অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের অভিযান, দখল করা ভবন থেকে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারী আটক


মঙ্গলবার রাতে নিউ ইয়র্ক পুলিশ জানালা দিয়ে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করে। ফটোঃ ৩০ এপ্রিল, ২০২৪।
মঙ্গলবার রাতে নিউ ইয়র্ক পুলিশ জানালা দিয়ে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে প্রবেশ করে। ফটোঃ ৩০ এপ্রিল, ২০২৪।

শত শত পুলিশ মঙ্গলবার রাতে নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন থেকে কয়েক ডজন ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীকে আটক করেছে, যারা গত রাতে হ্যামিল্টন হল দখল করে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট বলেন পুলিশের পদক্ষেপ ছাড়া ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা আর শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার আর কোন উপায় ছিল না।

রাত ৯টার কিছুক্ষণ পরেই হেলমেট পরে, হাতে ঢাল বিয়ে পুলিশ এই অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে জড়ো হয়। পুলিশ অফিসাররা একটি জানালা দিয়ে দখল করা ভবনে প্রবেশ করে। বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে আটক করে বাসে করে ক্যাম্পাস থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।

পুলিশের হস্তক্ষেপ আসে বিক্ষোভকারীরা হ্যামিল্টন হল দখল করার ১২ ঘণ্টা পর। বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাস অঙ্গনে তাঁবুর শিবির প্রতিষ্ঠা করে গত দু’সপ্তাহ ধরে গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের প্রতিবাদ করে আসছে।

বিক্ষোভকারীরা দাবী করছে, বিশ্ববিদ্যালয় যেন ইসরায়েল থেকে তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে।

পুলিশের পদক্ষেপ আসে ১৯৬৮ সালে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ণবাদ এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদে এই হ্যামিল্টন হল থেকে বিক্ষোভকারীদের হটানোর ৫৬তম বার্ষিকীতে।

আটক হবার আগে একজন বিক্ষোভকারী হ্যামিল্টন হল থেকে ফিলিস্তিনি পতাকা এবং বিজয় চিহ্ন দেখান। ফটোঃ ৩০ এপ্রিল, ২০২৪।
আটক হবার আগে একজন বিক্ষোভকারী হ্যামিল্টন হল থেকে ফিলিস্তিনি পতাকা এবং বিজয় চিহ্ন দেখান। ফটোঃ ৩০ এপ্রিল, ২০২৪।

প্রেসিডেন্ট বাইডেন-এর বক্তব্য

ফেবিয়ান লুগ, প্রথম বর্ষের অ্যাকাউন্টিং ছাত্র, যিনি বিক্ষোভের অংশীদার না বলে জানিয়েছেন, বলেন যে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ডাকার সিদ্ধান্তের সাথে একমত নন।

“তারা সব কিছু বন্ধ করে দিয়েছে,” তিনি বলেন। “এটা দেখে মনে হচ্ছে উত্তেজনা না কমিয়ে আরও বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে।”

কলাম্বিয়ায় পুলিশের অ্যাকশনের আগে ওয়াইট হাউস সেখানে এবং হামবল্ডট-এ ক্যালিফোর্নিয়া ষ্টেট পলিটেকনিক ইউনিভার্সিটিতে দুটি ভবন দখলের নিন্দা করে। হামবল্ডট-এ পুলিশ গত রাতে ২৫জনকে গ্রেফতার করে।

জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কারবি বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মনে করেন প্রশাসনিক ভবন দখল “একেবারেই ভুল পদক্ষেপ “ এবং “শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের নমুনা না।”

পুলিশ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলে, শেষ উপায় হিসেবে পুলিশকে ডাকা হয়েছে। পুলিশ বিভাগ আগে জানিয়েছিল, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরোধ বা কোন জরুরী পরিস্থিতি ছাড়া ক্যাম্পাসে ঢুকবে না। এখন পুলিশ ১৭ মে পর্যন্ত ক্যাম্পাসে থাকবে, যখন গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান শেষ হবে।

“গত মধ্য রাতে বিশ্ববিদ্যালয় যখন জানল হ্যামিল্টন হল দখল করা হয়েছে, সেখানে ভাংচুর হয়েছে, তখন আমাদের কাছে আর কোন উপায় ছিল না,” বিশ্ববিদ্যালয় এক বিবৃতিতে বলে।

