অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

গাজার মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে ইসরাইলি বিমান হামলা


পশ্চিম তীরের দুমায় এক নারী তার বাড়ির ধ্বংসস্তূপের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, ৩ জুলাই ২০২৪।
পশ্চিম তীরের দুমায় এক নারী তার বাড়ির ধ্বংসস্তূপের উপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, ৩ জুলাই ২০২৪।

ইসরায়েলি বাহিনী বুধবার গাজার মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েলের সর্বশেষ উচ্ছেদের আদেশের পর ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকরা আশ্রয়ের জন্য নতুন করে নিরাপদ এলাকা খুঁজছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা হামাস যোদ্ধাদের লক্ষ্য করে দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় বিমান হামলা চালিয়েছে। তাছাড়া, গাজার উত্তরাঞ্চলের শুজাইয়া জেলায় স্থল অভিযান চালানো হয়েছে।

জাতিসংঘ মঙ্গলবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলের একটি বড় অংশ খালি করার ইসরায়েলি আদেশে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, হাজার হাজার বেসামরিক লোককে প্রভাবিত করছে এই পদক্ষেপ ।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক সাংবাদিকদের বলেন, 'গাজার প্রায় ১১৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা খালি করার গতকালের আদেশ গাজার প্রায় এক তৃতীয়াংশ এলাকা খালি করা।”

জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ'র হিসাব অনুযায়ী, এই আদেশ জারির সময় ওই এলাকায় আনুমানিক প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের বসবাস ছিল।

তিনি বলেন, সরিয়ে নেবার নতুন আদেশটির কারণে সেখানে ৯০টিরও বেশি স্কুলসহ আরও চারটি মেডিকেল পয়েন্ট প্রভাবিত হবে। এগুলোর অধিকাংশই বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আবাসস্থল ছিল।

গাজার দক্ষিণাঞ্চল খান ইউনিসে ইসরায়েলি বাহিনীর মঙ্গলবারের হামলায় কমপক্ষে আটজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যকর্মকর্তারা।

ইসরায়েল বারবারই ফিলিস্তিনিদের গাজার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সরে যাবার নির্দেশ দিয়েছে। ইসরায়েল বলছে, আক্রমণের আগে বেসামরিক লোকদের রক্ষা করার জন্যই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। লড়াইয়ের পাশাপাশি একাধিকবার নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে পালাতে হয়েছে ফিলিস্তিনি নাগরিকদের।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে সেখানকার বাসিন্দা আহমাদ নাজ্জার বলেন, “লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার আদেশের পর আতঙ্ক ও চরম উদ্বেগ বিরাজ করছে। তাছাড়া, বাসিন্দাদের একটি বড় অংশ বাস্তুচ্যুতির শিকার হয়েছে।“

গাজায় জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা ও পুনর্গঠন বিষয়ক জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী সিগ্রিড কাগ নিউইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকে বলেন, মে মাসের প্রথম দিকে ইসরাইল রাফায় সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে গাজা জুড়ে ত্রাণ প্রবেশ ও বিতরণের পরিমাণ “উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। নাগরিক শৃঙ্খলা প্রায় পুরোপুরি ভেঙে পড়ার ফলে অরাজকতা ও অপরাধের পরিবেশ তৈরি হয়েছে।”

মঙ্গলবার গাজা যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের প্রতিবাদে পদত্যাগকারী কিছু কর্মকর্তা এক যৌথ লিখিত বক্তব্যে বলেছেন,বাইডেন প্রশাসনের নীতি “ব্যর্থ এবং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরুপ”। তাছাড়া, ইসরাইলের প্রতি আমেরিকার কূটনৈতিক সমর্থন এবং অব্যাহত অস্ত্র সরবরাহও গাজার জনগনকে অনাহারে রাখা এবং হত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের অনস্বীকার্য সম্পৃক্ততাই প্রমান করে বলে তারা বলেন।

গত ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলা চালালে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরু হয়। হামাসের হামলায় ইসরায়েলের ১,২০০ মানুষ নিহত এবং ২৫০ জনেরও বেশি জিম্মি হয় যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।

অপরদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৩৮ হাজার বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। তাছাড়া গাজার বেশিরভাগ অঞ্চলই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৯৭ সালে হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে। ইসরাইল, মিশর, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করে।

ভয়েস অব আমেরিকার জাতিসংঘ সংবাদদাতা মার্গারেট বশির এই প্রতিবেদনে অবদান রেখেছেন। এপি, এএফপি এবং রয়টার্স থেকে এই প্রতিবেদনের কিছু তথ্য পাওয়া গেছে।

XS
SM
MD
LG