নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলন করে ৭ জানুয়ারির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি।
তারই ধারাবাহিকতায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনও বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
দলীয় কৌশলের অংশ হিসেবে আগামী ৮ মে থেকে শুরু হতে যাওয়া চার ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না তারা।
দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না– এমন অভিযোগ এনে ২০১৯ সাল থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ভোট বর্জন করে আসছে বিএনপি।
দলটির নেতারা বলছেন, তার সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে, নির্বাচনে অংশ নিতে গেলে নেতাকর্মীর নতুন করে হামলা-মামলার শিকার হওয়া।
এতে দল ও দলের নেতাকর্মীদের আর্থিক ও রাজনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে বলে বিএনপি নেতৃবৃন্দ মনে করছেন।
বিএনপিকে নির্বাচনে এনে মানুষকে ভোটকেন্দ্রমুখী করতে এবার উপজেলা নির্বাচন থেকে দলীয় প্রতীক তুলে নেয় আওয়ামী লীগ।
বিএনপি ভোটে অংশ নিলে ক্ষমতাসীনদের এই কৌশল সফল হয়ে যেত।
সবকিছু মিলিয়ে দলীয় কৌশলের অংশ হিসেবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
যদিও দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে বেশ কয়েকজন স্থানীয় পর্যায়ের নেতাকর্মী ভোটে অংশ নেওয়ায় বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
নির্বাচন তো অর্থহীন– মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার জন্য সরকার যখন আইন করেছে, তখনই আমরা আপত্তি করেছি। নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়েছি, স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়া উচিত নয়। এটাতে বিভক্তি আরও বাড়বে সমাজে। সেই কারণে এই নির্বাচনের পক্ষে আমরা কখনও ছিলাম না।”
এখন সমস্যা আরও 'জটিল হয়েছে' বলে মনে করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন ও যারা নির্বাচন পরিচালনা করবে সেই সরকার, তারা কেউ নিরপেক্ষ নয়।”
ফখরুল ইসলাম বলেন, “অতীত অভিজ্ঞতায় আমরা দেখেছি, পুরো নির্বাচনটা আওয়ামী লীগ তাদের মতো করে নিয়ে যায়। সুতরাং এখানে নির্বাচন করাটা অহেতুক। আবার নির্বাচনে অংশ নিলে নেতা-কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাদের বিরুদ্ধে নতুন করে হামলা-মামলা হবে। আর্থিক ক্ষতি হবে। সেই কারণে আমরা এই নির্বাচনে যাইনি।”
“আমাদের মূল দাবি হচ্ছে– জাতীয় সংসদ নির্বাচনটা একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে হওয়া উচিত” – বলে মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি অনুযায়ী এখানে রাজনৈতিক দলগুলো কেউ কাউকে আস্থার মধ্যে নেয় না। আবার নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়– তার প্রমাণ দেখেছি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে চারটি নির্বাচন হয়েছে, সেগুলো অবাধ-সুষ্ঠু হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন যে একেবারে অবাধ-সুষ্ঠু হতে পারে না, তার প্রমাণ ৭ জানুয়ারির নির্বাচন।”
“এখানে গণতন্ত্রের লেশমাত্র নেই। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। সেখানে নির্বাচন তো অর্থহীন” – যোগ করেন ফখরুল।
বিএনপির তৃণমূলের নেতারা কী বলছেন?
দলীয়ভাবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তকে সঠিক মনে করছেন নড়াইল সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম।
তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “দেশে যদি ভোটের ও নাগরিক অধিকার না থাকে তাহলে এই চোরাচুরি নির্বাচন দিয়ে কি লাভ হবে? এটা তো শেখ হাসিনার সিলেকশনের নির্বাচন। তিনি যাকে চাইবেন তিনি নির্বাচিত হবেন। এই ভোট করে আমার লাভ কী? এই নির্বাচনে অংশ নেওয়া আর মহাসমুদ্রে ঝাঁপ দেওয়া সমান।”
নির্বাচনে অংশ নিতে গিয়ে দল থেকে বহিষ্কার হয়েছেন পটুয়াখালী সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনির রহমান।
তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “স্থানীয় নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচন এক নয়। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের সাংগঠনিক তৎপরতা বাড়ে। কিন্তু কেন্দ্রে বসে যারা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তারা আসলে দলের ভালো চায় না। আমি মনে করি, যেহেতু এবার স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নেই, তাই সবার জন্য নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত দলের।”
নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বহিষ্কার
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপে অংশ নেয়ায়, তৃণমূল পর্যায়ের ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো এ কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলটির নেতাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এতে আরো বলা হয়, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচনে; চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৭৩ নেতাকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে এবং দলীয় সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বহিষ্কার করা নেতাদের মধ্যে; উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী ২৮ জন, ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ২৪ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ২১ জন।
এর আগে, উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় অন্তত ৬৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছিলো বিএনপি।
তখন দলটির জ্যেষ্ঠ নেতারা জানিয়েছিলেন, যারা সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হবেন, তাদের প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলের সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হবে।
আন্দোলন চাঙ্গা করার পরিকল্পনা করছে বিএনপি
ধারাবাহিকভাবে ভোট বর্জন করে মাঠের আন্দোলন ছাড়া বিএনপির দলীয় কৌশল কতটা কার্যকর ও বাস্তবমুখী হবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাই আবারও ধীরে ধীরে মাঠের আন্দোলন চাঙ্গা করার পরিকল্পনা রয়েছে দলটির।
গত ২৮ অক্টোবরের পর বিএনপির রাজপথের আন্দোলন ঝিমিয়ে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, “২৮ অক্টোবর এত বড় একটা ডিজাস্টার, ক্র্যাকডাউন হয়েছে যে, আমাদের প্রায় ৩০ হাজার নেতা-কর্মীকে দুই দিনে গ্রেফতার করেছে। এখনও আমাদের অনেক নেতা-কর্মী জেলে যাচ্ছে। দুই হাজারের মতো নেতা-কর্মীকে সাজা দিয়েছে। সেই রকম একটা পরিস্থিতিতে একটু ঝিমিয়ে পড়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু আবারও সেটা আস্তে আস্তে বাড়বে।”
সুশীল সমাজ কী বলছেন?
