যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাতে তাঁদের বিতর্কের শুরুতেই তর্কাতর্কীতে জড়ান। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি, পররাষ্ট্রনীতি, গর্ভপাতের অধিকার এবং মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে অভিবাসীদের যুক্তরাষ্ট্রে আসা নিয়ে পাল্টা পালটি বক্তব্য দেন।
“আমরা একটা তৃতীয় বিশ্বের দেশের মত, এবং এটা লজ্জার বিষয়,” ট্রাম্প আটলান্টায় সিএনএন-এর হেডকোয়ার্টারের মঞ্চ থেকে দেশব্যাপী টেলিভিশন দর্শকদের বলেন।
“আমাদের আর সম্মান দেখানো হয় না,” ট্রাম্প বলেন, বাইডেনকে দোষারোপ করে। “তারা মনে করে আমরা বোকা।”
বাইডেন এক পর্যায়ে ট্রাম্পের দিকে তাকিয়ে পাল্টা উত্তর দেন। “আমেরিকার ইতিহাসে এই ছিল সবচেয়ে খারাপ প্রেসিডেন্ট। আমেরিকার গণতন্ত্র সম্পর্কে এই লোকের কোন ধারনা নাই।”
নভেম্বর ৫ তারিখের নির্বাচনের প্রায় পাঁচ মাস আগে এই বাইডেন-ট্রাম্প বিতর্ক যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের ইতিহাসে সবচেয়ে আগে হয়েছে। এটা ২০২০ সালে তাদের বিতর্কের পুনরাবৃত্তিও হবে, যেটা হয়েছিল নির্বাচনের দু’মাস আগে। সেই নির্বাচনে বাইডেন ট্রাম্পকে পরাজিত করে তাঁর পুন নির্বাচনের চেষ্টা ব্যর্থ করেছিলেন।
বৃহস্পতিবারের অনুষ্ঠান ছিল প্রথম ঘটনা যখন দু’জন প্রেসিডেন্ট একে অপরের সাথে বিতর্ক করে, এবং ২০২০ সালের অক্টোবর মাসের পর বাইডেন আর ট্রাম্প প্রথমবার একই ঘরে অবস্থান নেবেন।
ট্রাম্প ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে বাইডেনের অভিষেকে যোগ দেন নি, এবং তারপর থেকে তাঁরা একে অপরের সাথে বাক-বিতণ্ডায় জরিয়ে আছেন – যেমন ছিলেন বৃহস্পতিবার রাতে।
সাম্প্রতিক দিনগুলিতে, ট্রাম্প বিতর্কের জন্য বাইডেনের প্রস্তুতি নিয়ে কটাক্ষ করেছেন এবং বলেছেন এই মুখোমুখি বিতর্ক সামাল দিতে বাইডেনের ওষুধ নিতে হতে পারে।
ট্রাম্প সম্প্রতি ফিলাডেলফিয়ায় এক সভায় বলেন, “এই মুহূর্তে, ক্রুকেড জো এইটি লগ ক্যাবিনে গেছেন পড়াশোনার জন্য,” এবং বলেই তাঁর হাত দিয়ে প্রশ্নবোধক চিহ্ন আঁকেন। “তিনি এখন ঘুমাচ্ছেন, কারণ তারা তাকে আরও ভাল এবং শক্তিশালী করে তুলতে চায়।”
ট্রাম্প অনেক দিন ধরে দাবী করছেন, বাইডেন “দুটি বাক্য ঠিকমত বলতে পারে না।” তবে বাইডেন যে ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী থুড়থুড়ে বুড়ো না হয়ে আরও শক্তিশালী হতে পারেন, সম্প্রতি ট্রাম্প তাঁর সমর্থকদের সেই সম্ভাবনা সম্পর্কে সজাগ করার চেষ্টা করছেন।
“আমি ধরে নিচ্ছি তিনি একজন সুযোগ্য তার্কিক হবেন,” এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন। “আমি তাঁকে ছোট করে দেখতে চাই না।”
মে মাসের মাঝা মাঝি সময়, বৃহস্পতিবারের বিতর্ক নিয়ে চুক্তি হবার ঠিক আগে বাইডেন বলেন, “ডনাল্ড ট্রাম্প আমার কাছে ২০২০ সালে দুটি বিতর্কে পরাজিত হন। তারপর থেকে তিনি আর কোন বিতর্কে চেহারা দেখাচ্ছেন না।”
বছরের আগের দিকে, নিজ দল রিপাবলিকান পার্টির প্রাইমারি নির্বাচনের সময় ট্রাম্প তাঁর প্রতিপক্ষর সাথে কয়েকটি বিতর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেন।
“এখন তিনি ভাব দেখাচ্ছেন যেন আমার সাথে আবার বিতর্ক করতে চান,” বাইডেন বলেন। “ঠিক আছে, দেখাও তুমি কী পারো।”
