২৬ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা এক ভারতীয় মহিলার দুই সন্তান আগেই রয়েছে। গর্ভবতী হলেও তৃতীয় সন্তান নেওয়ার মতো মানসিক এবং আর্থিক অবস্থা তার নেই। সেই সঙ্গে রয়েছে সন্তান জন্মের পরের অবসাদ সহ নানা জটিল মানসিক ও শারীরিক সমস্যা। তাই গর্ভপাতের অনুমতি চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন মহিলা। প্রাথমিকভাবে সেই আবেদন মঞ্জুর করলেও যখন পরে জানা যায়, গর্ভস্থ ভ্রূণে প্রাণের স্পন্দন পাওয়া গেছে, তাই পরেই ভারতের সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করেছিল, "কোন আদালত আছে, যারা হৃদয়ের স্পন্দন শোনার পরেও তা থামিয়ে দিতে চায়!"
গত ৯ অক্টোবর মহিলার গর্ভপাতের আবেদনে সম্মতি দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। কিন্তু ১০ অক্টোবর সরকারের তরফে একটি লাস্ট মিনিট মেডিক্যাল রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়, যেখানে বলা হয়, গভর্স্থ ভ্রূণের মধ্যে প্রাণের স্পন্দন পাওয়া গেছে, এবং তার বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রবল। সেই রিপোর্ট দেখেই প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের গড়ে দেওয়া দুই বিচারপতির একটি বেঞ্চ মন্তব্য করে, '"কেন আমাদের আদেশের পরেই এমনটা জানা গেল? কেন আগেই এটা স্পষ্ট ছিল না? কোন আদালত প্রাণের সাড়া পাওয়ার পরেও শিশুর হৃদস্পন্দন বন্ধ করে দিতে চায়? আমরা তো নয়ই!" রিপোর্ট দেখে এ কথা বলেন বিচারপতি হিমা কোহলি।
সরকারপক্ষকে বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিভি নাগরত্ন প্রশ্ন করেন "কেন গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়ার পর এই অর্ডার নিয়ে আসা হল? আদালতের নির্দেশ পাল্টানোর অনেক উপায় আছে, কিন্তু এভাবে তা হয় না। এমন তো নয় যে আমরা আপনাদের কথা শুনিনি।"
বিচারপতি নাগরত্ন প্রশ্ন তোলেন, "যখন আদালতের একটি বেঞ্চ একটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, তখন কোনও আবেদন ছাড়াই আপনি কীভাবে তিন বিচারপতির বেঞ্চের সামনে আন্তঃআদালতে আপিল করতে পারেন? আজ সরকার যদি এমন কাজ করতে শুরু করে, তাহলে কাল বেসরকারি সংস্থাগুলিও এমন কাজ করবে।"
আদালত আরও জানিয়েছিল, "আমরা কোনও ভুল বোঝাবুঝি চাই না। এখানে মূল্যবান জীবন নিয়ে কথা হচ্ছে, তাই আমরা কোনও ঝুঁকি নিতে চাই না।" এছাড়া আবদেনকারীকে নতুন রিপোর্টের ভিত্তিতে আদালতে একটি হলফনামা জমা দেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়। তার স্বামীর সঙ্গেও এ ব্যাপারে আলাদা করে কথা বলেছে শীর্ষ আদালত।
আবেদনকারী মহিলা আদালতে জানিয়েছিলেন, তিনি আগের সন্তান জন্মের পর থেকেই পোস্ট পার্টাম সাইকোসিস নামে এক ধরনের মানসিক অসুখে আক্রান্ত। তাই আবার সন্তান নেওয়ার মতো মানসিক কিংবা আর্থিক অবস্থা নেই তার। গর্ভাবস্থা ২৪ সপ্তাহ পেরিয়ে যাওয়ার পর দিল্লি এইমসে গর্ভপাত করানোর অনুমতি চেয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হন তিনি। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিচারপতি বিভি নাগরত্নার বেঞ্চ সেই আবেদন নাকচ করে দিয়েছে। তারা জানিয়েছেন, এই গর্ভধারণের ক্ষেত্রে মহিলার প্রাণহানির কোনও আশঙ্কা নেই। এছাড়া মেডিক্যাল টেস্টে ভ্রূণের কোনও রকম অস্বাভাবিকতাও দেখা যায়নি।
সমস্ত রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা সেই মহিলাকে শেষমেশ গর্ভপাতের অনুমতি দিল না সুপ্রিম কোর্ট। আদালত সাফ জানিয়ে দিল, শিশুর হৃদস্পন্দন বন্ধ করে দেওয়ার অনুমতি দিতে পারবেন না তারা, যেখানে হবু মা কিংবা গর্ভস্থ ভ্রূণ, কারওরই কোনও শারীরিক জটিলতা কিংবা প্রাণহানির আশঙ্কা নেই। সেই সঙ্গে আদালত একথাও জানিয়েছে, যেহেতু মহিলা সন্তানকে রাখতে ইচ্ছুক নন, তাই শিশুটির জন্মের পর রাষ্ট্রকেই তার দায়িত্ব নিতে হবে।
সোমবার ১৬ অক্টোবর এই রায় দিয়েছেন বিচারপতিরা। তাঁরা আরও জানিয়েছেন, মহিলা যেহেতু সন্তানকে রাখতে চান না, তাই তাঁর বাবা-মা সিদ্ধান্ত নেবেন, শিশুটির জন্মের পর তাকে তারা দত্তক নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবেন কিনা। তবে এরপরেও মহিলার চিকিৎসা হবে এইমস-এ। তার যাবতীয় খরচ বহন করবে রাষ্ট্র।
মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি (এমটিপি) অ্যাক্টের অধীনে বিবাহিত মহিলাদের জন্য গর্ভপাতের ঊর্ধ্বসীমা ২৪ সপ্তাহ। তারপর গর্ভপাত করাতে চাইলে অবশ্যই আদালতের অনুমোদন প্রয়োজন। তবে ধর্ষণজনিত কারণে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে এবং অন্যান্য কারণে শারীরিকভাবে দুর্বল মহিলা, প্রতিবন্ধী মহিলা এবং নাবালিকাদের জন্য এই সীমায় ছাড় রয়েছে।