অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের উদারতায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব


জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ৩০ মে, ২০২৪।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। ৩০ মে, ২০২৪।

বাংলাদেশকে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এছাড়া, রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের উদারতার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।

নিউ ইয়র্কে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিকালে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকে একথা বলেন জাতিসংঘ মহাসচিব।

“বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা, টেকসই উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলাসহ জাতিসংঘের অনেক কর্মযজ্ঞে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে এবং সেই কারণেই আমরা বাংলাদেশকে জাতিসংঘের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করি; বলেন আন্তোনিও গুতেরেস।

রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের উদারতার জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন জাতিসংঘ মহাসচিব। তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি, বিশেষ করে সে দেশের সেনাবাহিনী তরুণ রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক শ্রম ও সংঘাতে নিয়োগ করার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

রোহিঙ্গা সঙ্কটের ওপর বিশ্বের আলোকপাত বজায় রাখা, মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গার মর্যাদার সঙ্গে নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন এবং মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতির উন্নতি করতে জাতিসংঘের জোরদার ভূমিকা অব্যাহত রাখার আহবান জানান হাছান মাহমুদ।

বৈঠকে মহাসচিব গুতেরেস জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে বাংলাদেশের অভিযোজন ও প্রতিকূলতা মোকাবেলার সক্ষমতার প্রশংসা করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ নিম্ন আয়ের দেশের পর্যায় থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় জাতিসংঘের সহযোগিতা কামনা করেন। গুতেরেস এ বিষয়ে জাতিসংঘের পূর্ণ সমর্থন প্রদানের আশ্বাস দেন। জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, “এ জন্য বাংলাদেশকে পুরস্কৃত করা উচিৎ, শাস্তিদান নয়।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান ফিলিস্তিনের গাজায় চলমান সংঘাতসহ সাম্প্রতিক বিশ্বের কঠিন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় জাতিসংঘ মহাসচিবকে তার নেতৃত্বের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। “রাফায় সংঘাত এড়াতে সেখানে জাতিসংঘ মহাসচিব যেভাবে নিজে উপস্থিত হয়েছিলেন, শান্তিপ্রিয় বিশ্ববাসী তার প্রশংসা করেছে;” যোগ করেন হাছান মাহমুদ।

গত ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের দৃঢ় অংশীদারিত্ব এবং উন্নয়নে সহায়তার জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশের জাতিসংঘে যোগদানের অর্ধশত বছরপূর্তিতে গুতেরেসকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন তিনি।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠকের আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী দিবস উদযাপন উপলক্ষে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে বাংলাদেশ ও অস্ট্রিয়ার যৌথ অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে, বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগিতার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বৈদেশিক নীতি অনুযায়ী বাংলাদেশ সবসময় শান্তির প্রচেষ্টায় জাতিসংঘের অগ্রভাগে রয়েছে।”

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে, বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা আন্তরিকতা, পেশাদারিত্ব ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন বলে উল্লেখ করেন হাছান মাহমুদ।

শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে এ যাবৎ নিহত সব পরিবার ও স্বজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিশ্বময় সংঘাত ও সহিংসতার ক্রমাগত বৃদ্ধি, শান্তির জন্য ক্রমবর্ধমান হুমকি। “আর, এ কারণে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম জোরদার করার বিকল্প নেই;” আরো বলেন তিনি।

পরে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ-পিয়েরে ল্যাক্রোইক্স এবং অস্ট্রিয়ার চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স স্টেফান প্রিটেরহফারকে সঙ্গে নিয়ে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ২০২৩ সালে ৩৪টি দেশের ৬৪ জন আত্মদানকারী সামরিক, পুলিশ এবং বেসামরিক শান্তিরক্ষীর নামফলকে গভীর শ্রদ্ধা জানান।

XS
SM
MD
LG