্মকর্তাটি বলেন, তারা সামরিক সম্পর্কের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ব্লিংকেন রাশিয়ার প্রতিরক্ষা শিল্প ঘাঁটির জন্য বেইজিংয়ের সমর্থন নিয়েও আলোচনা করেন এবং চীনা সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আরও পদক্ষেপের বিষয়ে সতর্ক করেন। তবে তিনি ওয়াংয়ের কাছ থেকে কোনও প্রতিশ্রুতি পাননি।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৈঠকের বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো বিবৃতি দেয়নি।
কোরিয়ান উপদ্বীপ
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ মূল অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তর কোরিয়ার হুমকির বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত প্রতিরোধ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কোরীয় উপদ্বীপে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক সম্পদের তৎপরতা সংক্রান্ত নির্দেশিকা আঞ্চলিক নিরাপত্তা উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আরআইএ ল্যাভরভকে উদ্ধৃত করে বলে, "এখন পর্যন্ত আমরা এর অর্থ কী তার ব্যাখ্যা তো পাইওনি, তবে কোন সন্দেহ নেই যে এতে আরও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। "
ইন্টারফ্যাক্স অনুসারে, তিনি বলেন, "তারা সক্রিয়ভাবে কোরীয় উপদ্বীপে তাদের উপস্থিতি সামরিকীকরণ করার মাধ্যমে উপদ্বীপের চারপাশের পরিবেশকে উদ্দীপ্ত করছে এবং সামরিক পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুত থাকার জন্য খোলাখুলিভাবে অনুশীলন পরিচালনা করছে।"
গাজা যুদ্ধ
ব্লিংকেন এর আগে বলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি অর্জন এবং আরও স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তার পথ খুঁজে পেতে যুক্তরাষ্ট্র "প্রতিদিন নিবিড়ভাবে কাজ করেছে"।
তার মন্তব্য বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদির মন্তব্যের পরা তিনি এই মন্তব্য করলেন। রেতনো বলেছিলেন যে জরুরিভাবে স্থিতিশীল শান্তির প্রয়োজন।
রেতনো আরও বলেন, আন্তর্জাতিক আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ করা উচিত। তিনি গাজায় ইসরায়েলের আক্রমণের বিষয়ে দুটি আন্তর্জাতিক আদালতের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে পরোক্ষ মন্তব্য করেন। ।
রেতনো বলেন, "গাজার ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতিকে আমরা চোখ বন্ধ করে দেখে যেতে পারি না।"
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ যারা যোদ্ধা এবং অ-যোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য করে না, তাদের মতে, ইসরায়েল আক্রমণ শুরু করার পর থেকে গাজায় যুদ্ধে ৩৯,০০০ লোকেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা অনুমান করেন যে যুদ্ধের শুরুতে আনুমানিক ২৫,০০০ জনেরও বেশি সদস্যের মধ্যে হামাস এবং ইসলামিক জিহাদ সহ জঙ্গি গোষ্ঠীর ১৪০০০ যোদ্ধাকে হত্যা বা বন্দী করা হয়েছে। যুদ্ধটি শুরু হয় যখন হামাসের নেতৃত্বাধীন জঙ্গিরা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে আক্রমণ করে।ইসরায়েলি সংখ্যা অনুসারে এতে ১২০০ জন নিহত এবং ২৫০ জন বন্দী হন।
মিয়ানমার যুদ্ধ
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওং মিয়ানমারের সামরিক শাসকদের একটি ভিন্ন পথ নিতে এবং তীব্র হয়ে ওঠা গৃহযুদ্ধের অবসানের আহ্বান জানান। তিনি দেশটির জেনারেলদেরকে আসিয়ানের শান্তি পরিকল্পনা অনুসরণ করার অঙ্গীকার মেনে চলার জন্য চাপ দেন।
এই সংঘাতটি মিয়ানমারের সুসজ্জিত সামরিক বাহিনীকে জাতিগোষ্ঠীগত সংখ্যালঘু বিদ্রোহী গোষ্ঠীর একটি শিথিল জোট এবং একটি সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়েছে যা ক্রমেই জোরালো হয়ে চলেছে এবং জেনারেলদের শাসন করার ক্ষমতা এখন পরীক্ষার সম্মুখীন।