অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতীয় নির্বাচনের অর্ধেক গণনা শেষে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে পিছিয়ে বিজেপি


ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা নরেন্দ্র মোদীর সমর্থকরা নয়াদিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে দেশের সাধারণ নির্বাচনের প্রাথমিক ভোট গণনার ফলাফল উদযাপন করছে। ৪ জুন, ২০২৪, এএফপি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা নরেন্দ্র মোদীর সমর্থকরা নয়াদিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরে দেশের সাধারণ নির্বাচনের প্রাথমিক ভোট গণনার ফলাফল উদযাপন করছে। ৪ জুন, ২০২৪, এএফপি।

ভারতে অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচনের ভোট গণনা চলাকালীন ভারতীয় সময় দুপুর দু’টো পর্যন্ত যে ট্রেন্ড পাওয়া গিয়েছে তার ভিত্তিতে মনে করে হচ্ছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) সরকার গড়তে চলেছে। তবে গত দুইবারের (২০১৪, ২০১৯) মতো একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার লক্ষ্যে বেশ খানিকটা পিছিয়ে রয়েছে বিজেপি। শেষ পর্যন্ত বিজেপি একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে কিনা এই মুহূর্তে সেটাই সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।

গণনা অর্ধেক হওয়ার পরে বিজেপি এগিয়ে রয়েছে ২৩৬ আসনে, আর প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস ৯৫ আসনে।

ভারতের ৫৪৩ আসনের লোকসভায় ২৭২ আসন প্রয়োজন সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে। অর্থাৎ বিজেপি এই মুহূর্তে ৩৬টি আসন কম পেয়ে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার লক্ষ্যে পিছিয়ে রয়েছে, যদিও ভোট গণনা চলছে। ২০১৯ সালে বিজেপি একক ভাবে ৩০৩টি আসন পেয়েছিল। অন্যদিকে কংগ্রেস ৯৫ আসন পেলেও, গতবারের তুলনায় তারা এখনো পর্যন্ত ৪৩ আসনে এগিয়ে রয়েছে। এনডিএ জোট এগিয়ে রয়েছে ২৯৮ আসনে আর বিরোধী বিরোধী জোট ইন্ডিয়া এখনো পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে ২২৭ আসনে।

এই ট্রেন্ড বজায় থাকলে, সরকার গড়বে এনডিএ, তবে তাদের নির্ভর করতে হবে অন্য শরীকদের উপরে, যেটা গত দু'বারে হয়নি। ফলে এনডিএ’র প্রধান শরিকদল যেমন অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলেগু দেশম যারা এখনো পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে ১৬ আসনে এবং বিহারে মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেডের উপরে। নীতিশ কুমার এখনো পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছেন ১৪ আসনে। সেক্ষেত্রে ভবিষ্যতে অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নতুন ধরনের সমস্যায় পড়তে হবে বিজেপিকে, যে ধরনের সমস্যায় তারা গত দু’বারে পড়েননি।

পরবর্তী এনডিএ সরকারের জন্য শরিক নিয়ে সরকার চালানো একটা নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা হবে এবং এর ফলে রাজনীতির চরিত্রগত পরিবর্তন হবে বলেও জানালেন অমর্ত্য সেনের প্রতীচি ইনস্টিটিউটের মুখ্য জাতীয় গবেষক সাবির আহমেদ।

“এতদিন বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা একাই পেতো। অবশ্যই এনডিএ ছিল কিন্তু কার্যকরী ছিল না বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সব সময় বিজেপির সিদ্ধান্ত বা নীতি অগ্রাধিকার পেত। বিশেষ করে বিভিন্ন বিলকে আইনে পরিণত করার প্রশ্নে। এবারে কিন্তু তাদের শরিকদের কথা শুনতে হবে এবং এটা নিয়ে মোদি-শাহের সরকার বেশ খানিকটা চাপে থাকবেন। বিশেষত যখন বিরোধীদের শক্তি অনেকটাই বাড়লো,” বলেন সাবির আহমেদ।

বিজেপির এবারের পারফরমেন্স সম্পর্কে বলতে গিয়ে, ভারতের অন্যতম খ্যাতনামা একাডেমিক স্তরের নির্বাচন সমীক্ষক এবং হায়দ্রাবাদের মৌলানা আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আফরোজ আলম ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলাকে বলেন, “এবারেও আমরা এক হাজারের বেশি সদস্য নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছিলাম যা আমি গত ২০ বছর ধরে করে আসছি। বিজেপি এবং এনডিএ এগিয়ে থাকবে এমনটাই আমরা বলেছিলাম কিন্তু মূল স্রোতের টেলিভিশন চ্যানেল যত আসন বিজেপি বা ইন্ডিয়াকে গত তিন দিন আগে দিয়েছিল, আমরা তা দিইনি। এর একটা কারণ হচ্ছে যে সমীক্ষা করতে গিয়ে ভারতের প্রত্যন্ত গ্রামে আমাদের ছেলেমেয়েরা দেখেছে এবং বারবার জানিয়েছে যে গত দু’বারে যে মোদী হওয়া ভারতে ছিল তা নেই। সংগঠন হিসেবে বিজেপি এবং তাদের প্রধান সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ সক্রিয় থাকলেও, মোদী হাওয়া অনেকটাই কম ছিল।” এছাড়াও, মানুষ ভোট দিয়ে বেরিয়ে বিজেপির কড়া সমালোচনা করেছেন বলেও জানান অধ্যাপক আলম।