“নিউ ইয়র্ক পুলিশের সাহায্য চাওয়া হয়ে বিক্ষোভকারীদের কর্মকাণ্ডের জন্য, তাদের আন্দোলনের বিষয়ের জন্য না,” বিবৃতিতে বলা হয়। “আমরা পরিষ্কার করে বলেছি যে, ক্যাম্পাস জীবন নিয়ম-কানুন ভঙ্গকারী প্রতিবাদকারীদের দ্বারা সারাক্ষণ ব্যাহত হতে পারে না।”

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্রিলের গোরার দিকে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং তার ধারাবাহিকতায় প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেশের পশ্চিমে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে পূর্বে ম্যাসাচুসেটস পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।

মে মাস সমাবর্তনের মৌসুম, এবং প্রশাসকরা ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারীদের সরানোর জন্য বাড়তি চাপ অনুভব করে।

গত দু’সপ্তাহে টেক্সাস, ইউটাহ, ভার্জিনিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা, নিউ মেক্সিকো, কানেটিকাট, লুইসিয়ানা, ক্যালিফোর্নিয়া এবং নিউ জার্সি সহ বিভিন্ন রাজ্যের ক্যাম্পাস থেকে ১,০০০-এর বেশি বিক্ষোভকারী গ্রেফতার করা হয়েছে।

ভিয়েতনাম যুদ্ধ-বিরোধী বিক্ষোভের সময় ১৯৬৮ সালেও ছাত্ররা কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যামিল্টন হল দখল করে। ফাইল ফটোঃ ২৪ এপ্রিল, ১৯৬৮।
ভিয়েতনাম যুদ্ধ-বিরোধী বিক্ষোভের সময় ১৯৬৮ সালেও ছাত্ররা কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যামিল্টন হল দখল করে। ফাইল ফটোঃ ২৪ এপ্রিল, ১৯৬৮।

হ্যামিল্টন হল যেভাবে দখল হলো

মঙ্গলবার ভোরে হ্যামিল্টন হল বিক্ষোভকারীরা দখল করে নেয়। বিক্ষোবকারীরা দখলকৃত ভবনের প্রবেশপথ আটকে দেয় এবং ভবনের জানালা দিয়ে ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলন করে। দেশব্যাপী ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর সর্বশেষ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলের খবর এলো।

এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মঙ্গলবার ভোরে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানহাটন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভকারীরা হ্যামিল্টন হলের সামনে হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে, এবং আসবাবপত্র ও ধাতব ব্যারিকেড ভবনটিতে নিয়ে যাচ্ছে।

এর আগে ক্যাম্পাসে ১৯৬৮ সালে নাগরিক অধিকার এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদের সময় দখল করা বেশ কয়েকটি ভবনের মধ্যে এটি একটি। সামাজিক মাধ্যম ইন্টসাগ্রামের একটি পোষ্টে মধ্যরাতের পরপরই বিক্ষোভের আয়োজকরা অন্যান্যদের হ্যামিল্টন হলে তাদের সাথে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান

মঙ্গলবার দিনের শুরুতে সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) সিইউ অ্যাপারথাইড ডাইভেস্ট পোস্ট করে, “একটি স্বায়ত্বশাসিত গ্রুপ হিন্দ’স হলের দখল ফিরিয়ে নিয়েছে (আগে “হ্যামিলটন হল” নামে পরিচিত)। শহীদ হিন্দ রজবের সম্মানে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়, যিনি গণহত্যাকারী ইসরায়েলি রাষ্ট্রের হাতে ছয় বছর বয়সে নিহত হয়েছিলেন।”

ছাত্রদের রেডিও স্টেশন, ডব্লিউকেসিআর-এফএম হল দখলের প্রতি মিনিটের ধারা-বর্ণনা প্রচার করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হুশিয়ারি দিয়েছিল যে, সোমবার দুপুর ২টার মধ্যে তাদের লাগানো ১২০টি তাঁবু তুলে নিতে হবে, না হয় তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হবে। হল দখল করা হয় সময়সীমা পার হবার ১২ ঘন্টা পর।

XS
SM
MD
LG