যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিসের ডেমোক্রেটিক দলের প্রেসিডেন্সিয়াল টিকিটের শীর্ষে উল্কার গতিতে উত্থান বহু ভারতীয়-আমেরিকানকে উজ্জীবিত করেছে। এই জনগোষ্ঠীর দ্রুত বর্ধনশীল রাজনৈতিক প্রোফাইল বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তাদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা ও উদ্দীপনা ছড়িয়ে পড়েছে।
হ্যারিস ভারতীয় এবং জামাইকান বংশোদ্ভূত। রবিবার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ময়দান থেকে সরে দাঁড়ানোর পর হ্যারিসই হতে চলেছেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী প্রেসিডেন্সিয়াল প্রার্থী। তবে এই উৎসাহ কেবলমাত্র তার মনোনয়নকে ঘিরে নয়।
ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতাদর্শ ও অবস্থান নির্বিশেষে বহু ইন্দো-আমেরিকান জাতীয় পাদপ্রদীপের তলায় অন্যান্য উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্বকে দেখে সমানভাবে উল্লসিত। এই ব্যক্তিত্বদের মধ্যে রয়েছেন রিপাবলিকান ভাইস প্রেসিডেন্ট নমিনি জে ডি ভ্যান্সের স্ত্রী ঊষা ভ্যান্স, সাবেক প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী নিকি হ্যালি ও ভিভেক রামাসোয়ামি।
এএপিআই ভিক্টরি ফান্ডের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি শাকের নরসিমহান বলেন, “আমি খুব গর্বিত যে, প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারতীয়-আমেরিকানরা জায়গা করে নিচ্ছেন।” উল্লেখ্য, এই সংগঠন একটি সুপার প্যাক। এশীয় আমেরিকান ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ থেকে আসা ভোটারদের সক্রিয় করা ও ডেমোক্রেটিক প্রার্থীদের সমর্থন করার দিকে এই সংগঠনের মূল মনোযোগ।
রাজনৈতিক অঙ্গনের নানা দিকে এই উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নিউ জার্সি রিপাবলিকান পার্টির দক্ষিণ এশিয়া জোটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্রীতি পাণ্ড্য প্যাটেল বলেন, ঊষা ভ্যান্সের দেশের প্রথম ভারতীয়-আমেরিকান সেকেন্ড লেডি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় এই জনগোষ্ঠী উচ্ছ্বসিত।
পাণ্ড্য-প্যাটেল বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের জনগোষ্ঠী কার্যত এখানে রয়েছে এবং তারা নজরে পড়ছে—এটা দেখাই একটা গর্বের মুহূর্ত। আমি মনে করি, এটি অবশ্যই ভারতীয় জনগোষ্ঠীকে ভীষণ উত্তেজিত করছে।”
ভারতীয়-আমেরিকানরা দ্রুত বর্ধনশীল অভিবাসী সম্প্রদায়গুলির মধ্যে অন্যতম। ১৯৯০-এর দশকের শুরু থেকে তাদের সংখ্যা দশগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
বর্তমানে প্রায় ৫০ লক্ষ ভারতীয় বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেন। সে দেশে তারাই বৃহত্তম এশীয় জাতিগোষ্ঠী এবং মেক্সিকানদের পরে তারা দ্বিতীয় বৃহত্তম অভিবাসী সম্প্রদায়।
অন্যান্য এশীয় গোষ্ঠীর চেয়ে ভারতীয়-আমেরিকানরা ডেমোক্রেটিকদের বেশি ভোট দিলেও এদের প্রায় ২০ শতাংশ নিজেদের রিপাবলিকান হিসেবে পরিচয় দেন।
ভারতীয় আমেরিকানদের প্রথাগতভাবে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর তুলনায় রাজনৈতিকভাবে কম সক্রিয় হিসেবে দেখা হয়। তবে, এই সম্প্রদায়ের মধ্যে রাজনৈতিক সক্রিয়তা বাড়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
এশীয় আমেরিকানদের (তাদের মধ্যে ভারতীয় বংশোদ্ভূতরাও ছিলেন) নিয়ে সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৯০ শতাংশ নভেম্বর নির্বাচনে ভোট দিতে ইচ্ছুক। যদিও ৪২ শতাংশকে কোনও দল বা প্রার্থী যোগাযোগ করতে পারেননি।
কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিসের ২০২০ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ভারতীয় আমেরিকানদের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের নথিভুক্ত ভোটারদের ১ শতাংশেরও কম। তবে, এদের এক-তৃতীয়াংশ বসবাস করেন জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা ও পেনসিলভেনিয়ার মতো প্রদেশে যেখানে রাজনৈতিক লড়াই হাড্ডাহাড্ডি।
জনগোষ্ঠীর কাছে যাবার প্রচেষ্টা বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও হ্যারিস ও ট্রাম্পের প্রচারণা বিভাগের মুখপাত্ররা কোনও জবাব দেননি।
উভয় প্রচারণা বিভাগ তৃণমূল স্তরে সংগঠনের মাধ্যমে ভোটারদের সক্রিয় করতে উদ্যোগী।