দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা অর্থ আত্মসাতের মামলায়, নোবেল পুরষ্কারপ্রাপ্ত ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিচার শুরু হবে কি না, সে বিষয়ে আদেশ জানাতে আগামী ১২ জুন দিন ধার্য করেছেন আদালত। রবিবার (২ জুন) এ তারিখ ঠিক করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন।
আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। ড. ইউনূসের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুল আল মামুন। মামলায় হাজিরা দিতে আদালতে উপস্থিত ছিলেন ড. ইউনূস এবং অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা।
অভিযুক্ত যারা
অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন; ড. মুহাম্মদ ইউনূস, গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম ও পরিচালক এস. এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, অ্যাডভোকেট মো. ইউসুফ আলী, অ্যাডভোকেট জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান ও প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক কামরুল ইসলাম।
দুদকের মামলা
গত ১ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দন্ত কর্মকর্তা, দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান।
পরে, ২ এপ্রিল ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালত এ অভিযোগপত্র গ্রহণ করে। পরবর্তী বিচার কার্যক্রমের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত- ৪ এ মামলা বদলির আদেশ দেন।
এর আগে, গত ৩ মার্চ এ মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন পান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে, গত বছরের ৩০ মে দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
আরো মামলা এবং আপিল
এ বছরের ১ জানুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে একটি ধারায় ছয় মাসের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে রায় দেয় ঢাকার একটি শ্রম আদালত। আরেকটি ধারায়, তাদের ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এই মামলা দায়ের করেছিলো কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।
দণ্ডাদেশ ঘোষণার পর, ড. ইউনুসের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করলে কারাগারে যেতে হয়নি ড. ইউনূসকে।
রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় আদালতে সাংবাদিকদের ড. ইউনূস বলেছিলেন, “যে অপরাধ করিনি, সেই অপরাধর জন্য শাস্তি পেলাম।”
এই মামলা ছাড়াও, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। মামলাকে হয়রানিমূলক বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূসের পক্ষের আইনজীবীরা।
এদিকে, শ্রম আদালতের দেয়া ৬ মাসের কারাদণ্ডের রায় চ্যালেঞ্জ করে, ২৮ জানুয়ারি (রবিবার) শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস ।
বিস্তারিত শুনানির জন্য আদালত আপিল গ্রহণ করে এবং আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেয়।
পরে, রংপুর শ্রম আদালতে দায়ের করা মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ। পাশাপাশি এ মামলার বৈধতার প্রশ্নে রুল জারি করে আদালত।
এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে, ৩০ এপ্রিল (মঙ্গলবার) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্য
অন্যদিকে, বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে না।
১ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
আনিসুল হক বলেন, “ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি করার জন্য সরকার কিছু করছে না। তার বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে না। যে মামলা হয়েছে, সেটা শ্রমিকরা করেছিলো, তারপর শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিদপ্তর তার বিরুদ্ধে একটা মামলা করেছে। আমি কেবল বলবো, দেশ আমাদের সবার। নির্বাহী, আইনসভা কিংবা বিচার বিভাগ সব বিষয়ে দেশের অর্জনই দেশের মানুষের।”
আনিসুল হক আরো বলেন, “অকাট্য প্রমাণ থাকার পরও বিদেশে ছড়ানো হচ্ছে; তার (ড. ইউনূস) বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা। আরো বলা হচ্ছে, আমরা তাকে হয়রানির জন্য এটা করছি।”
এ ছাড়া, সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার বিচার অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে চলছে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের বিচার বিভাগ অত্যন্ত স্বচ্ছ। অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচার চলছে।”
তিনি আরও বলেন, “তার জামিন পাওয়ার বিষয়টিই প্রমাণ করে বিচার অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে চলছে।” হাছান মাহমুদ বলেন, ড. ইউনূসের সংগঠনের বঞ্চিত কর্মীরা তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো দায়ের করেছে, সরকার এতে কোনো পক্ষ নয়।