অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতের সিকিমে লোনক হ্রদ ভেঙে পড়া নিয়ে ছিল বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা


মেঘভাঙা বৃষ্টির কারণে আচমকা জলস্তর বেড়ে গিয়েছিল মাঙ্গান জেলার সাউথ লোনক লেকের।
মেঘভাঙা বৃষ্টির কারণে আচমকা জলস্তর বেড়ে গিয়েছিল মাঙ্গান জেলার সাউথ লোনক লেকের।
'মেঘভাঙা বৃষ্টি'র সঙ্গে ইদানিংকালে ভারতের নাগরিকদের পরিচয় ঘটেছে, সাম্প্রতিক সময়ের বেশ কিছু প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে। তবে একই কারণে আস্ত হ্রদও যে ভেঙে পড়তে পারে, এমন ঘটনার বিষয়ে সম্প্রতি মানুষ জানতে পেরেছেন লোনক হ্রদের বিপর্যয়ের পরে। ভারতের সিকিমের সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের পিছনে রয়েছে এই লোনক হ্রদ ভেঙে যাওয়া। ক্লাউড বার্স্ট, অর্থাৎ মেঘভাঙা বৃষ্টির কারণেই আচমকা জলস্তর বেড়ে গিয়েছিল মাঙ্গান জেলার সাউথ লোনক লেকের। সেই বিপুল জলরাশির চাপ সামলাতে পারেনি এই হ্রদ। তাতেই হড়পা বান নেমে আসে সিকিমে, যা ইতিমধ্যেই দেশের বাকি অংশ থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্যটিকে।

এই লোনক লেক নিয়ে সতর্কবার্তা ছিল আগে থেকেই। কয়েক বছর আগেই ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউন্টেন ডেভেলপমেন্ট (ICIMOD) স্যাটেলাইট ডেটার মাধ্যমে সারা সিকিম জুড়ে ৩২০টি হিমবাহ হ্রদের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেছিল।
এগুলির মধ্যে ১৪টি হ্রদকে 'অত্যন্ত বিপজনক' আখ্যা দিয়েছিল সংস্থাটি। তার মধ্যে দক্ষিণ লোনাক লেক একটি। এই হ্রদে হিমবাহের বিস্ফোরণের ফলে যে বিরাট বিপদ নেমে আসতে পারে, সেই সাবধানবাণীও ছিল।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, হিমবাহ হ্রদ হল এমন হ্রদ, যেগুলি জল নয়, বরং পুরোটাই তৈরি হয় হিমবাহ দিয়ে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি বা চাপের কারণে যদি একবার এই হিমবাহ গলতে শুরু করে, তাহলে সেই হ্রদের জল বিপজ্জনকভাবে বৃদ্ধি পায়। সেই চাপ সামলাতে পারে না হ্রদ। তাতেই হড়পা বান নামে। এই ঘটনার পোশাকি নাম 'গ্লেসিয়াল লেক আউটবার্স্ট ফ্লাড'।

সেই জলের চাপে লেকের সঙ্গে সংযুক্ত নদী বা জলাশয়ের জলস্তর বেড়ে যায়। ২০২১ সালে উত্তরাখণ্ডের চামোলিতে যে বিধ্বংসী বন্যা হয়েছিল, তার পিছনেও দায়ী এই হিমবাহ হ্রদ ফেটে যাওয়া, এমনটাই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এবারের সিকিম বিপর্যয়ে এই একই ভাবে বেড়ে গিয়েছিল তিস্তার জলস্তর।

দক্ষিণ লোনক লেক বেশি বিপজ্জনক কেন সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এই লেক খুব দ্রুত আয়তনে বৃদ্ধি পাচ্ছিল। হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদ হলেও এতে আগে জলস্তর খুব বেশি ছিল না। কিন্তু গত পাঁচ দশকে এর গভীরতা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫ হাজার মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই হ্রদের জলের গভীরতা বর্তমানে প্রায় ১০ তলা বাড়ির সমান হয়ে গিয়েছিল। লোনাক হ্রদের দৈর্ঘ্য আড়াই কিলোমিটার, প্রস্থ প্রায় ছ'শ মিটার।
ফলে কখনও যদি মেঘভাঙা বৃষ্টি নামে, তাহলে বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে আগেই সতর্ক করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বের বিশেষজ্ঞরা লোনক হিমবাহ নিয়ে সতর্ক করেছিলেন আগেই।

শেষমেশ সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। মেঘ ভাঙতেই ভাঙল লোনক।
XS
SM
MD
LG