অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সংসদ সদস্য আনার হত্যা: গ্রেপ্তার ৩ জনের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর


চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ঢাকা।
চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, ঢাকা।

বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তিন অভিযুক্ত ব্যক্তির জন্য আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে ঢাকার একটি আদালত।

ডিবির সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান জানান, শুক্রবার (২৪ মে) অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে, তাদের ৮ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দিলরুবা আফরোজ তিথি।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন; আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, শিলাস্তী রহমান ও ফয়সাল আলী ওরফে সাজি।

উল্লেখ্য, সংসদ সদস্য আনার চিকিৎসার জন্য গত ১১ মে কলকাতা যান এবং ১৪ মে থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিলো না।

পরে আনারের মৃত্যুর ঘটনায় বুধবার (২২ মে) বিকেলে একটি মামলা দায়ের করা হয়। সংসদস্য আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনের অভিযোগের ভিত্তিতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করা হয় বলে জানান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আহাদ।

ডিবি প্রধানের বক্তব্য

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে হত্যার ষড়যন্ত্র দুই থেকে তিন মাস আগেই করা হয়েছিলো বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) ডিবি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তিনি।

তিনি বলেন, “ঢাকায় এই পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। কিন্তু বাংলাদেশে পুলিশের কঠোর নজরদারির কারণে অপরাধীরা তাকে কলকাতায় হত্যার পরিকল্পনা করে। মূলহোতা আখতারুজ্জামানের গুলশান ও বসুন্ধরার বাসায় এই হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল।”

হারুন-অর-রশিদ বলেন, “এমপিকে হত্যার পর লাশ খণ্ড খণ্ড করে হাড় থেকে মাংস আলাদা করে হলুদের গুঁড়ো মিশিয়ে দেয়। পরে, তারা একটি ব্যাগে করে কলকাতার ফ্ল্যাট থেকে বের করে নেয়।” তবে দেহের অংশগুলো কোথায় ফেলা হয়েছে তা স্পষ্ট নয় বলে জানান তিনি।

হারুন-অর-রশিদ বলেন, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হত্যাকারীরা ২৫ এপ্রিল কলকাতায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়। ৩০ এপ্রিল হত্যার পরিকল্পনার মূল হোতা এবং আরও দুজন সেখানে যায়। এমপি আনোয়ারুল কলকাতায় যাবেন এ বিষয়ে তারা দুই মাস আগে থেকেই পরিকল্পনা করেছিলেন।

পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য মূল হোতা, আরো দুই ব্যক্তি- জিহাদ বা জাহিদ ও সিয়ামকে ভাড়া এবং একটি গাড়ি ভাড়া করে।

চিকিৎসার জন্য ১১ মে এমপি আনোয়ারুল কলকাতায় যান। ১২ মে তার বন্ধু গোপালের বাড়িতে যান। এরপর ১৪ মে থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মৃত্যুরহস্য উদঘাটনে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানান তিনি।

হাছান মাহমুদ জানান, ভারতের কলকাতায় ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করছে।

হাছান মাহমুদ আরো বলেন, “আমাদের মিশন পুরো বিষয়টি নিয়ে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। যেহেতু তদন্তাধীন বিষয়, তাই এ নিয়ে বেশি কিছু বলা সমীচীন নয়।”

এর আগে বুধবার (২২ মে) কলকাতায় বাংলাদেশ মিশন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাছান মাহমুদ জানিয়েছিলেন, কলকাতার যে ফ্ল্যাটে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে, কলকাতা পুলিশ সেই ফ্ল্যাটে ঢুকে মরদেহ পায়নি।

তখন তিনি আরও বলেছিলেন, “আমরা আমাদের মিশনের মাধ্যমে খোঁজখবর রাখছি এবং মিশন থেকেও কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। বিষয়টি তদন্তাধীন। তাই এর বেশি কিছু বলা সমীচীন নয়। আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে আরও যোগাযোগ রাখছে।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহ এখনো উদ্ধার করা যায়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বৃহস্পতিবার বিকেলে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, “আমরা এখনো লাশ উদ্ধার করতে পারিনি। যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সবকিছু উদ্ধার করতে না পারছি, ততক্ষণ আমরা আপনাদের কোনো তথ্য দিতে পারবো না। আবারও বলছি, উভয় দেশের গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে কাজ করছে।”

তবে দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থাই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদেরসহ প্রায় সবকিছু শনাক্ত করেছে বলে জানান তিনি।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, “যারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের শনাক্ত করার খুব কাছাকাছি আছি আমরা। শুধু ঘোষণা বাকি। দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থা একমত হলেই ঘোষণা দেয়া হবে।”

আসাদুজ্জামান খান বলেন, “আমাদের পুলিশ, গোয়েন্দা, ভারতীয় পুলিশ ও গোয়েন্দারা কাজ করছে। আমরা নিশ্চিত যে তাকে হত্যা করা হয়েছে। যারা হত্যা করেছে তাদের থেকে শুনেছি, তবে আমরা এখনো লাশ উদ্ধার করতে পারিনি।”

এ হত্যাকাণ্ডে ভারতীয় কেউ জড়িত কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ভারতীয় জড়িত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিইনি। তদন্ত চলছে। কারা জড়িত তা কিন্তু আমরা এখনো বলিনি। আমরা বলেছি যে, আমাদের একটি সাধারণ ধারণা আছে। সেই ধারণার ভিত্তিতেই আমরা কাজ করছি। এখন পর্যন্ত আমরা যে তথ্য পেয়েছি তা নিয়ে কাজ করছি।”

ওবায়দুল কাদের

এদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার বলেছেন, ঝিনাইদহ-৪ আসনের নিহত সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ভারতে কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন কি না তা তদন্ত করে জানা যাবে।

তিনি আরও বলেন, “তদন্ত শেষ হওয়ার আগে আমি কিছু বলতে পারব না। আওয়ামী লীগে অপরাধীদের কোনো স্থান নেই।”

ওবায়দুল কাদের বলেন, জনপ্রিয়তার কারণে ঝিনাইদহ-৪ আসনে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন আনোয়ারুল আজিম আনার। চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে ভারতীয় গণমাধ্যম। তার মৃত্যুর পর এখন সেসব বিষয়ে তদন্ত চলছে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “অন্যায়কারী দলের লোক হলেও শেখ হাসিনা তাকে রেহাই দেন না। অপরাধের ব্যাপারে তিনি জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলেন।”

এসব অভিযোগের সময় ও সুযোগ নিয়েও প্রশ্ন তুলে ওবায়দুল কাদের বলেন, “(তার) মৃত্যুর আগে আমাদের দেশের সাংবাদিকদের কোনো অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ বিষয় কেন আসেনি?”

XS
SM
MD
LG