বাংলাদেশের ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হবে। এটি আওয়ামী লীগ সরকারের চলতি মেয়াদের প্রথম বাজেট।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাবনা ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩–২৪ অর্থবছরের বাজেট ছিল ৭ লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ৪ দশমিক ৬ শতাংশ বাড়বে।
বাংলাদেশে জাতীয় বাজেটের জন্য ১ জুলাই থেকে পরের বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত অর্থবছর গণনা করা হয়। প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট বাংলাদেশের ৫৩তম বাজেট।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বাজেট উপস্থাপন করবেন। সংসদে উপস্থাপনের জন্য ৩২৯ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তব্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
তবে অর্থমন্ত্রীকে পুরো বাজেট ডকুমেন্ট পড়তে হয় না। তিনি স্লাইডের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের সামনে তাঁর বাজেটের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করবেন।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আগের মতোই বাজেটের প্রায় ৪ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের দুই-তৃতীয়াংশ যাবে অনুৎপাদনশীল খাতে, বেতন, প্রণোদনা, ভাতা ও ভর্তুকি পরিশোধ বাবদ।
এ ছাড়া, বিল, বন্ড ও সঞ্চয় ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যাংক থেকে সরকারের নেওয়া ঋণের সুদ পরিশোধ বাবদ ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হবে।
সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি পাবে বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও কৃষি খাত। বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ভাতার পরিমাণও কিছুটা বাড়ানো হচ্ছে।
সরকারি কর্মচারীরা মূল্যস্ফীতি সমন্বয়সহ তাদের বেতনের সঙ্গে ৫ শতাংশ প্রণোদনা পাবেন, অন্যদিকে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরাসরি রাজস্ব ব্যবস্থা এখন দৃশ্যমান নয়।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ ইউএনবিকে বলেন, একটি প্রকল্পের অসমাপ্ত কাজ থেকে সরে আসার সুযোগ না থাকায় সরকারকে সেইসব প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়াতে হয়।
তবে প্রকল্প বরাদ্দের ক্ষেত্রে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে এবং বাজেটের অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণ ও তদারকি বাড়াতে হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, যদিও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক বাজেট প্রয়োজন, তবুও বাজেট কিছুটা সম্প্রসারণমূলক। এটি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সামান্যই প্রভাব ফেলবে।
তবে প্রস্তাবিত ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আসন্ন ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার উচ্চাভিলাষী রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পেয়েছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র ইউএনবিকে জানায়, আসন্ন বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা এনবিআর সংগ্রহ করবে এবং বাকি রাজস্ব আসবে কর বহির্ভূত খাত থেকে।
বাজেটে ঘাটতি মেটাতে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে প্রায় ২ লাখ ৫৭ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এনবিআরকে আদায় করতে হবে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) বাজেট লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫০ হাজার কোটি টাকা বেশি। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৭০ হাজার কোটি টাকা বেশি।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরকে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছিল ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। পরে এনবিআরের চাপে লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রা কমলেও রাজস্ব বোর্ড রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে এখনো পূরণ করতে পারেনি।
এনবিআরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রথম ১০ মাসে রাজস্ব বোর্ড মোট ২ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। এ সময়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। ঘাটতি ২৪ হাজার ২০৬ কোটি টাকা। যদিও রাজস্ব আহরণে ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে এনবিআর।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাকি দুই মাস, মে ও জুন মাসে এনবিআরকে রাজস্ব আদায় করতে হবে ৯ লাখ ৬৪ হাজার ১৬ কোটি টাকা। এটা অসম্ভব বলেই মনে করছে স্বয়ং রাজস্ব বোর্ড।
রাজস্ব আদায়ের সক্ষমতা বিবেচনায় না নিয়ে প্রতিবছর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হচ্ছে। ফলে ঘাটতি বাজেটের অর্থের যোগান দিতে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে সরকার।
এমতাবস্থায় আগামী ৬ জুন উপস্থাপিত প্রস্তাবিত বাজেটে ৫ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন এনবিআর সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের জন্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করে। এছাড়া স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা করপোরেশনের জন্য ১৩ হাজার ২৮৮ কোটি ৯১ লাখ টাকার বরাদ্দ দিয়েছে এনইসি।