কংগ্রেসের পারফরমেন্স

নিশ্চিতভাবেই রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস এই নির্বাচনে গত দুবারের থেকে অনেকটাই ভালো ফল করেছে। গতবারের তুলনায় কংগ্রেস এই মুহূর্তে এগিয়ে রয়েছে ৪৩ আসনে। দক্ষিণ এবং উত্তর ভারত দুই জায়গা থেকে লড়েই জিতেছেন দলের মুখ রাহুল গান্ধী স্বয়ং। তবে দলের তরফ থেকে বলা হয়েছে, ভোট গণনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত কর্মীরা যেন বিজয় উৎসব পালন করতে শুরু না করেন। কিন্তু খানিকটা সে সমস্ত কথায় কান না দিয়েই, দিল্লির আকবর রোডে জমায়েত শুরু হয়েছে কংগ্রেসের নেতাকর্মীদের।

ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা রাহুল গান্ধী নয়াদিল্লিতে দলের সদর দফতরে। ৪ জুন, ২০২৪, রয়টার্স।
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা রাহুল গান্ধী নয়াদিল্লিতে দলের সদর দফতরে। ৪ জুন, ২০২৪, রয়টার্স।

কংগ্রেসের ক্ষেত্রে যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হল তাদের ভোটের হার গতবারের তুলনায় ১৯.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে সাড়ে ২৩ শতাংশ হয়ে গিয়েছে। এই কারণে রাতারাতি তাদের আসন সংখ্যা প্রায় দুগুণ বাড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আবারো মনে রাখা দরকার এখনো ফল গণনা শেষ হয়নি।

অন্যদিকে বিজেপির ভোটের হারও বেড়েছে। ২০১৯ সালে বিজেপি পেয়েছিল ৩৭.৩৬ শতাংশ ভোট যা এবারে বেড়ে হয়েছে ৩৮.২১। কিন্তু যেহেতু কংগ্রেসের ভোট বেড়েছে 4 শতাংশের বেশি তাই বিজেপির প্রায় এক শতাংশ বৃদ্ধিতে তাদের লাভ হয়নি।

পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি

বর্তমানের ট্রেন্ড বজায় থাকলে বলতে হয় পশ্চিমবঙ্গে অবিশ্বাস্য ভালো ফল করেছে রাজ্যে ক্ষমতা তৃণমূল কংগ্রেস। প্রায় সব বুধ ফেরত জরিপ যখন দেখিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে প্রথমবার বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেসের থেকে বেশি আসন এবং ভোট পাবে তখন দেখা যাচ্ছে দুই ক্ষেত্রেই বিজেপিকে ভালোভাবে পিছনে ফেলে দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।

ভারতীয় সময় বেলা দুটো নাগাদ তৃণমূল কংগ্রেস গতবারের তুলনায় সাড়ে ৩ শতাংশ বেশি ভোট পেয়েছে। ২০১৯ সালে তৃণমূল পেয়েছিল ৪৩.৩ শতাংশ ভোট এবং এবারে পেয়েছে ৪৬.৯ শতাংশ।

জাতীয় নির্বাচনে ভোট গণনার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার ভাগ্নে অভিষেক ব্যানার্জির পোস্টারে ভরা রাস্তার পাশের স্টলে তৃণমূল কংগ্রেস পার্টির সমর্থকরা টেলিভিশনে খবর দেখছেন। ৪ জুন, ২০২৪, এপি।
জাতীয় নির্বাচনে ভোট গণনার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তার ভাগ্নে অভিষেক ব্যানার্জির পোস্টারে ভরা রাস্তার পাশের স্টলে তৃণমূল কংগ্রেস পার্টির সমর্থকরা টেলিভিশনে খবর দেখছেন। ৪ জুন, ২০২৪, এপি।

এর পাশাপাশি বিজেপির ভোট কমেছে ৩.২ শতাংশ, যা অন্তত দুই থেকে তিন শতাংশ বাড়বে বলে বুথ ফেরত জরিপে বলা হয়েছিল।

২০১৯ সালে যেখানে বিজেপি পেয়েছিল ৪০.৭ সেখানে এবারে পেয়েছে ৩৭.৫ শতাংশ। তারা পিছিয়ে রয়েছে গতবারের তুলনায় প্রায় অর্ধেক আসনে। বিজেপি যেখানে গতবার পেয়েছিল ১৮ আসন সেখানে এখন তারা এগিয়ে রয়েছে ১০ আসনে।

ভারতের নির্বাচন কমিশনের পরিসংখ্যান বলছে, তৃণমূল কংগ্রেস গত বারে ২০ আসন পেলেও এখনো পর্যন্ত এগিয়ে রয়েছে ৪২ এর মধ্যে ৩o আসনে।

ভোট গণনা অর্ধেক হওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে দুই বিরোধী দল কংগ্রেস এবং সিপিআইএমের ভোট মোটামুটিভাবে এক শতাংশ হারে কমেছে।

XS
SM
MD
LG