“বিএনপির নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তের ফলাফল তাদেরকে ভোগ করতে হবে” বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সাধারণ সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “বিএনপি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। কারণ তারা মনে করে, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। নির্বাচন কমিশনের ওপর মানুষের আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে তাদের লক্ষ্য কতটুকু বাস্তবায়ন হবে তারাই ভালো বলতে পারবে।”
“স্থানীয় সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার দরকার পড়ে না, এখানে দরকার সদিচ্ছা”– যোগ করেন সুজন সম্পাদক।
“এবার উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না থাকায় ক্ষমতাসীন দলের প্রত্যাশা ছিল, এই রকম পরিস্থিতিতে বিএনপি হয়তো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে” বলে মন্তব্য করেন নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ।
তিনি বলেন, “কিন্তু বিএনপি ও তাদের মিত্ররা জানিয়ে দিয়েছে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না। তাতে আরেক নতুন জটিলতা তৈরি হয়েছে। তবে অনেক সমর্থক আছেন, যারা দলের প্রাথমিক সদস্য নন, এই সুযোগে অনেক ভিন্নমতাবলম্বী নির্বাচিত হয়ে আসতে পারে।
বিএনপির বিষয়ে মন্তব্য করতে চায় না আওয়ামী লীগ
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন যে উপজেলা নির্বাচন ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানী ঢাকার ধানমন্ডিতে, এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
ওবায়দুল কাদের উল্লেখ করেন যে বিএনপি মনে করেছিলো, তারা নির্বাচনে অংশ না নিলে সরকার বৈধতা পাবে না। “কিন্তু হয়েছে উল্টো। জাতীয় নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে ২৩১ টি নির্বাচন হয়েছে। যেখানে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ;” তিনি আরো বলেন।
উপজেলা নির্বাচনে এমপিদের হস্তক্ষেপ এবং সহিংসতার আশঙ্কা করছে নির্বাচন কমিশন; এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন,“ তারা সংঘাতের আশঙ্কা করতে পারেন। তবে সংঘাত যেন না হয়, সে বিষয়ে আমাদের প্রয়াস অব্যাহত আছে।”
ওদিকে বিএনপির নির্বাচন বর্জন ও তাদের অভিযোগের বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চান না আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ।
তিনি ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “বিএনপির বিষয়ে আমাদের বলার কিছু নেই। তারা কী করবে, না করবে– এটা তাদের সিদ্ধান্ত।”
কাজী জাফরউল্লাহ বলেন, “আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। গণতন্ত্রের চর্চা করতে হলে মানুষকে ভোট দিতে হবে। সেই জন্য আমরা নির্বাচনের পক্ষে।”
আ.লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্যকারীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ৩০ এপ্রিল
গত ২০ এপ্রিল এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয়স্বজনকে উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে কাদের বলেন, “এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয়স্বজন যারা নির্বাচন করছেন, তাদেরকে সরে দাঁড়াতে এবং যারা ভবিষ্যতে করতে চান, তাদেরকেও এই নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে।”
দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশ উপেক্ষা করে এমপি-মন্ত্রীদের আত্মীয়স্বজন অনেকে উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “একজন মাত্র নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে– প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদের শ্যালক। এখনও নির্বাচনে রয়ে গেছে ৩০ জন। বরং তারা বলেছে যে, আমরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াব না। যা পারে করুক।”
তিনি আরও বলেন, “আগামী ৩০ এপ্রিল আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভা আছে। সেখানে যারা দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে নির্বাচন রয়ে গেছে– তাদের বিষয়ে আলোচনা হবে। তাদের বিরুদ্ধে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তা ঠিক হবে।”
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ২৫ জন
নির্বাচন কমিশনের তথ্য বলছে, আগামী ৮ মে অনুষ্ঠিতব্য ১৪৮টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট গ্রহণ হবে। এই তিন পদে ২৫ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। তার মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৬ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৯ জন আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন।
নারীরা ভোটে অংশ নিতে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়– শাম্মী আহমেদ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও নারীরা ভোটে অংশ নিতে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়। যার কারণে ভোটে নারীদের অংশগ্রহণ কম বলে মনে করছেন নারী নেত্রীরা।
আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদ ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “যে কোনও নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের একটাই ভূমিকা থাকে, তাকে ওই আসনে বা পদে জয়ী হয়ে আসতে হবে। তখন তারা উইনিং ক্যান্ডিডেট খোঁজেন। কোনও দল তো হারতে চায় না।”
“আমাদের আর্থসামাজিক কাঠামোতে নারীদের সেইভাবে সমাজ গ্রহণ করে না। নারীবান্ধব সমাজ বলতে যেটা বোঝায়, সেইভাবে আমরা এগিয়ে যেতে পারি নাই। যার কারণে নির্বাচনে নারীদের অংশগ্রহণ কম” – যোগ করেন তিনি।
শাম্মী আরও বলেন, “আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা নারীবান্ধব, তিনি চান নারীরা এগিয়ে যাক। যার কারণে দল থেকে অনেক বেশি নারীকে নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আশা করি ভবিষ্যতে আরও বেশি নারী প্রার্থী আসবে। যত দিন যাবে, আমরা যত বেশি উন্নত হবো; দৃষ্টিভঙ্গি উন্নত হবে। তত বেশি নারী রাজনীতিতে এগিয়ে আসবে।”
মোট প্রার্থী ১৬৯৩ জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৪৭ জন
প্রথম ধাপের ১৪৮টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বৈধ প্রার্থী ১৬৯৩ জন।
এর মধ্যে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৪৭ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন।
তিন পদ মিলিয়ে কতজন নারী প্রার্থী রয়েছেন, তার হিসাব পাওয়া যায়নি।
দলীয় প্রতীক স্থানীয় সরকারের উদ্দেশ্য 'নষ্ট' করেছে
স্থানীয় পর্যায়ে গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়।
দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকারে ভোট হওয়ায় সেই উদ্দেশ্য ধ্বংস হয়ে গেছে বলে মনে করেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “স্থানীয় সরকার নির্বাচনে স্থানীয় নেতৃত্ব তৈরি হওয়ার কথা, স্থানীয়ভাবে সমস্যা সমাধান করার কথা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়ার মাধ্যমে সেই ব্যবস্থাটা নষ্ট করে দিয়েছে। দলীয় প্রতীকের কারণে মনোনয়ন বাণিজ্য, ভোট কেনা-বেচা স্থানীয় সরকারকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এখান থেকে এখন আর ভালো গুণাবলির নেতৃত্ব তৈরি হয় না।”
এরশাদ শাসনামলে স্থানীয় সরকার কাঠামো হিসেবে উপজেলা পরিষদ প্রবর্তন হয়।
এর আগে স্থানীয় সরকার হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা থাকলেও উপজেলা নামে কোনো কাঠামো ছিল না।
১৯৮৫ সালে নবগঠিত ৪৬০টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
১৯৯০ সালে দ্বিতীয় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হয়। পরবর্তী প্রায় ১৯ বছর অকার্যকর ছিল উপজেলা পরিষদ। হয়নি কোনো নির্বাচন।
২০০৯ সালে ফের উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
ওই নির্বাচনে প্রার্থীদের দলীয় প্রতীক নেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল না। ২০১৪ সালেও দলীয় প্রতীক ছিল না উপজেলা নির্বাচনে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নেওয়ার বাধ্যবাধকতা সৃষ্টি করে আইন সংশোধনের মাধ্যমে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রতীক না দেওয়ার ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। তারপরেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আইন সংশোধন করে বিধানটি বাতিল করা হয়।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে জানিপপ
৮ মে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া উপজেলা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবে বলে জানান জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদের (জানিপপ) চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ।
তিনি বলেন, “উপজেলা নির্বাচনের তাৎপর্য অপরিসীম। এই কারণে দেশে প্রথম স্থানীয় সরকার নির্বাচন মনিটরিং শুরু হয় উপজেলাকে ঘিরে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় উপজেলা নির্বাচনের গুণগত মান নষ্ট হয়েছে।”
এই প্রতিবেদনের কিছু অংশ ইউএনবি থেকে নেয়া হয়েছে।