বাংলাদেশের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৩০ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে (২০২৩-২৪) যা ছিল ৩৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে বাজেট উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, উৎপাদনের অন্যতম প্রধান খাত বিদ্যুৎ।
তিনি বলেন, “আমাদের সরকার বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি ও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে এবং উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।”
তিনি বলেন, সরকার শতভাগ জনগোষ্ঠীকে বিদ্যুতের আওতায় এনেছে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছে।
মাহমুদ আলী আরও জানান, গ্রিডের আধুনিকায়ন করে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন ২৪ হাজার সার্কিট কিলোমিটারে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া, সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সমন্বিত মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ইন্টিগ্রেটেড এনার্জি অ্যান্ড পাওয়ার মাস্টার প্ল্যান (আইইপিএমপি) প্রণয়ন করেছে।
অর্থমন্ত্রী আরও উল্লেখ করেন, ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল মাত্র ৪ হাজার ৯৪২ মেগাওয়াট, যা বর্তমানে ৩০ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে (ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ)। বর্তমানে ৯ হাজার ১৪৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে।
বিদ্যুৎ উৎপাদনের দীর্ঘমেয়াদি মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা কর্মসূচির আওতায় ২০৪১ সালের মধ্যে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে প্রায় ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
মাহমুদ আলী বলেন, ভারত থেকে গ্রিড আন্তঃসংযোগের মাধ্যমে ১ হাজার ১৬০ মেগাওয়াট এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাংলাদেশের জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।
আরই ও প্রি-পেইড মিটারের জন্য বিশেষ বরাদ্দ
২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট ও টেকসই বাংলাদেশ বিনির্মাণে নবায়নযোগ্য জ্বালানির গুরুত্ব বিবেচনা করে এর উন্নয়ন ও ব্যবহারকে উৎসাহিত করতে ২০২৪২৫ অর্থবছরের বাজেটে ১০০ কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালনের পাশাপাশি এ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বাড়াতে স্মার্ট প্রি-পেইড/স্মার্ট মিটার স্থাপন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ
বাংলাদেশে নিরাপদ ও পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে আমাদের গ্যাসের উৎপাদন ছিল দৈনিক ১ হাজার ৭৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট, যা বর্তমানে বেড়ে প্রায় ২ হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত হয়েছে।
এ ছাড়া, প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে।
দেশের মোট বাণিজ্যিক জ্বালানির ৫৪ থেকে ৫৯ শতাংশ আসে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে। বর্তমানে আবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্রের সংখ্যা ২৯টি, যার মধ্যে ২০টি উৎপাদনে রয়েছে। দেশের ক্রমবর্ধমান গ্যাসের চাহিদা মেটাতে উপকূলীয় এলাকায় তেল/গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পেট্রোবাংলার আওতায় ৪৮টি কূপ খননকাজের পরিকল্পনা করেছে বাপেক্স।
অফশোর গ্যাস অনুসন্ধান
অর্থমন্ত্রী মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন না করে এবং প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশের উৎপাদন বণ্টন চুক্তির আলোকে বিদ্যমান 'অফশোর মডেল-পিএসসি ২০১৯'কে আরও আকর্ষণীয় করে বাংলাদেশ অফশোর মডেল প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট (পিএসসি)-২০২৩ প্রণয়ন করা হয়েছে।
এ চুক্তির আওতায় অগভীর সমুদ্রের ৯টি ব্লক ও গভীর সমুদ্রের ১৫টি ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য আন্তর্জাতিক কোম্পানি নিয়োগ করতে 'বাংলাদেশ অফশোর বিডিং রাউন্ড-২০২৪' শুরু করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে গভীর ও অগভীর সমুদ্রের পিএসসি সই হবে।
এ ছাড়া, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীনে সামুদ্রিক খনিজ ও অন্যান্য সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের লক্ষ্যে ‘ব্লু ইকোনমি’ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের কার্যক্রম সমন্বয়ের লক্ষ্যে ব্লু ইকোনমি সেল কাজ করছে।
তিনি বলেন, সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ ও এর সুষ্ঠু ব্যবহারের গুরুত্ব বিবেচনা করে এ খাতে গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য বাজেটে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।