বিতর্কের সময় কোন স্টুডিও দর্শক ছিল না, এবং দুই প্রার্থীর সঙ্গী ছিলেন মূলত তাঁদের কয়েকজন উপদেষ্টা এবং স্টাফ। ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেন স্টুডিওতে ছিলেন। ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া সেখানে ছিলেন না। তবে বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান যারা ট্রাম্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হতে ইচ্ছুক, তাঁরা বিতর্ক স্থলে চলে আসেন।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের ভাগ্নি মেরি ট্রাম্প, যার সাথে ট্রাম্পের সম্পর্ক ভাল না, তিনিও আটলান্টায় ছিলেন। তিনি বিতর্কের পর সিএনএনের ‘স্পিন রুম’-এ বাইডেনের পক্ষে কথা বলার পরিকল্পনা করছিলেন। স্পিন রুমে বসে প্রার্থীদের উপদেষ্টারা তাঁদের প্রার্থীরা কেমন করলেন, তা নিয়ে বক্তব্য রাখবেন।
এ’বছরের নির্বাচনে দুই প্রার্থী যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেন এখন ৮১, এবং রিপাবলিকান ট্রাম্প ৭৮। আগামী বছর জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে পরিচালিত হবে, সে ব্যাপারে দুই প্রার্থীর ভিন্ন মতামত রয়েছে এবং একটি সামরিক পরাশক্তি হিসেবে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের কী ধরনের ভূমিকা পালন করা উচিত। বাইডেন ইউরোপীয় মিত্রদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখার পক্ষপাতী, আর ট্রাম্প আমেরিকার জন্য আলাদা থাকার নীতি প্রচার করেন।
বাইডেন ইউক্রেনে রাশিয়ার ২০২২ সালের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলোকে একত্রিত করেছেন। অন্যদিকে, ট্রাম্প কিয়েভ-এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন অব্যাহত রাখা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন তিনি দ্রুত এই সংঘাতের অবসান ঘটাবেন। তবে তিনি সেটা কীভাবে করবেন, তার ব্যাখ্যা দেন নি।
দুই প্রার্থীই হামাস জঙ্গিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছেন। তবে বাইডেন সম্প্রতি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যেভাবে গাজায় যুদ্ধ পরিচালনা করছেন তার সমালোচনা করেছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, ৩৭,০০০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। বাইডেন যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দিচ্ছেন কিন্তু ট্রাম্প বলছেন ইসরায়েলের উচিত হামাসকে হারানোর জন্য “যা করার দরকার তা করো।”
জাতীয় পর্যায়ে জনমত জরীপে দেখা যাচ্ছে বাইডেন এবং ট্রাম্প প্রায় সমান সমান।
যুক্তরাষ্ট্রে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, লক্ষ লক্ষ আমেরিকান ইতোমধ্যেই দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বয়স্ক দুজন প্রার্থীর ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন।
অনেক ভোটার তাদের দুজনকেই অপছন্দ করেন – বর্তমান আমেরিকান রাজনীতির চলতি ভাষায় যাদের “ ডাবল হেটারস” বলা হয়। তারা খুব গড়িমসি করে দু’জনের একজনকে ভোট দেবেন, অথবা তৃতীয় দলের পক্ষে বা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে ভোট দেবেন। অথবা কাউকেই ভোট দেবেন না।
রাজনৈতিক ভাবে স্বতন্ত্র যারা এখনো সিদ্ধান্ত নেন নি, বা হয়তো যারা নির্বাচনী প্রচারণায় তেমন মনোযোগ দেন নি, তাদের জন্য এই বিতর্ক অনুষ্ঠান দিক-নির্দেশনা করতে পারে। সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখে দ্বিতীয় বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে।