অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতে রাম মন্দির নিয়ে বিজেপির ‘হাওয়া’ কীভাবে মোকাবেলা করবে বিরোধীরা?


রাম মন্দির কি আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে বিজেপিকে চালকের আসনে বসিয়ে দিয়েছে?
রাম মন্দির কি আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে বিজেপিকে চালকের আসনে বসিয়ে দিয়েছে?

কলকাতায় বইমেলা চলছে, অসম্ভব ব্যস্ত প্রকাশকেরা। এই ব্যস্ত প্রকাশকদের অন্যতম ‘সম্পর্ক পাবলিশিং হাউসে’র কর্ণধার সুনন্দন রায়চৌধুরী। বইমেলার সময় কয়েক দিন তাঁকে উত্তর কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের অফিস থেকে পূর্ব কলকাতার বইমেলা প্রাঙ্গণ সল্ট লেকে যেতে হয়।

গত ২২ জানুয়ারি যেদিন উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় রামচন্দ্রের পাথরের মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা হল সেই দিনও তিনি বেশ কয়েকবার অফিস-মেলা করতে হয়েছে।

এই প্রতিবেদককে সুনন্দন বলছিলেন, “উত্তর ও মধ্য কলকাতার একাধিক জায়গায় মন্দিরে মন্দিরে রামের, হনুমানের পুজো হচ্ছে, গেরুয়া ‘জয় শ্রীরাম’ পতাকা লাগিয়ে দলে দলে ছেলে মোটরবাইকে ঘুরছে। এটা আমার চেনা কলকাতার চিত্র নয়।”

পশ্চিমবঙ্গে, যেখানে বিজেপি এখনো ক্ষমতায় আসেনি, সেখানেই এই চিত্র বলে দিচ্ছে রাম মন্দির লোকসভা নির্বাচনের মুখে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) উজ্জীবিত করেছে। দশ বছরের প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার হাওয়ায় বিজেপির জন্য এটা সুখবর।

আরএসএস আর ভিএইচপি

ভারতে আর কয়েক মাসের মধ্যে লোকসভা নির্বাচনের আগে এই সুখবরের আবহাওয়া বিজেপি এবং তার আদি সংগঠন প্রায় ১০০ বছরের হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস) ধরে রাখতে চাইছে নানান কর্মসূচির মাধ্যমে।

A photo shows a general view of the illuminated Ram temple following its consecration ceremony in Ayodhya in India's Uttar Pradesh state on January 22, 2024.
অয্যোধ্যায় প্রাণপ্রতিষ্ঠার পর আলোকসজ্জায় সজ্জিত রাম মন্দির। ফটোঃ ২২ জানুয়ারী, ২০২৪।

আরএসএস বা সঙ্ঘ পরিবারের অসংখ্য শাখা সংগঠন রয়েছে যার মধ্যে বিজেপি হল রাজনৈতিক শাখা। এর ধর্মীয় শাখার নাম বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)। ভিএইচপি’র নেতৃত্বেই ১৯৮৫ সালে নতুন করে শুরু হয় রাম মন্দির নির্মাণের কাজ। বাবরি মসজিদ ভাঙা হয় ১৯৯২ সালে, আর প্রায় ৩০ বছর মামলা চলার পরে ২০১৯ সালে সুপ্রিম কোর্টে জয় পায় হিন্দুপক্ষ।

এর পরের কাজ করে সরকার, সঙ্ঘ পরিবার এবং বিজেপি। কিন্তু রাম মন্দির নির্মাণকে একটি আন্দোলনের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার কাজটি বহু যুগ ধরে করেছে ভিএইচপি।

ভিএইচপির সর্বভারতীয় সহ-সম্পাদক শচীন্দ্রনাথ সিনহা এই প্রতিবেদককে বলছিলেন মন্দির নির্মাণের প্রচার কিভাবে চালানো হলো।

“রাম মন্দির উদ্বোধনের আগে ১-১৫ জানুয়ারি ‘গৃহ-সম্পর্ক অভিযানে’র কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিমন্ত্রণ করা। এই কাজের সূত্রে আমরা গ্রাম বাংলায় ৩০ হাজারেরও বেশি গ্রামে প্রায় এক কোটি পরিবারের কাছে গিয়েছি, তিনি বলেন।

