যুক্তরাষ্ট্র সময় শুক্রবার রাতে পরিচিত প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ভালোভাবে যাত্রা শুরুর উপর জোর দিয়েছেন।
শান্ত ডালাসে একটি প্রাক-ম্যাচ মিডিয়া ইন্টার্যাকশনের সময় বলেছেন, "আমরা খুব বেশি চিন্তা করছি না।" “অনেক দূরে না তাকিয়ে বর্তমানের মধ্যে থাকাই আমাদের জন্য ভালো। আমাদের ভালো প্রস্তুতি আছে এবং এখন আমরা আমাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ব্যাপারে আশাবাদী।”
এদিকে, নিউইয়র্কে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে তাদের উদ্বোধনী ম্যাচে হারার পর একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে বাংলাদেশের মুখোমুখি হচ্ছে শ্রীলঙ্কা। নবনির্মিত স্টেডিয়ামের চ্যালেঞ্জিং পিচে তারা ৭৭ রানে অলআউট হয়। জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা ১৭তম ওভারে জয় নিশ্চিত করে।
বাংলাদেশ যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তাদের সাম্প্রতিক সিরিজ পরাজয়কে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যাবার লক্ষ্য নিয়ে নামছে, সেখানে শ্রীলঙ্কা তাদের বিশ্বকাপের আশা বাঁচিয়ে রাখতে একটি জয় নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।
বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত দুটি দেশের মধ্যে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজে শ্রীলঙ্কা বিজয়ী হয়েছিল, যা ডালাস ম্যাচে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তুলতে পারে।
বাংলাদেশ বা শ্রীলঙ্কার মধ্যে যারা ডালাসের ম্যাচে জয় পাবে, তারা বিশ্বকাপ যাত্রায় একধাপ এগিয়ে যাবে।
শেষ সিরিজে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যান কুশল মেন্ডিস এবং নুয়ান থুসারার খেলা আলাদা করে চোখে পড়েছে, থুসারা একটি স্মরণীয় হ্যাটট্রিক করেছেন যা বহুদিন বাংলাদেশী ভক্তদের মনে থাকবে।
আসন্ন ম্যাচের গুরুত্ব স্বীকার করছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। শান্ত বলেন, “এই ম্যাচটি দুই দলের জন্যই চ্যালেঞ্জিং হতে চলেছে।"
জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে হতাশাজনক হোম সিরিজ এবং প্রস্তুতি ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বিরুদ্ধে দুর্বল পারফরম্যান্স সত্ত্বেও, বাংলাদেশ নতুন শুরুর ব্যাপারে আশাবাদী।
"অতীতে যা ঘটেছে তা এখন অতীত," শান্ত বলেছেন জোর দিয়ে। “এটা সত্য যে সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের ব্যাটাররা ভালো করতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু আগামীকাল একটি ভিন্ন দিন, এবং একটি ভিন্ন ম্যাচ। সবাই ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার চেষ্টা করেছে।...আমরা বিশ্বকাপে মাঠে নামতে প্রস্তুত।”
এদিকে শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশের বিপক্ষে তাদের সাম্প্রতিক সাফল্য থেকে শক্তি অর্জন করে ম্যাচটির ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং কোচ থিলিনা কান্দাম্বি ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে এরই প্রতিধ্বনি করেছেন।
তিনি বলেন, “...আমি মনে করি সাম্প্রতিক অতীতে আমরা বাংলাদেশের বিপক্ষে ভালো ক্রিকেট খেলেছি...সুতরাং, আমাদের সেই আত্মবিশ্বাস এবং গতি এই খেলার মধ্যে থাকবে।"
সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ডালাস যুক্তরাষ্ট্রে ক্রিকেটের একটি প্রধান কেন্দ্র হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। এটি মেজর লীগ ক্রিকেটের উদ্বোধনী আসরের আয়োজন করে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় দলটি বর্তমানে একই ভেন্যুতে বিশ্ব মঞ্চে তাদের দক্ষতা প্রমাণ করেছে। কানাডা এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দুটি ম্যাচ জিতে পরের পর্বে যাওয়ার জন্য তারা এগিয়ে আছে।
ক্রিকেট যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষদের কাছে এখনও তেমন জনপ্রিয় নয়। স্টেডিয়ামে ক্রিকেট দর্শকদের মধ্যে উপমহাদেশীয় বংশোদ্ভূত মানুষদের ভিড়ই চোখে পড়ে।
বাংলাদেশি-আমেরিকান, জামিলুর রহমান গত ৮ বছর ধরে ফ্লোরিডায় বাস করছেন। ডালাসের শ্রীলংকার বিরুদ্ধে খেলা তিনি টেলিভিশনেই দেখবেন। তবে, নিউ ইয়র্কে গিয়ে বাংলাদেশের পরের খেলাটি দেখার ইচ্ছা আছে তার।
বাংলাদেশ দল সম্পর্কে বললেন, "পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকি না কেন, বাংলাদেশকেই সমর্থন করবো। আশা করি বাংলাদেশ ভালো ফল করবে।"
এই বিশ্বকাপের আয়োজক হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে বললেন, "আমি মনে করি, এখানে ক্রিকেট এর কারণে জনপ্রিয় হবে, আর যুক্তরাষ্ট্র তো খুবই ভালো করছে এখনও পর্যন্ত এই বিশ্বকাপে।"
শ্রীলংকান বংশোদ্ভূত ক্রিকেটপ্রেমী উমাঙ্গা আবেসেকেরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকাপের আয়োজক হওয়াটা ক্রিকেটের জন্য একটা "দুর্দান্ত ব্যাপার।"
ভার্জিনিয়াবাসী আবেসেকেরা বলেন, "আমি মনে করি ইউ.এস.এ ভবিষ্যতে একটি শক্তি হতে চলেছে কারণ এটির বাজার আছে, ডলার আছে। আমি মনে করি এটি একটি বিশাল ব্যাপার যে যুক্তরাষ্ট্র হোস্টিং করছে এবং এখানে একটা বড় সম্ভাবনার জায়গা আমি দেখতে পাচ্ছি।"
মাঠে বসে কয়েকটি খেলা দেখার পরিকল্পনা আছে আবেসেকেরার। সঙ্গে একটি, দুটিতে ক্রিকেটভক্ত ছেলেকেও সঙ্গে নেবেন। টিকেটের দাম সম্পর্কে বললেন, "আমি মনে করি দামের তুলনায় ১০% বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে, তবে খারাপ নয়।"
বাংলাদেশি ক্রিকেটভক্ত জামিলুর মনে করেন, "(টিকেটের) দাম আয়ত্ত্বের মধ্যেই আছে।"
দুজনের কেউই বাংলাদেশ বা শ্রীলংকা নেই এমন কোন ম্যাচের টিকেট কেনেননি বলে জানিয়েছেন ভয়েস অফ আমেরিকাকে।
বাংলাদেশ ও শ্রীলংকার খেলায় নিজ নিজ দেশের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তারা। দুজনই চাইছেন নিজের দল সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাক।