বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, “জিয়াউর রহমানই মূলত: গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন; আর জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেছে তার লোকেরা।” সোমবার (৩ জুন) দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
সম্প্রতি বিএনপি বলছে, “জিয়াকে হত্যার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র হত্যা হয়েছে;” এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, “জিয়াউর রহমানই এদেশে গণতন্ত্রের হত্যা করেছিলো। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পেছনে জিয়াউর রহমান ওতোপ্রোতোভাবে জড়িত ছিলো।”
“সে কারণেই খন্দকার মোশতাক ক্ষমতা নেয়ার পর, জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন। সেনাবাহিনীর প্রধান থাকা অবস্থায় জিয়াউর রহমান রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। এটা কোনো গণতান্ত্রিক বিধি-বিধান নয়;” যোগ করেন হাছান মাহমুদ।
হাছান মাহমুদ আরো বলেন, জিয়াউর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর সাত্তার সাহেব রাষ্ট্রপতি ছিলেন, বেগম খালেদা জিয়া সোয়া ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। “তারা কেন জিয়া হত্যার বিচার করলো না?” প্রশ্ন করেন তিনি।
“তারা নিশ্চয়ই কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোবে বলেই জিয়া হত্যার বিচার করেনি। প্রকৃতপক্ষে জিয়াউর রহমানই গণতন্ত্রের হত্যাকারী;” আরো বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক।
তারেক রহমানের সমালোচনা
এদিকে, মঙ্গলবার (৪ জুন) এক আলোচনা সভায় হাছান মাহমুদ বলেছেন, “দুর্নীতি আর সন্ত্রাসের প্রতীক তারেক রহমান বিএনপির দুঃশাসনের মুখ। জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদ আয়োজিত আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।
হাছান মাহমুদ বলেন, দেশ যখন এগিয়ে যায় তখন বিএনপি-জামায়াত এবং বুদ্ধিজীবী নামধারীরা কোনো উন্নয়ন দেখতে পায় না। তারা শুধু বিষোদগার করে। “আল্লাহ'র কাছে প্রার্থনা করি, যেন তাদের হেদায়েত দেন। তাদের বুদ্ধি যেন উন্নয়নের কাজে লাগে, অপপ্রচারের কাজে নয়;” বলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, “বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে মনে করিয়ে দিতে চাই, আপনাদের শাসনামলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে ৫ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তারেক রহমানের দুর্নীতির বিষয়ে এফবিআই সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। বিএনপির তারেক রহমান দুর্নীতির বরপুত্র।”
তিনি আরো বলেন, “বেগম জিয়া অসুস্থ মানুষ। তিনি আমার মায়ের বয়সী। তার বিষয়ে বেশি কথা বলতে চাই না। তিনিও দুর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত। বিএনপির আমলে হাওয়া ভবন, খোয়াব ভবন ছিলো। হাওয়া ভবনের বিষয়ে আপনারা জানেন, খোয়াব ভবনের বিষয়ে কথা বলতে আমার লজ্জা লাগে।”
মির্জা ফখরুল: ‘বাংলাদেশকে সেবাদাস বানাতে জিয়া হত্যাকাণ্ড’
গত ৩০ মে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন “বাংলাদেশকে সেবাদাস রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে।”
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে, দুস্থদের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কর্মসূচিতে এ মন্তব্য করেন তিনি। জিয়াউর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব।
জিয়া হত্যাকাণ্ডকে একটি পরিকল্পিত বলে উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে একটি পরনির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য এই জাতীয়তাবাদী নেতাকে হত্যা করা হয়েছে।
দুর্নীতির অভিযোগ
এদিকে, ২৮ মে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব বলেন, দলের সহকর্মী ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির দায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ করা উচিত।
ক্ষমতাসীন দলের নেতা ও সাবেক কর্মকর্তাদের বিভিন্ন দুর্নীতির ঘটনা উন্মোচিত হওয়ার কথা উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, “লাগামহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের জন্য সরকার কুখ্যাতি অর্জন করেছে।”
তিনি আরো বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তাদের তথাকথিত নির্বাচিত প্রতিনিধি ও মধ্যরাতের নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য, সবাই দুর্নীতিতে জড়িত। তারা সবাই অবৈধভাবে অর্জিত অর্থের ভারে ডুবে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
“ক্ষমতাসীন দলের নেতারা তাদের অবৈধ টাকায় বিদেশে সেকেন্ড হোম নির্মাণ করছেন। সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রীর লন্ডনে ৩৬৫টি বাড়ি ছিলো;” উল্লেখ করেন মির্জা ফখরুল।
ব্যাপক দুর্নীতিতে সরকারের অস্তিত্ব কলঙ্কিত হয়েছে উল্লেখ করে, কোনো কৌশল ছাড়াই পদত্যাগের আহবান জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।