যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গাজার অবরুদ্ধ ছিটমহলে লাখ লাখ অনাহারে থাকা ফিলিস্তিনির কাছে সমুদ্র পথে ত্রান সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। বাইডেনের এই ঘোষণার তিন দিন পর, গাজায় অস্থায়ী জেটি নির্মাণের সরঞ্জাম বহনকারী যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর একটি জাহাজ রবিবার ভূমধ্যসাগরের দিকে রওয়ানা হয়েছে।
বিমান থেকে ত্রাণ সামগ্রী ফেলছে যুক্তরাষ্ট্র, জর্ডান এবং আরো কিছু দেশ। এই উদ্যোগের পাশাপাশি, ত্রাণের জন্য সাগর-পথ খোলার উদ্যোগ, গাজার ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকটের ইঙ্গিত দেয়। আর, স্থল পথে ত্রাণ সরবরাহে ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণকে পাশ কাটোনোর ইঙ্গিত বহন করে।
তবে, ইসরাইল বলেছে যে তারা এই সমুদ্র পথের ত্রান সরবরাহকে স্বাগত জানায়। এছাড়া, নিকটবর্তী সাইপ্রাস ছেড়ে আসার আগে, গাজাগামী কার্গোগুলো তারা পরিদর্শন করবে বলেও জানিয়েছে ইসরাইল।
গত পাঁচ মাসে, স্থলপথে গাজায় প্রবেশকারী ত্রাণবাহী ট্রাকের দৈনিক সংখ্যা ৫০০-এর অনেক নিচে নেমে গেছে। গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে, সেখানে দৈনিক ৫০০ ত্রানবাহী ট্রাক প্রবেশ করতো।ইসরাইলের বিধিনিষেধ ও নিরাপত্তা ইস্যুর কারণে গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাকের সংখ্যা হ্রাস পায়।
নেতানিয়াহুকে বাইডেনের সমালোচনা
বাইডেন, প্রকাশ্যে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কড়া সমালোচনা করেছেন। বাইডেন বলেছেন, তিনি মনে করেন নেতানিয়াহু গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে “ইসরাইলের উপকারের চেয়ে ক্ষতিই বেশি করছেন।” গাজা যুদ্ধ এখন ছয় মাসে গড়িয়েছে।
শনিবার এমএসএনবিসি’র জোনাথন কেইপহার্টকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রেসিডেন্ট বাইডেন দক্ষিণ ইসরাইলে গত ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার পর, তাদের বিরুদ্ধে অভিযানে ইসরাইলের অধিকারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন।
তবে, তিনি বলেন, “তার মানে এই না যে, আপনি (নেতানিয়াহু) ৩০ হাজার নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করতে পারেন।আপনার নেয়া পদক্ষেপের কারণে যে নিরীহ মানুষের প্রাণহানি ঘটছে, সেদিকে অবশই আরো মনোযোগ দিতে হবে।”
গাজায় ফিলিস্তিনি হতাহতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। রবিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৩১ হাজার ৪৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও শিশু। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাদের পরিসংখ্যানে যোদ্ধা ও বেসামরিক ব্যক্তিদের আলাদা করে উল্রেখ করে না।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জেটিটি চালু হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।সমুদ্র করিডরটি চালু করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অন্যান্য দেশ এক সঙ্গে কাজ করছে।
এই উদ্যোগকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সমর্থন করে। ইউরোপীয় কমিশন জানিয়েছে, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং রেডক্রস এই বিষয়ে ভূমিকা রাখবে।
গত বছর ৭ অক্টোবর হামাস দক্ষিণ ইসরাইলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১,২০০ লোককে হত্যা এবং ২৫০জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাবার পর, ইসরাইল ফিলিস্তিনি জঙ্গি সংগঠনটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। ইসরাইলের ব্যাপক বিমান এবং স্থল আক্রমণে গাজার বিভন্ন এলাকা বিধ্বস্ত হয়েছে এবং ভূখণ্ডের ২৩ লক্ষ বাসিন্দার ৮০ শতাংশ বাস্তচ্যুত হয়েছে যার ফলে চরম এক মানবিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে অভিহিত করে।