অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার জনসংখ্যা কীভাবে বাড়ছে


যুক্তরাষ্ট্রে একটি নাগরিকত্বের সনদ নেয়ার অনুষ্ঠানে কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রে একটি নাগরিকত্বের সনদ নেয়ার অনুষ্ঠানে কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া থেকে আসা অভিবাসী জনসংখ্যা গত এক দশকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে এবং দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্সাস ব্যুরো বা আদমশুমারি অধিদপ্তরের সাম্প্রতিক প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, ২০১০ এবং ২০২২ এর মধ্যে, যুক্তরাষ্ট্রে, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া থেকে আসা অভিবাসীদের সংখ্যা ২৯ লক্ষ থেকে বেড়ে প্রায় ৪৬ লক্ষে পৌঁছেছে- যা প্রায় ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি।

এই উপাত্ত অনুযায়ী এই বৃদ্ধি একই সময়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামগ্রিক ভাবে "বিদেশে-জন্মগ্রহণকারী" জনসংখ্যার শতকরা ১৫.৬ ভাগ বৃদ্ধি নিতান্তই সামান্য।

মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের জনসংখ্যাবিদ জিন বাতালোভা বলেন, এই বৃদ্ধি "অবিশ্বাস্য"।

বাতালোভা ভয়েস অফ আমেরিকার সাথে একটি সাক্ষাত্কারে বলেন, "আমরা চারগুণ বেশি বৃদ্ধির হারের কথা বলছি।”

সেন্সাস ব্যুরো যুক্তরাষ্ট্রে "বিদেশী জন্মগ্রহণকারী" কে সংজ্ঞায়িত করে এভাবে যে এরা জন্মের সময় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ছিলেন না, ন্যাচারালাইজড নাগরিকত্ব এবং বৈধ স্থায়ী বাসিন্দার কোন স্ট্যাটাস ছিলো না।

১৮৫০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশী জন্মগ্রহণকারীদের সংখ্যা এবং শতাংশ
১৮৫০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশী জন্মগ্রহণকারীদের সংখ্যা এবং শতাংশ

সেন্সাস ব্যুরোর ৯ই এপ্রিল এর রিপোর্ট অনুয়ায়ী, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মোট বিদেশী-জন্মানো জনসংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৬২ লক্ষ বা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৪ শতাংশ, যেখানে ২০১০ সালে ছিল ৪ কোটি যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৩ শতাংশ।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অভিবাসনের ধরণ কতটা পরিবর্তিত হয়েছে তা জনসংখ্যা জরিপের উপাত্ত প্রমাণ করেছে। যদিও লাতিন আমেরিকা একসময় যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের প্রধান উত্স ছিল এবং এখনও তারা বিদেশে-জন্মগ্রহণকারী জনসংখ্যার অর্ধেক। তবে এখন আরও অভিবাসী এশিয়া, আফ্রিকা এবং বিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে আসছে৷

দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া থেকে অভিবাসন প্রবণতা বোঝার জন্য, ভয়েস অফ আমেরিকা আদমশুমারির তথ্য খতিয়ে দেখেছে এবং জনসংখ্যাবিদদের সাথে কথা বলেছে। আমরা কি খুঁজে পেয়েছি চলুন দেখা যাক।

দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া থেকে কতজন অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে বাস করে?

সেন্সাস ব্যুরো দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া থেকে ১০টি দেশকে হিসাবে ধরেছে। দেশগুলি হচ্ছে, আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, কাজাখস্তান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং উজবেকিস্তান।

সংস্থাটির বিদেশে জন্মানো জনসংখ্যা আমেরিকান কমিউনিটি সার্ভে নামে পরিচিত একটি বার্ষিক জরিপের উপর ভিত্তি করে হিসেব করা হয়েছে। প্রতিটি অনুমানে কিছুটা ত্রুটি থাকে।

