বাংলাদেশের সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায় আপাতত বহাল রেখেছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত।
কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে, ঢাকা, চট্টগ্রাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিলের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে।
আপিল বিভাগের রায়
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায় আপাতত বহাল রেখেছে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। এছাড়া, এ বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ৪ জুলাই দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।
রবিবার (৯ জুন) আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।
এর আগে, সকালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনর্বহালের হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রবিবার বিক্ষোভ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ২ হাজার শিক্ষার্থী।
বেলা ১১টায় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের গেট থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গিয়ে শেষ হয়।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহিম হতাশা প্রকাশ করে বলেন, “সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তনের সিদ্ধান্ত মেধা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।” দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহবান জানান ফাহিম
ইনস্টিটিউট অফ মডার্ন ল্যাঙ্গুয়েজেস এর ফরাসি ভাষার শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার একটি সুষ্ঠু প্রক্রিয়া অনুসরণের আহবান জানান। তিনি বলেন, “যেখানে সব চাকরি প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ থাকবে, তেমন প্রক্রিয়া প্রয়োজন।”
“আমি নারী হলেও নারী কোটা চাই না। কারণ কোটা পদ্ধতি মেধা পদ্ধতিকে সমর্থন করে না;” যোগ করেন তামান্না।
শিক্ষার্থী রিফাত রশিদ সমান অধিকারের সাংবিধানিক নিশ্চয়তার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত সংবিধানের মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। “এ ধরনের বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত এদেশের শিক্ষার্থীরা কখনোই মেনে নেবে না;” তিনি আরো বলেন।
আরেক আন্দোলনকারী বলেন, কোটা পদ্ধতি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং এতে কম যোগ্যরাই লাভবান হবে।
সমাবেশ শেষে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে হাইকোর্টের রায় প্রত্যাহার এবং ২০১৮ সালের নীতিমালা পুনঃপ্রবর্তনের আহবান জানিয়ে একটি স্মারকলিপি পেশ করে।
বরিশালে মহাসড়ক অবরোধ
কোটা পুনর্বহালে উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতিবাদ ও চাকরিতে ‘বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল করে মেধাভিত্তিক নিয়োগের দাবিতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা।
এ অবরোধের কারণে সড়কের দুই পাশে শতশত যানবাহন আটকে পড়ে। রবিবার (৯ জুন) বেলা সোয়া ১১টা থেকে সোয়া ১২টা পর্যন্ত ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী এ অবরোধ করে। অবরোধ শেষে মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে তারা। এরপর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে তারা।
শিক্ষার্থীরা জানান, কোনো শিক্ষার্থীর সঙ্গে বৈষম্য মেনে নেব না। “আমরা আদিবাসী ও প্রতিবন্ধী কোটা বাদে সব বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবি জানাচ্ছি;” বলেন তারা।
একইসঙ্গে সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করে কোটাপদ্ধতি পুনর্বহাল-সংক্রান্ত রায়ের প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং আরো বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
হাইকোর্টের রায়
গত ৫ জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে, মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্য কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল থেকে যায়। মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করেন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এবং এ রায় দেন।
বাংলাদেশ জুড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে, ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার।
পরিপত্রে বলা হয়, নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। এই সব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা বাতিল করা হলো। পরে, এ পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী।