অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ঘূর্ণিঝড় রিমাল: সুন্দরবনে ক্রমাগত বাড়ছে মৃত প্রাণীর সংখ্যা


ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী মৃত্যুর সংখ্যা সব শেষ হিসাব মতে ১৩২টিতে দাঁড়িয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী মৃত্যুর সংখ্যা সব শেষ হিসাব মতে ১৩২টিতে দাঁড়িয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে সুন্দরবনে বন্য প্রাণীর মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। সব শেষ হিসাব মতে, মৃত বন্য প্রাণীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩২টিতে। শুক্রবার (৩১ মে) রাত পর্যন্ত সুন্দরবন থেকে ১২৭টি হরিণ ও ৪টি বন্য শুকরের মৃতদেহসহ একটি অজগর উদ্ধার করেছে বন বিভাগ।

বনের কটকা, কচিখালী, করমজল, পক্ষীর চর, ডিমের চর, শেলার চর, নারিকেল বাড়িয়া ও নীলকমল থেকে মৃত প্রাণীগুলো উদ্ধার করা হয়। পাশাপাশি ১৮টি হরিণ অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাদের বনে ছেড়ে দিয়েছে বন বিভাগ।

এদিকে, বনজ সম্পদ ও বন্যপ্রাণীর ক্ষয়ক্ষতির তথ্য জানতে বন বিভাগের সদস্যরা সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করছে।

খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, সুন্দরবনে পরিচালিত তল্লাশিতে প্রতিদিন মৃত হরিণ পাওয়া যাচ্ছে। শুক্রবারও বনের বিভিন্ন এলাকা থেকে তারা ৩১টি মৃত হরিণ উদ্ধার করা হয়েছে।

মিহির কুমার দো আরো জানান, শুক্রবার রাত পর্যন্ত ১২৭টি মৃত হরিণ, ৪টি মৃত বন্য শূকর ও একটি অজগর উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া জলোচ্ছ্বাসে নদীতে ভাসতে থাকা জীবিত ১৮টি হরিণ উদ্ধার করে অবমুক্ত করা হয়েছে।

প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সুন্দরবনের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে বন্যপ্রাণীর ক্ষয়ক্ষতি অনেক বেশি হয়েছে।

“জলোচ্ছ্বাসের বারণে, লবণ পানি বনের মধ্যে আটকে আছে। এতে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে;” যোগ করেন প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী।

সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

এদিকে, শনিবার (১ জুন) থেকে ৩ মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সুন্দরবন। এ সময় সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি পর্যটক প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে সুন্দরবনে প্রবেশের সব ধরনের পারমিট।

সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ ও বনে প্রাণীদের বিচরণ ও প্রজনন সুরক্ষায় এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা।

৩ মাসের জন্য সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে, পর্যটক প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
৩ মাসের জন্য সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ ধরা বন্ধ থাকবে, পর্যটক প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ কে এম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী বলেন, জুন থেকে আগস্ট; এই ৩ মাস সুন্দরবনের নদী-খালে মাছের প্রজনন মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। এই ৩ মাস সুন্দরবনের নদী ও খালে থাকা বেশির ভাগ মাছ ডিম ছাড়ে। এ ছাড়া, এটা বন্য প্রাণীরও প্রজনন মৌসুম।

“এই ৩ মাস বনে পর্যটক ও জেলে না গেলে বনের জীববৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণী নিরূপদ্রব থাকবে। ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে সুন্দরবনে প্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের যে ক্ষতি হয়েছে, তা দ্রুত কাটিয়ে উঠবে;” জানান ইকবাল হোছাইন চৌধুরী।

আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে পুনরায় সবার জন্য সুন্দরবন খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বন কর্মকর্তারা।

নিষেধাজ্ঞার কারণ

বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবনে মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনার (আইআরএমপি) সুপারিশ অনুযায়ী ২০১৯ সাল থেকে প্রতিবছরের ১ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত দুই মাস সুন্দরবনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ রাখা হতো।

গত ২০২১ সালে মৎস্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে এ নিষেধাজ্ঞা এক মাস বৃদ্ধি করে ১ জুন থেকে করা হয়েছে। সেই থেকে ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস বনের সব নদী ও খালে মাছ আহরণ বন্ধ রাখা হচ্ছে। এ সময় পর্যটক প্রবেশ, সাধারণ মানুষের চলাচলসহ সুন্দরবনের নদী-খালে মাছ ধরা নিষিদ্ধ।

খুলনার বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, সরকারি সিদ্ধান্তে ২০২১ সাল থেকে প্রতিবছর ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনের সব ধরনের সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ থাকছে। তারই ধারাবাহিকতায় এ বছরও এটা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। মূলত সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্যসহ মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে এই ৩ মাসব্যাপী নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়ে থাকে।

বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনে ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর, বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী বাস করে। বনের নদী ও খালে নৌযান চলাচল করলে মাছের ডিম ছাড়তে সমস্যা হয়। তাই নিষেধাজ্ঞার সময় সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে।

বনজীবীদের কথা

বনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রিমালের সংকেত শুনে ঝড়ের আগেই তারা সুন্দরবন থেকে লোকালয়ে ফিরে আসেন। এরপর আর বন বিভাগ থেকে তাদের বনে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়নি।

সুন্দরবনে মাছ, কাঁকড়া ও মধু আহরণ করেই সংসার চলে তাদের। ৩ মাস পাস বন্ধ থাকবে। এক সপ্তাহ আগে ঝড়ের সংকেত শুনে বন থেকে বাড়িতে ফিরতে হয়েছে। ফলে খুব বেশি মাছ ধরতে পারেননি তারা। সামনের ৩ মাস বন্ধের সময় সংসার চালানোর মতো সঞ্চয় নেই বলেও জানিয়েছেন বনজীবীরা।

XS
SM
MD
LG