অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন দখল করেছে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভকারীরা


নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যামিল্টন হল দখলের পর বিক্ষোভকারীরা জানালা থেকে তাদের ব্যানার টাঙ্গিয়ে দেয়। ফটোঃ ৩০ এপ্রিল, ২০২৪।
নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যামিল্টন হল দখলের পর বিক্ষোভকারীরা জানালা থেকে তাদের ব্যানার টাঙ্গিয়ে দেয়। ফটোঃ ৩০ এপ্রিল, ২০২৪।

মঙ্গলবার ভোরে নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবন বিক্ষোভকারীরা দখল করে নেয়। বিক্ষোবকারীরা দখলকৃত ভবনের প্রবেশপথ আটকে দেয় এবং ভবনের জানালা দিয়ে ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলন করে। দেশব্যাপী ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর সর্বশেষ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলের খবর এলো।

এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মঙ্গলবার ভোরে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানহাটন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভকারীরা হ্যামিল্টন হলের সামনে হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে, এবং আসবাবপত্র ও ধাতব ব্যারিকেড ভবনটিতে নিয়ে যাচ্ছে। প্রবেশ করে বন্ধ করে দেয়।

এর আগে ক্যাম্পাসে ১৯৬৮ সালে নাগরিক অধিকার এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী প্রতিবাদের সময় দখল করা বেশ কয়েকটি ভবনের মধ্যে এটি একটি। সামাজিক মাধ্যম ইন্টসাগ্রামের একটি পোষ্টে মধ্যরাতের পরপরই বিক্ষোভের আয়োজকরা অন্যান্যদের হ্যামিল্টন হলে তাদের সাথে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান

মঙ্গলবার দিনের শুরুতে সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) সিইউ অ্যাপারথাইড ডাইভেস্ট পোস্ট করে, “একটি স্বায়ত্বশাসিত গ্রুপ হিন্দ’স হলের দখল ফিরিয়ে নিয়েছে (আগে “হ্যামিলটন হল” নামে পরিচিত)। শহীদ হিন্দ রজবের সম্মানে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়, যিনি গণহত্যাকারী ইসরায়েলি রাষ্ট্রের হাতে ছয় বছর বয়সে নিহত হয়েছিলেন।”

ছাত্রদের রেডিও স্টেশন, ডব্লিউকেসিআর-এফএম হল দখলের প্রতি মিনিটের ধারা-বর্ণনা প্রচার করে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হুশিয়ারি দিয়েছিল যে, সোমবার দুপুর ২টার মধ্যে তাদের লাগানো ১২০টি তাঁবু তুলে নিতে হবে, না হয় তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হবে। হল দখল করা হয় সময়সীমা পার হবার ১২ ঘন্টা পর।

ভিয়েতনাম যুদ্ধ-বিরোধী বিক্ষোভের সময় ১৯৬৮ সালেও ছাত্ররা কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যামিল্টন হল দখল করে। ফাইল ফটোঃ ২৪ এপ্রিল, ১৯৬৮।
ভিয়েতনাম যুদ্ধ-বিরোধী বিক্ষোভের সময় ১৯৬৮ সালেও ছাত্ররা কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হ্যামিল্টন হল দখল করে। ফাইল ফটোঃ ২৪ এপ্রিল, ১৯৬৮।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের কাছে মঙ্গলবার সকালে মন্তব্যের অনুরোধে ইমেইলে জানতে চাইলে তারা তাত্ক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি। তবে জননিরাপত্তা বিভাগের এক বিবৃতিতে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এড়াতে পরামর্শ দেয়া হয়। তবে জরুরী কর্মীদের কাজে রিপোর্ট করার জন্য বলা হয়েছে।

একটি এক্স পোস্টে, বিক্ষোভকারীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সিইউএডির তিনটি দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত তারা হলটিতে থাকার পরিকল্পনা করেছেন। দাবীগুলো হলোঃ ইসরায়েল থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার, আর্থিক স্বচ্ছতা ও দায়মুক্তি।

সমস্ত যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানের দিন এগিয়ে আসার সাথে সাথে বিক্ষোভকারীদের তাবুশিবির গুলো খালি করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু সংখ্যক আলোচনা অব্যাহত রাখলেও অন্যরা জোরপূর্বক উচ্ছেদের আল্টিমেটামের দিকে ঝুঁকছে। যার ফলে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।

সোমবার টেক্সাস, ইউটাহ এবং ভার্জিনিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিক্ষোভের সময় কয়েক ডজন মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদিকে হ্যামিল্টন হল দখলের কয়েক ঘন্টা আগে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় জানায় তারা শিক্ষার্থীদের সাময়িক বহিস্কার শুরু করেছে।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ এবং এতে ক্রমবর্ধমান মৃতের সংখ্যা নিয়ে ক্ষুদ্ধ বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তারের সংখ্যা প্রায় এক হাজারে পৌঁছেছে। ক্ষোভের বহিপ্রকাশের ফলে কলেজগুলোকে ইসরায়েলের সাথে তাদের আর্থিক সম্পর্কের পাশাপাশি বাকস্বাধীনতার প্রতিও তাদের সমর্থনের বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হচ্ছে।

কিছু ইহুদী শিক্ষার্থী বলেছেন, এই বিক্ষোভ ইহুদিবিদ্বেষে পরিণত হয়েছে, ফলে ক্যাম্পাসে আসতে ভয় পাচ্ছেন বলেও জানায় তারা।

Columbia University sophomore David Lederer waves a large flag of Israel outside the student protest encampment on the campus, April 29, 2024, in New York.
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভের পাশে একজন ছাত্র ইসরায়েলের পতাকা উড়িয়ে পাল্টা প্রতিবাদ জানায়। ফটোঃ ২৯ এপ্রিল, ২০২৪।

অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অ্যাটর্নি জানায়, সোমবার অন্তত ৪০ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সোমবার দুপুরে ইউটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সামনে তাঁবু শিবির তৈরি করার পর বিকেলে কয়েক ডজন দাঙ্গা পুলিশ ছাত্রদের সেখান থেকে টেনেহিঁচড়ে সরানোর সময় তাঁবুর খুঁটি ভেঙ্গে দেয়। যারা সড়তে রাজি হয় নি তাদের হাত বেঁধে ফেলা হয়। মোট ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, কাম্পাসে তাঁবু গাড়া নিয়মের লঙ্ঘন এবং পুলিশ ডাকার আগে ছাত্রদের সড়ে যাবার জন্য সতর্ক করা হয়েছিল।

কলাম্বিয়ার প্রথম বিক্ষোভের পর থেকেই টেক্সাসের প্রতিবাদ শুরু হয়। কানাডা এবং ইউরোপ সহ অন্যান্য স্থানেও তা চলতে থাকে।

ইহুদি শিক্ষার্থীদের পক্ষে দায়ের করা একটি মামলায় দ্রুত আদালতের হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়, যাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে বাধ্য হয়। মামলায় সশরীরে ক্লাস নেয়া থেকে সরে আসার ঘোষণা চালেঞ্জে করে দাবী করা হয়, নীতি ও প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপদ শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে কলাম্বিয়া ব্যর্থ হয়েছে।

এদিকে, ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বকারী একটি আইনি দল যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা বিভাগের নাগরিক অধিকার অফিসের প্রতি, কলম্বিয়ার ১৯৬৪ সালের নাগরিক অধিকার আইন মেনে চলার বিষয়টি তদন্ত করার আহ্বান জানিয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুখপাত্র

XS
SM
MD
LG