‘’যেদিন ভগবানের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হল, সেদিন গোটা বাংলা যেন রামময় হয়ে গেল। অনেকেই বলতেন, বাংলায় রামের কোনো প্রভাব নেই, রাম হচ্ছেন উত্তর ভারতের। কিন্তু বাংলায় প্রবল প্রভাব পড়েছে,” জানালেন সিনহা।

পশ্চিমবঙ্গে ঘরে ঘরে আমন্ত্রণ

তিনি আরো বললেন, পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ভারতের পাঁচ লাখ গ্রামে অন্তত ১২ কোটি পরিবারের কাছে পৌঁছনো গিয়েছে। এর অর্থ, ভারতের ৭৫ শতাংশ গ্রামে রাম মন্দির স্থাপন নিয়ে অনুষ্ঠান করা হয়েছে এবং প্রতি পরিবারে পাঁচজন করে সদস্য ধরা হলে ৬০ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছানো গিয়েছে যা মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ।

অযোধ্যায় হিন্দু ভক্তদের ঢল নামে। ফটোঃ ২৩ জানুয়ারী, ২০২৪।
অযোধ্যায় হিন্দু ভক্তদের ঢল নামে। ফটোঃ ২৩ জানুয়ারী, ২০২৪।

সঙ্ঘ পরিবারের অসংখ্য শাখার আরেকটি হল হিন্দু জাগরণ মঞ্চ, যাদের কাজ হিন্দু ধর্ম থেকে অন্য ধর্মে যাওয়া রোধ করা এবং অন্য ধর্ম থেকে হিন্দু ধর্মে মানুষকে ফিরিয়ে আনা। পশ্চিমবঙ্গে এই শাখার সাবেক কার্যনির্বাহী সভাপতি স্বরূপ দত্ত বলছিলেন ব্যক্তিগত স্তরে তাঁর ভূমিকার কথা।

“আমি সংকল্প করেছিলাম ১০০১টি প্রদীপ জ্বালাবো এবং ১০০১টি পরিবারে রাম মন্দিরের নিমন্ত্রণপত্র নিয়ে যাব। তার চেয়ে বেশি পরিবারের কাছে গিয়েছি। যেখানে গেছি সেখানেই মানুষ স্বাগত জানিয়েছেন,’’ তিনি বলেন।

‘’তৃণমূল কংগ্রেস বা কমিউনিস্টদের সমর্থন করেন এমন পরিবারেও গিয়েছি। সেখানে পরিবারের বয়স্করা জানতে চেয়েছেন তাঁরা কিভাবে অযোধ্যা যাবেন। এটা বিরাট ব্যাপার,’’ দত্ত বলেন।

এর ফলে পশ্চিমবঙ্গে যে সংখ্যায় রামের জন্মদিন বা রামনবমী পালন করা হয়, সেখানে “এবারে তিন-চার গুণেরও বেশি পালিত হবে কারণ এবারে আমরা এমন জায়গায় গিয়েছি যেখানে রামনবমী পালিত হয় না,” বললেন স্বরূপ দত্ত।

মসজিদের নিচে মন্দির খোঁজা

এই হাওয়াতেই নির্বাচন হবে কারণ রামনবমী হয় এপ্রিলে এবং নির্বাচনও ওই সময়ই হওয়ার কথা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এর সুবিধা বিজেপি পাবে কারণ রাম মন্দির নির্মাণের পরে অনেক জায়গায় মন্দির বানানোর দাবি উঠেছে।

রাজস্থানের বিখ্যাত আজমের শরীফ আসলে একটি হিন্দু মন্দির বলে দাবি করেছে ‘মহারানা প্রতাপ সেনা’ নামে একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। সংগঠনের সভাপতি বিষয়টি অনুসন্ধানের জন্য রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছেন।

বেনারসের জ্ঞানবাপি মসজিদ (ছবির বাঁয়ে) আর কাশিবিশ্বনাথ মন্দির।
বেনারসের জ্ঞানবাপি মসজিদ (ছবির বাঁয়ে) আর কাশিবিশ্বনাথ মন্দির।

