পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের সামরিক বাহিনী পরিচালিত প্রধান গুপ্তচর সংস্থাকে নাগরিকদের ফোন যোগাযোগে আড়ি পাতার অনুমতি দিয়েছে। এই পদক্ষেপ সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ এবং নাগরিক স্বাধীনতার সমর্থকদের ভেতর ক্ষোভ ও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের জোট সরকার বিতর্কিত পদক্ষেপের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স বা আইএসআই-কে প্রদত্ত নতুন ক্ষমতা কর্তৃপক্ষকে “আইনের অপব্যবহারকারী যে কাউকে” নজরে রাখতে সক্ষম করবে।
জুলাইয়ের ৮ তারিখের নির্দেশনায় বলা হয়, “জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এবং যেকোনো অপরাধের আশঙ্কায় … কল এবং মেসেজে আড়ি পেতে বা কোনো টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে কলগুলো ট্রেস করতে কেন্দ্রীয় সরকার আইএসআই কর্মকর্তাদের অনুমোদন দিতে পেরে আনন্দিত”
সমালোচকরা এই নোটিসকে অসাংবিধানিক এবং নাগরিক স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ বলে সমালোচনা করেন এবং বলেন, এটি আইএসআইকে জাতীয় রাজনীতিতে তাদের কথিত গোপন ভূমিকা আরও জোরদার করতে সক্ষম করবে।
আইএসআই-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ
পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ রাজনীতিবিদরা দীর্ঘদিন ধরে আইএসআইয়ের বিরুদ্ধে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর নির্দেশে নির্বাচিত সরকারকে প্রভাবিত বা খাটো করার অভিযোগ করে আসছেন। সামরিক বাহিনী বেশ কয়েকটি অভ্যুত্থান ঘটিয়েছে এবং স্বাধীন পাকিস্তানের ইতিহাসের প্রায় অর্ধেক সময় ধরে দেশ শাসন করেছে।
কারাবন্দী সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরোধী দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির সাথে যুক্ত আইনপ্রণেতারা আইএসআইকে ফোনে আড়ি পাতার অনুমতি দেয়ার তীব্র বিরোধিতা করেন এবং এর বিরুদ্ধে আইনগত চ্যালেঞ্জ করার প্রতিশ্রুতি দেন।
পাকিস্তানের স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন বা এইচআরসিপি বুধবার এক বিবৃতিতে বলে, গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের যে কোনো নাগরিকের ফোন কলে ইচ্ছামত আড়ি পাতার অনুমতি বা ‘কার্ট ব্লাঞ্চ’ দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তে তারা ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’।
পর্যবেক্ষক সংস্থাটি এই পদক্ষেপকে “নাগরিকদের সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষিত স্বাধীনতা, মর্যাদা এবং গোপনীয়তার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন” বলে নিন্দা জানান।
দেশটির সর্বোচ্চ নির্বাচিত আইনজীবীদের সংগঠন পাকিস্তান বার কাউন্সিলের বেশ কয়েকজন সদস্য এক যৌথ বিবৃতিতে সরকারের নোটিসকে আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতার প্রতি ‘সুস্পষ্ট অবজ্ঞা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেন।