ইসরাইলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে সোমবার কুর্দী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের চার ব্যক্তির ফাঁসি দিয়েছে ইরান। অধিকার গোষ্ঠীগুলি এই ব্যক্তিদের প্রাণভিক্ষার জন্য প্রচারণা চালিয়েছিল এবং তারা এদের বিচারপ্রক্রিয়াকে চরমভাবে অন্যায্য বলে অভিহিত করেছিল। ওই গোষ্ঠীগুলির প্রচারণাকে উপেক্ষা করেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান।
ইরানের বিচার বিভাগের ওয়েবসাইট মিজান অনলাইনের বক্তব্য অনুযায়ী, ইসফাহানের মধ্য প্রদেশে ইরানের এক প্রতিরক্ষা কেন্দ্রে নাশকতার পরিকল্পনায় ইসরাইলের সঙ্গে সহযোগিতা করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত ওই চারজনের মৃত্যদণ্ড ভোরে কার্যকর করা হয়।
ইরান অভিযোগ তুলেছে, এই ব্যক্তিরা “ইহুদীবাদী গুপ্তচর সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত এক গোষ্ঠীর সদস্য।” আপাতভাবে ইসরাইলি গোয়েন্দা বিভাগ মোসাদের প্রসঙ্গ টানা হয়েছে। এই ব্যক্তিদের কুর্দী জাতিগোষ্ঠীগত আত্মপরিচয়কে উল্লেখ করেনি ইরান, যদিও বেশ কয়েকটি অধিকার গোষ্ঠী এই বিষয়ের উপর জোর দিয়েছে।
তেহরানের স্যাটেলাইট শহর কারাজের গেজেল হেসার জেলে ওই ব্যক্তিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আগে তাদের আত্মীয়দের শেষবারের মতো সাক্ষাতের জন্য রবিবার যখন তলব করা হয়েছিল, তখনই উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল যে অনুর্ধ্ব ৩০ বছর বয়সী ওই চারজনের জীবন বিপদে রয়েছে।
প্রচারণা কর্মীদের বক্তব্য অনুযায়ী, ইরানে মৃত্যদণ্ড কার্যকরের ঘটনা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে এই চারজনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হলো। এই মাসে এ পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে দু’জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, “চরমভাবে অন্যায্য গোপন বিচারের পর” চার ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। এই ব্যক্তিদের “ইরানীয় কুর্দী বংশোদ্ভুত” বলে অভিহিত করেছে এই সংস্থা।
নরওয়েতে অবস্থিত ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) গোষ্ঠীর অধিকর্তা মাহমুদ আমিরি মোঘাদ্দাম বলেন, “নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি নিয়ে তার ভিত্তিতে এই চার বন্দিকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং ন্যায্য বিচার হয়নি এবং এটা বিচার-বহির্ভুত হত্যা বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।”
আইএইচআর-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইরানে এ বছর এখনও পর্যন্ত কমপক্ষে ৬৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের একজন মোহসেন মজলুমের স্ত্রী এক্স (সাবেক ট্যুইটার) হ্যান্ডেলে এই সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
জোয়ানা তাইমাসি লেখেন, “এই দিনকে আমি ক্ষমা করতে পারবো না, ভুলতে পারবো না। আমার বলার আর কিছু নেই।”
ইরানের কর্তৃপক্ষ বলেছে, সোমবার যাদের মৃত্যদণ্ড কার্যকর হয়েছে সেই চারজনকে “এক অভিযানের প্রায় দেড় বছর আগে” নিয়োগ করেছিল মোসাদ।
পাশাপাশি ইরানের বিচার বিভাগ যোগ করেছে, “সামরিক কেন্দ্রে প্রশিক্ষণের জন্য” এই ব্যক্তিদের আফ্রিকাতে পাঠানো হয়েছিল যেখানে মোসাদের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এই চারজনের মৃত্যদণ্ড দেওয়া হয়।