এই অনুসন্ধানের অর্থ, মুসলমান সম্প্রদায়ের মসজিদ বা দরগার নিচে অতীতে কোনো মন্দির ছিল কিনা আর্কিওলজিক্যাল সার্ভেকে দিয়ে তা খুঁজে বার করা। রাম মন্দিরের নিচে কী আছে তা খোঁজার দায়িত্ব ২০০৩ সালে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভেকে দিয়েছিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। এর ফলে ২০২৪ সালে তৈরি হয়েছে রাম মন্দির।

বেনারসের জ্ঞানবাপি মসজিদের নিচেও মন্দির ছিল বলে সম্প্রতি জানিয়েছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে। সেখানেও মন্দির বানানোর দাবি উঠেছে। আরো অনেক জায়গায় সার্ভে রিপোর্ট চাইছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন।

সঙ্ঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ আমেরিকার গবেষক শ্রীধর দামলে তাঁর ১৯৮৭ সালের বই 'দ্য ব্রাদারহুড ইন স্যাফরন’-এ লিখেছেন, “কাঠামো পরিবর্তন করা হবে বলে আরো ২৫টি মসজিদ চিহ্নিত করেছে ভিএইচপি।” এই ধারাবাহিকতা নির্বাচন পর্যন্ত চললে তার সুবিধা বিজেপি পাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

যদিও শচীন্দ্রনাথ সিনহা বললেন বিজেপি সুবিধা পাবে কি না সেটা দেখা সঙ্ঘ পরিবারের কাজ নয়।

“সমাজ পরিবর্তনের লক্ষ্যে আমরা ব্যক্তি নির্মাণ করি” বললেন তিনি এবং একই সঙ্গে যোগ করলেন, “তবে আমরা চাইবো যারা ক্ষমতায় আসবেন তারা হিন্দু বিচারধারা ও ভারতীয় সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করবেন। ভারত-বিরোধী শক্তি এবং ভারতীয় সংস্কৃতি ও সনাতন ধর্মের বিরোধীরা যাতে ক্ষমতায় আসতে না পারেন সেটা আমরা খেয়াল রাখি।” সেটা করতে গিয়েই আগামী ৪২ দিন নির্দিষ্ট কর্মসূচি অযোধ্যায় পালিত হবে।

পশ্চিমবঙ্গ থেকে হাজার হাজার মানুষ 'অযোধ্যায় যাবে।'
পশ্চিমবঙ্গ থেকে হাজার হাজার মানুষ 'অযোধ্যায় যাবে।'

অযোধ্যা ভ্রমণ

“ভারতের বিভিন্ন ব্লক থেকে মানুষকে অযোধ্যায় নিয়ে যাওয়া হবে। তারা দেখবেন অযোধ্যা এক সময় কি ছিল, আর গত চার-পাঁচ বছরে অযোধ্যার কি পরিবর্তন হয়েছে। রাম রাজত্বের একটা ছোট মডেল হল অযোধ্যা, সেটা দেখাতে মানুষকে নিয়ে যাচ্ছি,’’ সিনহা বলেন।

‘’আগামী পাঁচ থেকে সাত ফেব্রুয়ারির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকেও সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ যাবেন। তারা ফিরে সমাজকে বলবেন অযোধ্যায় দ্রুতগতিতে পরিবর্তন হচ্ছে, বাংলায় কেন পরিবর্তন হবে না? আপনাদেরও নেমন্তন্ন রইল,” হাসতে হাসতেই বললেন শচীন্দ্রনাথ সিনহা।

ভবিষ্যত কর্মসূচির প্রসঙ্গে তিনি বললেন যে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ “সাধুসন্তদের সংগঠন এবং তারাই এর দিকনির্দেশনা দেবেন।”

তৃণমূল কংগ্রেসের ‘যত মত তত পথ’

তৃণমূল কংগ্রেস নেতৃত্বের অবশ্য বক্তব্য রামচন্দ্র বা তার মন্দির তাদের জন্য বড় সমস্যা নয়। কলকাতার মেয়র এবং তৃণমূল কংগ্রেসের সিনিয়র মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বিষয়টার ব্যাখ্যা তাঁর মতো করে দিলেন।

তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম। (ফাইল ফটো- দিব্যাংশু সরকার/ এএফপি)
তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম। (ফাইল ফটো- দিব্যাংশু সরকার/ এএফপি)

“এর কোনো প্রভাব পশ্চিমবঙ্গে পড়বে না। হিন্দু ধর্মে এক এক জায়গায় এক এক রকম পূজোর মাহাত্ম্য আছে। যেমন রামের পুজো চিরকালই উত্তর ভারতে গুরুত্ব পায়। উত্তর ভারতীয়দের যারা পশ্চিমবঙ্গে থাকেন তাদের কাছেও এর মাহাত্ম্য আছে। আবার বাঙালিদের কাছে দুর্গাপুজো, কালীপুজোর মাহাত্ম্য অনেক বেশি,’’ তিনি বলেন।

‘’এখানে প্রসাদী চাল দিয়ে কিছু হবে না। প্রসাদী চাল সবাই নিতে পারেন। আমাকে দিলে আমিও সম্মানের সঙ্গে নেব। কিন্তু তার মানে কি আমি ওদের দিকে ঘুরে গেলাম? সেটা নয়। রামের মালিকানা বিজেপি নিয়ে নেয়নি। আমাদের কাছে শ্রীরামকৃষ্ণের বাণী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর ‘যত মত তত পথের’ বাণীতে বাঙালি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে। শ্রীরামকৃষ্ণের জায়গা পশ্চিমবঙ্গে অন্তত অন্য কেউ নিতে পারবে না,” বক্তব্য হাকিমের।

সেক্ষেত্রে রাম মন্দির নির্মাণের মাধ্যমে রাজনৈতিক ইস্যু তৈরির বিজেপির চেষ্টার বিরোধিতা কি করবে না তৃণমূল কংগ্রেস?

“আমার মনে হয় না রাজনৈতিক ভাবে বিরোধিতার প্রয়োজন আছে। এর বিরোধিতা করা মানেই ধর্মের অন্ধকার দিককে প্রশ্রয় দেওয়া,’’ হাকিম বলেন।

‘’আমাদের কাছে সব সময়ই গুরুত্ব পায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্প। কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, লক্ষ্মীর ভান্ডার এই যে ৬৭টি প্রকল্প আছে এর উপরেই প্রচারে জোর দেওয়া হবে। উন্নয়নের কথাই মানুষকে বলবো। রাজনীতি হবে কর্মের ভিত্তিতে, ধর্মের ভিত্তিতে নয়,” বললেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘সঠিক’

তৃণমূল কংগ্রেসের এই ‘যত মত তত পথে’র নীতি সমর্থন করলেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক এবং বিজেপিরই একসময়ের প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত অটলবিহারী বাজপেয়ীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা সুধীন্দ্র কুলকার্নি।

কুলকার্নি এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, তাঁর মনে হয় বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতিই সঠিক।

“রাম মন্দির উদ্বোধনের দিনে মমতা সব ধর্মের মানুষকে সঙ্গী করে একটি মিছিল করেছেন। এটাই সব দলের করা উচিত। আমার মনে হয় এখানে কংগ্রেসের কিছু ভুল রয়েছে।” সেই ভুল হলো রাম মন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়া।

“তারা প্রথমে সঠিক কাজই করেছিলেন বিজেপির কর্মসূচিকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে ব্যাখ্যা করে। এর পরেও তাদের উচিত ছিল অনুষ্ঠানে যাওয়া, কারণ দেশের সার্বিক স্বার্থে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে এবারে একটা সমঝোতা হওয়া প্রয়োজন। সেটা না করে কংগ্রেস বিজেপিকে একচেটিয়া ভাবে রাম মন্দিরের কৃতিত্ব দিয়ে দিলো। এটা ভুল সিদ্ধান্ত,” বক্তব্য প্রবীণ রাজনীতি বিশ্লেষকের।

রাম মন্দিরকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহারের বিজেপির কর্মসূচি “আইনদ্বারা পরিচালিত রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক একটি অধ্যায়,” বলেও মনে করেন সুধীন্দ্র কুলকার্নি।

India's Congress party leader Rahul Gandhi (L) talks with party's president Mallikarjun Kharge during a protest in New Delhi on December 22, 2023, against the suspension of lawmakers belonging to an opposition grouping of 26 parties dubbed INDIA -- the In
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকারজুন খারগের (ডানে) সাথে রাহুল গান্ধী।

কংগ্রেসের অবস্থান

জাতীয় স্তরে এখনো বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস, তা সে যতই ভাঙাচোরা অবস্থায় থাকুক না কেন। রাম মন্দির নিয়ে এবং বিশেষ করে সংঘ পরিবারের রাম মন্দির কেন্দ্রিক প্রচার নিয়ে কি ভাবছে কংগ্রেস, এ প্রশ্নের উত্তরে কংগ্রেসের অন্যতম জাতীয় সম্পাদক এবং অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির সদস্য রঞ্জিত মুখার্জি বললেন, রাম মন্দির নিয়ে পাল্টা রাজনীতির কোনো পরিকল্পনা কংগ্রেসের নেই।

“আমাদের নেতৃত্ব আগেই বলেছেন রাম মন্দির উদ্বোধন রাজনৈতিক অনুষ্ঠান, তাই অংশ নেবো না। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে এতে আপত্তি থাকতে পারে না। তবে আমরা বৈচিত্র্যের জন্য লড়াইয়ের পক্ষে। বিজেপি চায় এক ভাষা, এক ধর্ম ইত্যাদি। আমরা এর বিরোধী,” রঞ্জিত মুখার্জি বলেন।

রাহুল গান্ধীর বর্তমান ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রায়’ও তাঁর সঙ্গেই রয়েছেন মুখার্জি। তিনি বললেন, বৈচিত্রের রাজনীতি বলতে তিনি কি বোঝাতে চাইছেন।

“ভারতে রামের পুজো বাধ্যতামূলক হতে পারে না। হিন্দুধর্ম একেশ্বরবাদী ধর্ম নয়। পূর্ব বা দক্ষিণ থেকে উত্তর ভারত পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন অংশে হিন্দু ধর্ম আলাদা। হিন্দু ধর্মের এই বৈচিত্র্যকে বরাবর কংগ্রেস মেনেছে তার আদর্শের ধারাবাহিকতায়,’’ তিনি বলেন।

‘’সেই কারণেই রাম মন্দির উদ্বোধনের দিনে (২২ জানুয়ারি) রাহুল গান্ধী আসামের মানুষের প্রধান আধ্যাত্মিক স্থান শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের মন্দিরে যেতে চেয়েছিলেন। তাঁকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল, ভারতের বৈচিত্র্যকে তুলে ধরা,” বলছিলেন মুখার্জী।

ন্যায়ের উপরে জোর

কিন্তু নির্বাচনের আগে প্রসাদ বিতরণ থেকে দেশের মানুষকে অযোধ্যায় নিয়ে গিয়ে এবং তাদের দিয়ে প্রচার করিয়ে সঙ্ঘ পরিবার হাওয়া তুলতে চাইছে। এর মোকাবেলা কিভাবে করবে কংগ্রেস? মুখার্জি যা বললেন তা অনেকটা তৃণমূল কংগ্রেসের উন্নয়নের রাজনীতির মতই শোনালো।

“কংগ্রেস নির্বাচনী এলাকা ধরে সেগুলিকে সংগঠিত করার কাজ চালিয়ে যাবে। মানুষের দৈনন্দিনের যে সমস্যা – যেমন চাকরি না পাওয়া, দারিদ্র, শিক্ষার সমস্যা বা বিদ্যুৎ না পাওয়া – এসবের উপরে জোর দিয়ে প্রচার করা হবে। এটা করতে গিয়ে ‘জাস্টিস’ বা ন্যায়ের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে,’’ তিনি বলেন।

‘’আমরা বলছি, মানুষ রোজ কী ধরনের অন্যায়ের মুখোমুখি হচ্ছেন – তা সে সামাজিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক যে ক্ষেত্রেই হোক না কেন। পদযাত্রার এটাই ফোকাস, ” বললেন মুখার্জি।

অর্থাৎ রাম মন্দিরকে কেন্দ্রে রেখে বিজেপির যে প্রচারণা তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে উন্নয়ন এবং সব ধর্মের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে চলার রাজনীতিই আপাতত রণকৌশল বিরোধীদের। নির্বাচন ঘোষণার পরে এই নীতিতে পরিবর্তন আসে কিনা সেটাই দেখার।

XS
SM
MD
LG