২০২২ সালে, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া থেকে বিদেশে জন্মানো জনসংখ্যা অনুমান করা হয়েছিল ৪৫,৭২,৫৬৯ যা ২০১০ সালের ৩৮,৭২,৯৬৩ থেকে বেশি। ত্রুটির মার্জিন ছিল প্রায় ৫৫,০০০, বেশী বা কম।

ভারতীয়রা এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় বিদেশে জন্মানো গোষ্ঠী, তারা সংখ্যায় ২৮ লক্ষেরও বেশি। যা ২০১০ সালে ছিল ১৮ লক্ষ।

দ্বিতীয় বৃহত্তম দল পাকিস্তান থেকে এসেছে - প্রায় ৪,০০,০০০, যা ১২ বছর আগের প্রায় ৩,০০.০০০ থেকে বেশি। এর ঠিক আগের স্থানে রয়েছে ইরান, সেখান থেকে ৪,০৭,০০০ এসেছে।

কিন্তু শতাংশের পরিপ্রেক্ষিতে, এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশ থেকে যথেষ্ট বড় বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে।

বিদেশী বংশোদ্ভূত আফগানদের সংখ্যা ২০১০ সালে ৫৪,৪৫৮ থেকে লাফিয়ে ২০২২ সালে ১,৯৪,৭৪২ এ পৌঁছেছে, যার বৃদ্ধির পরিমাণ ২৫৭ শতাংশ । বাতালোভা বলেন, আফগানিস্তানে তালিবান দখলদারিত্বের কারণে উদ্বাস্তুদের এই স্রোত দেখা দিয়েছিলো।

বিদেশী বংশোদ্ভূত নেপালিরা শতাংশের হিসাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃদ্ধি পাওয়া জনগণ , যা ৬৯,৪৫৮ থেকে বেড়ে ১,৯১,২৭৩ তে পৌছেছে। যা কিনা লাফিয়ে ১৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশ এবং উজবেকিস্তান থেকে আসা অভিবাসীদের মধ্যে যথাক্রমে ৯১ শতাংশ এবং ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া থেকে আসা অভিবাসী জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিসংখ্যান
দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া থেকে আসা অভিবাসী জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিসংখ্যান

কখন এবং কিভাবে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া থেকে অভিবাসীরা এ দেশে আসে?

ভারতীয়রা কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী হচ্ছে। তবে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া থেকে অভিবাসীদের একটি উল্লেখযোগ্য অনুপাত হচ্ছে সাম্প্রতিক আগমন।

তাদের মধ্যে ৪২ শতাংশেরও বেশি ২০১০ বা তার পরে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছিল, সেন্সাস ব্যুরোর অনুমান অনুসারে, একই সময়ে স্থায়ী হওয়া বিদেশে জন্মানো মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৭ শতাংশকে তা ছাড়িয়ে গেছে।

বাতালোভা উল্লেখ করেছেন যে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া থেকে অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য পৃথক পন্থা অনুসরণ করে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতীয়রা মূলত ছাত্র এবং কাজের ভিসা ও পারিবারিক ভিসার উপর নির্ভর করে।

অনেক মধ্য এশীয়রা ডাইভার্সিটি (বৈচিত্র্য) ভিসা প্রোগ্রামের মাধ্যমে প্রবেশ লাভ করে, প্রায় ৩৬ শতাংশ উজবেক গ্রীন কার্ডধারী এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হয়। বাংলাদেশীরাও তথাকথিত "গ্রিন কার্ড লটারি" এর সুবিধা গ্রহণ করেছিল। ২০১২ সালে বাংলাদেশের জন্য তা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে পাঁচ বছরের মধ্যে ৫০,০০০ বাংলাদেশি এ উপায়ে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসি হয়েছিলেন।

দক্ষিণ ও মধ্য এশীয়দের শিক্ষাগত স্তর এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলি সামগ্রিক ভাবে বিদেশে জন্মগ্রহণকারী জনসংখ্যার সাথে কীভাবে তূলনা করা হয়?

দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার অভিবাসীরা সাধারণ জনসংখ্যার তুলনায় উচ্চ স্তরের শিক্ষার অধিকারী হয় এবং তাদের পছন্দের পেশাগত চাকরিতে কাজ করার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

সেন্সাস ব্যুরোর হিসেব অনুসারে, ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে সামগ্রিক ভাবে বিদেশে জন্মগ্রহণকারী জনসংখ্যার প্রায় ৩৪ শতাংশের তুলনায় ৭০ শতাংশেরও বেশি দক্ষিণ ও মধ্য এশীয়রা স্নাতক বা উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছে।

সমস্ত অভিবাসীর ৩৬ শতাংশের তুলনায়, প্রায় ৬৮ শতাংশ দক্ষিণ ও মধ্য এশীয় অভিবাসী ম্যানেজমেন্ট, ব্যবসা, বিজ্ঞান এবং শিল্পকলায় কাজ করে ।

ভারত থেকে আসা অভিবাসীদের, বিশেষ করে, উচ্চ স্তরের শিক্ষা এবং পেশাগত চাকরি করার প্রবণতা রয়েছে। প্রায় ৪৮ শতাংশ ভারতীয়দের স্নাতক বা পেশাদারি ডিগ্রী ছিল, যেখানে ৭৭ শতাংশ এরও বেশি ব্যবস্থাপনা, ব্যবসা, বিজ্ঞান এবং শিল্পকলায় কাজ করেছে।

দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার অধিকাংশ অভিবাসীরা কোথায় বাস করে?

যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেকেরও বেশি অভিবাসী মাত্র চারটি রাজ্যে বাস করে: ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস, ফ্লোরিডা এবং নিউইয়র্ক।

তবে, দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়ার অভিবাসীদের জন্য বসবাসের শীর্ষ চারটি রাজ্য হল নিউ জার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া, নিউ ইয়র্ক এবং ভার্জিনিয়া।

নিউ ইয়র্ক রাজ্যের দক্ষিণে অবস্থিত নিউ জার্সিতে, বিদেশী বংশোদ্ভূত দক্ষিণ ও মধ্য এশীয়রা রাজ্যের ৯০ লক্ষ জনসংখ্যার ৩.৬ শতাংশ। ক্যালিফোর্নিয়ায় রাজ্যের ৩ কোটি ৯০ লক্ষ জনসংখ্যার ২.৩১ শতাংশ জনসংখ্যা দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া থেকে আসা অভিবাসী।

প্রবাসী সম্প্রদায়ের সংখ্যা কত?

দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার বিদেশে জন্মগ্রহণকারী জনসংখ্যাকে এই অঞ্চল থেকে বংশধর দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রের এমন বাসিন্দাদের সংখ্যার সাথে বিভ্রান্ত হওয়া উচিত নয়।

দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রজন্মের অভিবাসী সহ, প্রবাসী সম্প্রদায় একটি বৃহত্তর সংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করে।

মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউটের জনসংখ্যাবিদরা অনুমান করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৫২ লক্ষ লোক "দক্ষিণ এশীয় ভারতীয়" হিসাবে চিহ্নিত। প্রায় ২,৫০,০০০ আফগান বংশদ্ভূত বলে দাবি করে।

২০২০ সালের যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারিতে দেখা গেছে যে ৬,৮৭,৯৪২ জন "কেবলমাত্র পাকিস্তানি" বা অন্যান্য গোষ্ঠীর সংমিশ্রণে চিহ্নিত হয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রে আনুমানিক

৪,০০,০০০ বিদেশী বংশোদ্ভূত পাকিস্তানিদের ছাড়িয়ে গেছে।

বাতালোভা বলেন, এই অঞ্চলের অন্যান্য প্রবাসী সম্প্রদায়ের জন্য, "তারা মোট অভিবাসী জনসংখ্যার তুলনায় খুব বেশি হবে না কারণ তারা অতি সম্প্রতি অভিবাসী গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।”

XS
SM
MD
LG