অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক কল-কারখানায় শিশুশ্রম নেই, দাবি শ্রম প্রতিমন্ত্রীর


মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী। ৩০ এপ্রিল, ২০২৪।
মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী। ৩০ এপ্রিল, ২০২৪।

বাংলাদেশের প্রাতিষ্ঠানিক কল-কারখানায় কোনো শিশুশ্রম নেই বলে দাবি করেছেন দেশটির শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে, মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এমন দাবি করেন।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কনভেনশন অনুযায়ী শিশুশ্রম নিষিদ্ধ; কিন্তু, বাংলাদেশে এখনো শিশু শ্রমিক দেখা যায়; এমন প্রসঙ্গ উঠে আসে সংবাদ সম্মেলনে।

এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কেউ একজন কাজের ছেলে রেখেছেন বা মেয়ে রেখেছেন। গরিব ঘরের সন্তানকে গ্যারেজে কাজ শেখানোর জন্য দিয়েছেন, পরবর্তী সময়ে সে হয়তো পরিবারের হাল ধরবে। এরকম অনেক বিষয় আছে। এ ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করেও অনেক সময় বন্ধ করা সম্ভব হয় না। তবে, প্রাতিষ্ঠানিক কল-কারখানায় কোনো শিশু শ্রম নেই।”

শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঈদের আগে অন্যান্য বছর শ্রম সেক্টরে যেভাবে অরাজকতা হতো, সড়ক অবরোধ হতো সেটা হয়নি। “আগে মালিক-শ্রমিক একটা বৈরি সম্পর্ক ছিলো। আমরা সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদের সমস্যাগুলো টেবিলেই সমাধান করেছি। শ্রমিকদের পাওনা বেতন-বোনাস ছুটির আগেই তাদের দিতে সক্ষম হয়েছি;” তিনি যোগ করেন।

নজরুল ইসলাম চৌধুরী আরো বলেন, মালিকদের সমস্যা ছিলো, সরকারের কাছে কিছু ইনসেনটিভ পাওনা ছিলো, সেগুলো তাদের পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। যে কারণে শ্রমিকদের পাওনা যথা সময়ে দেয়া সম্ভব হয়েছে। “ফলে এবার শ্রমিকরা সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন করেছেন;” বলেন তিনি।

শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, শিশুশ্রম বন্ধের বিষয়ে আইএলও কনভেনশন বাংলাদেশ রেটিফাই করেছে। এটি বাস্তবায়নে শতভাগ চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে, ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নিরসনের বিষয়টি একটু উচ্চাভিলাসী।

সচিব আরো বলেন, “আমরা বলছি, যত দ্রুত সম্ভব আমরা শিশুশ্রম নিরসন করবো। এ বিষয়ে নেয়া প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ১ লাখ ৯০ হাজার শিশুকে শ্রম থেকে সরিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।”

শিশুশ্রম নিরসনে মালিকদের সচেতন করা হচ্ছে বলে জানান শ্রম সচিব। তিনি আরো বলেন, “আমরা বিশ্বাস, মালিকগণ খুব দ্রুত শিশুশ্রম থেকে সরে আসবেন।”

শিশুশ্রম জরিপ-২০২৩

বাংলাদেশে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী মোট শিশুর সংখ্যা ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬০ হাজার। এরমধ্যে ঝুঁকি পূর্ণ শিশু শ্রমিকের সংখ্যা ১০ লাখ ৬৮ হাজার ২১২ জন। তবে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি পূর্ণ ৫টি সেক্টরে ৩৮ হাজার আট শিশু কাজ করছে, যার ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশই ছেলে শিশু।

চলতি বছরের ১৪ মার্চ প্রকাশিত সেক্টর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশুশ্রম জরিপ ‘ইএসডাব্লিউসিএস ২০২৩’ এ এমন তথ্য উঠে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এই জরিপ প্রকাশ করেছে।

এর আগে পরিচালিত জাতীয় শিশুশ্রম জরিপ ২০২২-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৫-১৭ বছর বয়সি শিশুদের মোট সংখ্যা ৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬০ হাজার। তাদের মধ্যে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬ হাজার ৯২৭ জন শিশু কর্মে নিয়োজিত, ১৭ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭ জন শিশুশ্রমে এবং ১০ লাখ ৬৮ হাজার ২১২ জন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় কাজ করছে।

সর্বশেষ বিএস জরিপে বলা হয়, ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুরা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কাজ করছেন। বিবিএস বলেছে, ৫টি খাতে ৩৮ হাজার ৮ জন শিশু কাজ করছেন, যার ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশই ছেলে শিশু। সবচেয়ে বেশি কাজ করে অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে।

বিবিএস জানায়, বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে ৪৩টি সেক্টরকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে, বিবিএস সরকার ঘোষিত এই ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা থেকে সেক্টর ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশুশ্রম জরিপ-২০২৩ পরিচালনার জন্য পাঁচটি খাত নির্বাচন করেছে। এই সেক্টরগুলোকে ফোকাস করে, শিশুশ্রম বিরাজমান রয়েছে এবং জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন, সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে জরিপটি পরিচালনা করা হয়েছে।

নির্বাচিত সেক্টরগুলো হলো; মাছ, কাঁকড়া, শামুক/ঝিনুক সংক্ষরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খাত; জুতা উৎপাদন (চামড়ার তৈরি জুতা শিল্প) খাত; লোহা ও ইস্পাত ঢালাই (ওয়েন্ডিং কাজ বা গ্যাস বার্নার মেকানিকের কাজ) খাত; মোটর যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত (অটোমোবাইল ওয়ার্কশপ) খাত এবং ব্যক্তিগত ও গৃহস্থালি সামগ্রীর মেরামত (অনানুষ্ঠানিক এবং স্থানীয় টেইলারিং এবং পোশাক কারখানা) খাত।

জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, ৪০ হাজার ৫২৫টি প্রতিষ্ঠান এবং ৩৮ হাজার ৮ জন ৫-১৭ বছর বয়সী শিশু উপরোক্ত সেক্টরগুলোতে কর্মরত আছে। ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টরে কাজে নিয়োজিত শিশুদের মধ্যে ৯৭ দশমিক ৫ শতাংশ ছেলে এবং ২ দশমিক ৫ শতাংশ মেয়ে শিশু।

এই ৫ টি সেক্টরে শ্রমজীবী মোট শিশুর সংখ্যা হলো যথাক্রমে শুটকি মাছ উৎপাদনে ৮৯৮, চামড়ার তৈরি জুতা তৈরিতে ৫,২৮১, ওয়েল্ডিং বা গ্যাস বার্নার ম্যাকানিকের কাজে ৪,০৯৯, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে ২৪,৯২৩ এবং অনানুষ্ঠানিক এবং স্থানীয় টেইলারিং বা পোশাক খাতে ২,৮০৫ জন।

জরিপে আরো বলা হয়, কর্মরত শিশুর মধ্যে ৩৫ দশমিক ৭ শতাংশ পল্লী এলাকায় এবং ৬৪.৩% শহর এলাকায় বসবাস করে।

XS
SM
MD
LG