অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত


সিলেটের ৪ হাজার পরিবার বন্যা আক্রান্ত হয়েছে, ১৩ উপজেলার মধ্যে ৭টি প্লাবিত হয়েছে।
সিলেটের ৪ হাজার পরিবার বন্যা আক্রান্ত হয়েছে, ১৩ উপজেলার মধ্যে ৭টি প্লাবিত হয়েছে।

বাংলাদেশের সিলেটে জেলার কয়েকটি উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে, শুক্রবার থেকে সিলেট নগরীতে সুরমা নদীর পানি প্রবেশ করছে। ইতোমধ্যে নগরীর ৪ হাজার পরিবার বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র।

শুক্রবার (৩১ মে) দুপুর থেকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন সিলেট সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র, কাউন্সিলর ও কর্মকর্তারা। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর জানান, কাউন্সিলরদের দেয়া তথ্যমতে, নগরীতে বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার পরিবার। তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

শুক্রবার রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার বন্যা কবলিত এলাকার কাউন্সিলরদের কাছে পৌঁছে দেয়া হয় বলে জানান তিনি।

এদিকে, শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪ টায় নগরীর ১৫, ২২ ও ২৪নং ওয়ার্ডের, সুবহানীঘাট, তালতলা, উপশহর, তেররতন এলাকা পরিদর্শন করেন ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. মখলিছুর রহমান কামরান, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী এবং সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলরগণ।

ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিছুর রহমান কামরান বলেন, উজান থেকে নেমে আসা ঢল আর টানা বৃষ্টির কারণে সিলেটের নদ-নদীর পানির বেড়ে সিলেট নগরীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পানি শহরের দিকে ধেয়ে আসছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পরামর্শক্রমে, সংকট মোকাবেলায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিছুর রহমান কামরান।

“ইতোমধ্যে আমাদের বিভিন্ন শাখা ছুটি বাতিল করে বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। সকাল থেকে আমাদের কার্যক্রম চলছে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিছুর রহমান কামরান।

সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জান চৌধুরীর নির্দেশে বৃহস্পতিবার (৩০ মে) জরুরি সভা করে সিসিক কতৃপক্ষ। সভায় কর্মকর্তা-কর্মচারিদের ছুটি বাতিল করে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তারই অংশ হিসেবে শুক্রবার (৩১ মে) দিনভর কর্মতৎপরতা চালায় সিসিক কর্তৃপক্ষ।

সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জান চৌধুরী এখন ব্যক্তিগত সফরে যুক্তারাজ্যে রয়েছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্রথম প্যানেল মেয়র মো. মখলিছুর রহমান কামরান।

পানিবন্দী সাড়ে ৫ লাখ মানুষ

এদিকে, শুক্রবার (৩১ মে) সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসানের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সিলেট জেলার ১৩ উপজেলার মধ্যে ৭টি প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ২০২ জন মানুষ। বন্যা মোকাবেলায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৪৭টি। ইতোমধ্যেই আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছেন ৪ হাজার ৮০২ জন।

জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে, জকিগঞ্জ, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাট।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় ৯৩ হাজার, কানাইঘাটে ৮০ হাজার ৬০০ জন, জৈন্তাপুর উপজেলায় ৬৫ হাজার, জকিগঞ্জে ৩৯ হাজার ৮৫২ জন ও গোয়াইনঘাটে ২ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫০ জন কন্যাকবলিত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

এছাড়া, সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় ৫ হাজার ৫০০ জন এবং গোলপগঞ্জ উপজেলায় ৩ হাজার ৫০০ মানুষ পানিবন্দী হয়েছেন। ৭ উপজেলার ৪২টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্লাবিত ১৩টি ইউনিয়ন।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, সুরমা নদীতে পানি বেড়েছে। ফলে নগরের কাজির বাজারসহ যেসব ড্রেন সুরমায় পড়েছে সেসব ড্রেন দিয়ে পানি নিষ্কাশনের বদলে উল্টো নগরে পানি ঢুকছে। এর জন্য কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আর বৃষ্টি না হলে পানি নেমে যাবে বলে জানান তিনি।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান বলেন, “আমরা সার্বিক পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। বন্যা কবলিত মানুষকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে এবং বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ চলছে।”

বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে ইউনিয়নভিত্তিক মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে বলে জানান সিলেটের জেলা প্রশাসক। তিনি আরো জানান, সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শুকনো খাবার ও রান্না করা খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি বিতরণ করা হচ্ছে।

XS
SM
MD
LG