বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করা লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর। আর, সমুদ্র বন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
শুক্রবার (২৪ মে) সকালে বাংলাদেশের আবহাওয়া দফতর বিশেষ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করা সুস্পষ্ট লঘুচাপটি উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হয়ে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর এলাকায় নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে।
নিম্নচাপটি শুক্রবার (২৪ মে) সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৮০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৮২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৯০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিলো।
এটি উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আরো ঘনীভূত হতে পারে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। বলা হয়, নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে। তাই, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা বন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থান করা মাছ ধরার সব নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে এবং তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে নির্দেশ দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
বাগেরহাট উপকূলীয় এলাকায় উদ্বেগ
বাগেরহাট জেলরা উপকূল ও নদী পাড়ে বসতি গড়ে তোলা কয়েক হাজার মানুষ যুগযুগ ধরে ঝুঁকির মধ্যে বাস করছেন। নদী পাড়ে বেড়িবাঁধ না থাকায় তাদের এমন ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে।
স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে পানি বেশি বৃদ্ধি পেলে, জেলার রামপাল, মোংলা ও মোড়েলগঞ্জ উপজেলার একাংশ প্লাবিত হয়। সেই সঙ্গে মানুষের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ে। আর ঝড়-জলোচ্ছ্বাস হলে নদী পাড়ের মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের খবরে নদী পাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তবে, জেলার মানুষকে দুর্যোগকালে নিরাপদ আশ্রয়ে রাখার জন্য ৩৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলে জানিয়েছে বাগেরহাট জেলা প্রশাসন।
ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলে আঘাত হানতে পারে এমন খবরে সেখানকার মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে শঙ্কা ও উদ্বেগ। নদী পাড়ে টেকসই বাঁধ থাকলে জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কায় এতোটা উদ্বিগ্ন হতেন না বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
বাগেরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু রায়হান মোহাম্মদ আল-বিরুনী জানান, জেলায় মোট ৩৩৮ কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে, শরণখোলা ও মোড়েলগঞ্জে ৬৫ কিলোমিটার বাঁধ টেকসইভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। বাগেরহাট সদর, মোড়েলগঞ্জ এবং শরণখোলায় বর্তমানে ১৬ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিপূণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে আট কিলোমিটার বাঁধ অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বলে জানান তিনি।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন বলেন, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় রিমাল মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্ততি রয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলায় ৩৫৯টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে দুর্যোগকালে ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫১ জন দুর্গত মানুষ আশ্রয় নিতে পারবেন। সেই সঙ্গে বাসিন্দার তাদের গবাদি পশুও আশ্রয় কেন্দ্র নিয়ে আসতে পারবেন বলে জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, দুর্যোগের আশঙ্কায় নগদ সাড়ে ৫ লাখ টাকা এবং ৬৪৩ দশমিক ৪০ মেট্রিকটন চাল মজুত রাখা হয়েছে। এছাঢ়া, জেলাব্যাপী সিপিপির ৩ হাজার ১৮০ জন সদস্য এবং রেড ক্রিসেন্ট, রোভার, বিএনসিসি, সেচ্ছাসেবক সংগঠনের প্রায় ৫০০ সদস্য প্রস্তত রয়েছে।
আবহাওয়া বিভাগের সংকেতের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জেলা প্রশাসক জানান।
চার বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস
এদিকে, ৪ বিভাগে বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। শুক্রবার (২৪ মে) নিয়মিত বুলেটিনে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে; খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়া দেশের অন্যান্য জায়গায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
বুলেটিনে আরো বলা হয়; ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্প বেশি থাকার কারণে অস্বস্তিভাব থাকতে পারে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাঙ্গামাটি ও পাবনার ঈশ্বরদীতে। শুক্রবার ভোরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ২৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস নোয়াখালীর মাইজদী কোর্টে।
চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি
প্রায় ২০ দিন পর আবার তাপপ্রবাহের কবলে পড়েছে চুয়াডাঙ্গা। ফের বাড়তে শুরু করেছে তাপমাত্রা।শুক্রবার (২৪ মে) বিকালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৪২ শতাংশ।
এরফলে অসহ্য গরম অনুভূত হয়েছে জেলা জুড়ে। তাপমাত্রার সঙ্গে ভ্যাপসা গরম বাড়ায় জনজীবনে অস্বস্তি নেমে এসেছে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ১৯ দিন চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ৩৩ থেকে ৩৮ ডিগ্রির মধ্যে উঠা নামা করছিলো। সর্বশেষ ৫ মে ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, গত ৬ মে থেকে ২৩ মে পর্যন্ত, তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি থেকে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছিলো।
শুক্রবার (২৪ মে) দুপুর ৩ টায় চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এসময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৪২ শতাংশ; জানান রাকিবুল হাসান।